মোটরসাইকেল চেইনের যত্নঃ ১০টি ক্লিনিং, লুব্রিকেশন এবং অ্যাডজাস্টমেন্ট টিপস

মোটরসাইকেলের চেইন আসলে শুধু একটা যন্ত্রাংশ না—এটা পুরো বাইকের প্রাণপ্রবাহ বলা যায়। ইঞ্জিনের শক্তি পেছনের চাকা পর্যন্ত ঠিকভাবে পৌঁছানোর পুরো দায়িত্বই এর উপর। আর তাই মোটরসাইকেল চেইনের যত্ন নেওয়া শুধু বাইকের মসৃণ চলাচলের জন্য নয়, বরং দীর্ঘদিন ভালো সার্ভিস পাওয়ার জন্য জরুরি।
একটা ভালোভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা চেইন শুধু পাওয়ার ডেলিভারিতেই উন্নতি আনে না, বরং আপনার রাইডিং নিরাপত্তাও অনেক বাড়িয়ে দেয়। আর যদি এটাকে অবহেলা করেন, তাহলে খুব দ্রুতই পড়তে হতে পারে ব্যয়বহুল মেরামতের মুখে, এমনকি চলার মাঝেই বাইক আটকে যেতে পারে।
এই লেখায় আমরা তুলে ধরেছি এমন ১০টি দরকারি টিপস—কীভাবে মোটরসাইকেল চেইন পরিষ্কার করবেন, ঠিকভাবে লুব্রিকেশন করবেন এবং প্রয়োজনমতো অ্যাডজাস্ট করবেন—যা আপনার বাইককে রাখবে ঝামেলামুক্ত।
১. নিয়মিত দেখভাল ও পরিষ্কার করুন
চেইনের স্বাস্থ্য কেমন, সেটা মাঝে মাঝে চোখ বুলিয়ে নিন। প্রতি ৫০০–৭০০ কিমি পরপর বা বৃষ্টি/কাদামাটিতে চালানোর পর পরিষ্কার করুন। জং, ময়লা বা ঢিলাভাব দেখলে দ্রুত ব্যবস্থা নিন—না হলে পরে পস্তাতে হতে পারে।
২. মানসম্পন্ন ক্লিনার ব্যবহার করুন
চেইন পরিষ্কার করতে মোটরসাইকেলের জন্য নির্দিষ্ট ক্লিনার ব্যবহার করুন। এটা পুরনো গ্রিজ ও ধুলোবালি সরায় কিন্তু রাবার সিলগুলোর কোনো ক্ষতি করে না। পেট্রোল বা ডিজেল দিয়ে ধোয়ার পুরনো অভ্যাস বাদ দিন—এগুলো চেইনের ও-রিং নষ্ট করে দেয়।
৩. ধীরে-সুস্থে ব্রাশ করুন, শুকিয়ে মুছুন
একটা মাঝারি ঘনত্বের ব্রাশ ব্যবহার করে আলতোভাবে ময়লা তুলে দিন। তারপর শুকনো কাপড়ে ভালোভাবে মুছে ফেলুন যাতে কোনো পানি বা ক্লিনারের রেশ না থাকে। ভেজা থাকলে মরিচা ধরতে সময় লাগে না।
৪. পরিষ্কারের পরেই লুব্রিকেট করুন
একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়: লুব্রিকেশন দিতে হবে পরিষ্কার ও শুকনো চেইনে। এটাই মূল শর্ত। একটা ভালো মানের চেইন লুব্রিকেন্ট ব্যবহার করুন және চেইনের ভেতরের দিকে প্রয়োগ করুন, পিছনের চাকা ঘোরাতে ঘোরাতে। এইভাবে নিশ্চিত হবে সম্পূর্ণ কভারেজ ও মসৃণ চলাচল—যা আদর্শ চেইন লুব্রিকেশন।
৫. বেশি না, ঠিকঠাক লুব্রিকেট করুন
চেইনে অতিরিক্ত তেল দেওয়া মানেই ধুলা-ময়লা জমে আঠালো স্তর তৈরি হওয়া। যা চেইনের আয়ু কমিয়ে দেয়। পাতলা, সমানভাবে ছড়ানো লেয়ারে স্প্রে করলেই যথেষ্ট।
৬. চেইনের টেনশন ঠিক রাখুন
চেইন যদি খুব টাইট হয়, তাহলে স্প্রোকেট আর বিয়ারিংয়ে অপ্রয়োজনীয় চাপ পড়ে। আবার বেশি ঢিলা হলে চেইন পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বাইক অনুযায়ী সাধারণত ২৫–৩৫ মিমি ঢিলাভাব থাকাই ভালো। সঠিক মোটরসাইকেল চেইন অ্যাডজাস্টমেন্ট করলে রাইডিং হবে আরও স্মুথ।
৭. ক্ষয় ও মরিচা খেয়াল করুন
চেইনের কোনো অংশ শক্ত হয়ে গেছে কি না, মরিচা ধরেছে কি না বা লিঙ্ক ভেঙেছে কি না—এসব নিয়মিত দেখে নিন। বেশি ক্ষয় হলে দেরি না করে চেইন বদলে ফেলুন। পুরনো স্প্রোকেটের সঙ্গে নতুন চেইন দিলে সমস্যা হতে পারে, তাই একসঙ্গে বদলানোই ভালো।
৮. চাকা ও স্প্রোকেট সোজা রাখুন
রিয়ার হুইল আর স্প্রোকেট যদি ঠিকমতো এলাইন না থাকে, তাহলে চেইনে অসম ঘর্ষণ হয়, যা দ্রুত ক্ষয় ডেকে আনে। এটা হ্যান্ডলিংয়েও প্রভাব ফেলে। তাই নিয়মিত চেক করুন।
৯. ধীর-স্থিরভাবে চালান
জোরে এক্সিলারেট বা হঠাৎ গিয়ার চেঞ্জ করলেই চেইনে ধাক্কা লাগে। ফলে আয়ু কমে যায়। একটু ধীরে, স্মুথভাবে চালালে শুধু চেইন না—আপনার পুরো রাইডটাই আরামদায়ক হয়।
১০. রুটিন তৈরি করুন
এইসব বিষয় শুধু একবার জানলেই চলবে না, একটা রুটিন গড়ে তুলতে হবে। প্রতি ৫০০–৮০০ কিমি পরপর কিংবা বৃষ্টি-ধুলোতে চালানোর পর চেইন পরিষ্কার ও লুব্রিকেট করুন।
পরিশেষ
চেইনের যত্নটা আলাদা করে মনে রাখার মতো কিছু মনে না হলেও, এটা একটা বড় ফারাক তৈরি করে। নিয়মিত মোটরসাইকেল চেইনের যত্ন নিলে পারফরম্যান্স ভালো থাকে, মাইলেজ বাঁচে আর বাইকের আয়ুও বাড়ে। এই ১০টি টিপস মাথায় রেখে চললে আপনার বাইক ঠিক যেমন নতুন অবস্থায় চলত—তেমনই মসৃণভাবে চলবে বহুদিন।
সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
১. মোটরসাইকেলের চেইন কতদিন পরপর পরিষ্কার করা উচিত?
সাধারণত প্রতি ৫০০–৭০০ কিলোমিটার পর চেইন পরিষ্কার করা ভালো। যদি ধুলাবালি বা বৃষ্টির মধ্যে চালানো হয়, তাহলে আরও ঘন ঘন পরিষ্কার করা উচিত।
২. চেইন পরিষ্কারের জন্য কী ধরণের ক্লিনার সবচেয়ে ভালো?
মোটরবাইকের চেইনের জন্য নির্দিষ্ট ‘চেইন ক্লিনার’ ব্যবহার করা সবচেয়ে ভালো। কেরোসিনও ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে গ্যাসোলিন বা ডিজেল ব্যবহার না করাই উত্তম।
৩. চেইনে লুব্রিকেশন কতদিন পরপর করা উচিত?
প্রতি ৫০০–৬০০ কিলোমিটার পর অথবা বৃষ্টির পর চেইনে লুব্রিকেশন করা উচিত।
৪. চেইন বেশি টাইট থাকলে কী হয়?
চেইন অতিরিক্ত টাইট থাকলে স্প্রোকেট, বিয়ারিং এবং সাসপেনশন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, পাশাপাশি রাইডিং কমফোর্টও নষ্ট হয়।
৫. চেইন অ্যাডজাস্টমেন্ট করার সময় কী বিষয়ে সতর্ক থাকা দরকার?
অ্যাডজাস্ট করার সময় দুই পাশ সমানভাবে টানুন, যাতে চেইন সোজা থাকে এবং স্প্রোকেটে ঠিকমতো বসে।




































