বাংলাদেশে শীতের জন্য আপনার গাড়িকে কীভাবে প্রস্তুত করবেন

গাছের পাতার রঙ বদলে যাওয়া ও পরিবেশে শীতল হাওয়ার ছোয়া দেখে আমরা শীতের আগমন বুঝতে পারি। আপনি যদি একজন গাড়ির মালিক হয়ে থাকেন তবে আপনাকে অবশ্যই শীতের শুরুতে আপনার গাড়িকে ঠান্ডা পরিবেশের জন্য প্রস্তুত করতে হবে। প্রস্তুত করা বলতে মূলত বোঝানো হচ্ছে, আপনার গাড়ি যেন শীতের ঠান্ডা পরিবেশে স্মুথ রাইডিং এক্সপেরিয়েন্স দিতে পারে তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ। আপনার এবং আপনার প্যাসেঞ্জারদের নিরাপত্তার জন্য এটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। চলুন তবে জেনে নেয়া যাক কীভাবে আপনার গাড়িকে শীতের জন্য প্রস্তুত করবেন।
১. আপনার গাড়ির অ্যান্টি-ফ্রিজ লেভেলগুলো চেক করুন
আপনার গাড়ির কুল্যান্ট লেভেল চেক করুন এবং নিশ্চিত করুন যে তা সঠিক ঘনত্বে আছে। কুল্যান্ট কম তাপমাত্রায়ও গাড়ির ইঞ্জিনকে সঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে। গাড়ির কুল্যান্ট লেভেল সবচেয়ে কমন অনুপাত হচ্ছে ৫০% অ্যান্টি-ফ্রিজ ও ৫০% পানি। আপনি একটি অটোমোবিল স্টোর বা গ্যারেজে গেলে খুব সহজেই অ্যান্টি-ফ্রিজ টেস্টারের মাধ্যমে তা চেক করে দেখতে পারবেন।
২. ব্যাটারি চেক করুন
নিম্ন তাপমাত্রা গাড়ির ব্যাটারির যথাযথ কার্যকারিতার জন্য প্রয়োজনীয় ক্যামিকেল রিঅ্যাকশনকে ধীরগতির করে দেয়। তাই আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে যে শীতের মাসগুলো কাটানোর জন্য ব্যাটারিতে যথেষ্ট পাওয়ার রয়েছে। আপনি তা খুব সহজেই করতে পারবেন। আপনি চাইলে ব্যাটারির ভোল্টমিটার টেস্ট করতে পারেন অথবা একটি অটোশপে গিয়ে ব্যাটারি টেস্ট করে দেখতে পারেন। এমনিতেও প্রতি ২-৪ বছর পর পর গাড়ির ব্যাটারি পরিবর্তন করা উচিত।
৩. টায়ার প্রেশার চেক করুন
ঠান্ডা আবহাওয়া গাড়ির টায়ারের প্রেশার কমিয়ে দেয়, যা রোডের ট্র্যাকশনকে হ্রাস করে। তাই আপনার গাড়ির টায়ার প্রস্তুতকারকদের বলে দেয়া লেভেলের প্রেশারে আছে কি না তা আগেই নিশ্চিত করুন। আর যদি টায়ারের ট্রেড ডেপথ ৩.১৮ মিলিমিটারের কম হয়, তাহলে টায়ার পরিবর্তন করে ফেলুন। আর যদি কিছু অর্থ খরচ করতে রাজি থাকেন, তাহলে শীতকালীন টায়ার লাগিয়ে নিতে পারেন।
৪. ওয়াইপার ব্লেডগুলো চেক করুন
শীতের সময়ে পরিষ্কার দেখতে পাওয়ার জন্য ওয়াইপার ব্লেড বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি এমন এরিয়ায় থাকেন যেখানে তাপমাত্রা অনেক কমে যায়, তবে অবশ্যই শীতের শুরুতে গাড়ির ওয়াইপার ব্লেডগুলো ঠিক আছে কি না দেখে নিন। ঠিক না থাকলে তা মেরামত বা পরিবর্তন করে নিন।
৫. একটি ইমার্জেন্সি কিট রাখুন
শীতের সময়ে আপনার গাড়িতে অবশ্যই শীতের জন্য স্পেসিফিক ইমার্জেন্সি কিট রাখা উচিত। এই কিটের ভেতর থাকতে পারে, একটি কম্বল, ফ্ল্যাশলাইট, খাবার পানি ও অপচনশীল খাদ্য। এর পাশাপাশি গাড়িতে সবসময় একটি বেসিক ফার্স্ট-এইড কিট’ও রাখা উচিত। কখনো যদি শীতের রাতে আপনাকে গাড়িতেই থেকে যেতে হয়, তবে এই জিনিসগুলো জীবন রক্ষাকারী হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে।
৬. হিটার ও ডিফ্রস্টার চেক করুন
হিটার আপনার গাড়ির ইন্টেরিয়রকে গরম ও ডিফ্রস্টার আপনার উইন্ডশিল্ড ও জানালাকে কোয়াশামুক্ত রাখতে সাহায্য করে। তাই শীতের শুরুতেই দেখে নিন যে এগুলো ঠিকভাবে কাজ করছে কি না। যদি না করে, তাহলে মেরামত বা পরিবর্তন করার ব্যবস্থা করুন।
৭. ব্রেক চেক করুন
আপনার গাড়ির ব্রেক ঠিকভাবে কাজ করছে কি না তা শীতের শুরতেই দেখে নেয়া জরুরি। তাই ব্রেক প্যাড ও রোটর ঠিক আছে কি না তা দেখে নিন। এছাড়াও ব্রেক ফ্লুইড সঠিক মাত্রায় আছে কি না তাও দেখে নিন।
পরিসংহার
এই টিপসগুলো অনুসরণ করলে আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন যে আপনার গাড়ির শীতকালের জন্য প্রস্তুত আছে কি না। এছাড়াও এই ছোট ছোট কাজগুলো করে ফেললে আপনি ভবিষ্যতের বড় খরচের থেকেও রক্ষা পেতে পারেন।
সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
১. আমার গাড়িকে শীতকালের জন্য প্রস্তুত করা কেনো জরুরি?
শীতকাল আপনার গাড়ির কুল্যান্ট পারফরম্যান্স, ব্যাটারি ক্যাপাসিটি ও টায়ার প্রেশারকে প্রভাবিত করতে পারে। তাই আপনার গাড়িকে শীতকালের জন্য প্রস্তুত করা জরুরি।
২. আমার গাড়ির অ্যান্টি-ফ্রিজ লেভেল কতোদিন পর পর চেক করা উচিত?
আপনার গাড়ির অ্যান্টি-ফ্রিজ লেভেল শীতের শুরুতে একবার এবং এর পর থেকে প্রতি মাসে অন্তত একবার করে চেক করা উচিত।
৩. বাংলাদেশে কি শীতকালের জন্য বিশেষ টায়ার ব্যবহার করা উচিত?
বাংলাদেশে শীতকালের জন্য বিশেষ টায়ার ব্যবহার করা অপশনাল, কারণ এখানে বরফ পরে না। তবে আপনি সাবধানতা অবলম্বন করতে চাইলে অবশ্যই শীতকালের জন্য টায়ার পরিবর্তন করতে পারেন।
৪. শীতের শুরুতে আমার গাড়ির ব্যাটারি কীভাবে চেক করবো?
আপনি চাইলে ব্যাটারির ভোল্টমিটার টেস্ট করতে পারেন, অথবা একটি অটোশপে গিয়ে গাড়ির ব্যাটারি টেস্ট করিয়ে দেখতে পারেন।
৫. শীতকালের জন্য ইমার্জেন্সি কিটে কী কী রাখা উচিত?
শীতকালের জন্য ইমার্জেন্সি কিটে একটি কম্বল, ফ্ল্যাশলাইট, খাবার পানি ও অপচনশীল খাবার রাখা উচিত। একইসাথে, একটি বেসিক ফার্স্ট-এইড কিটও রাখা উচিত।







































