ইঞ্জিনের আয়ু বাড়াতে নিয়মিত অয়েল পরিবর্তন কেন গুরুত্বপূর্ণ?

ইঞ্জিনের আয়ু বাড়ানোর সবচেয়ে সহজ কিন্তু নিশ্চিত উপায় হলো নিয়মিত ইঞ্জিন অয়েল বদলানো। আমাদের দেশের ভারী জ্যাম, দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা, ধুলোবালি আর বারবার ব্রেক-স্টার্ট এসবই ইঞ্জিনের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করে। নির্দিষ্ট সময় পর অয়েল বদলালে গাড়ি আরও মসৃণ চলে, দ্রুত গরম হয় না এবং যন্ত্রাংশগুলো ভালো থাকে। নিয়মিত সার্ভিস করা গাড়িতে বড় কোনো ত্রুটি দেখা দেয় কম, গাড়ি মেরামত এর খরচও বাঁচে, আর দীর্ঘ বছর ধরে নির্ভরযোগ্য পারফরম্যান্স পাওয়া যায়।
ইঞ্জিনের আয়ু বাড়াতে তেল পরিবর্তনের টিপস
ইঞ্জিনের ভেতরের অংশ পরিষ্কার রাখা
ধুলো, ধোঁয়া আর কার্বনের কারণে পুরোনো অয়েলের ভেতর কাদা আর জমা ময়লা তৈরি হয়। নতুন অয়েল সেই জমাট অংশ তৈরি হতে দেয় না, ভেতরের অংশগুলো পরিষ্কার রাখে এবং ইঞ্জিনের ক্ষতি কমায়।
চলন্ত অংশগুলোর ঘর্ষণ কমায়
অয়েল ধাতব অংশগুলোর মধ্যে এক ধরনের সুরক্ষা স্তর তৈরি করে। পুরোনো বা নষ্ট অয়েল ঠিকমতো লুব্রিকেট করতে পারে না, ফলে ঘর্ষণ বাড়ে এবং সময়ের সাথে ইঞ্জিন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ওভারহিটিং প্রতিরোধ করে
গরম আবহাওয়া আর জ্যামে দাঁড়িয়ে থাকা ইঞ্জিন দ্রুত গরম করে ফেলে। নতুন অয়েল তাপ শোষণে বেশি কার্যকর, ফলে ইঞ্জিনের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
ফুয়েল সাশ্রয় করে
যে ইঞ্জিনে ঘর্ষণ কম, সেটি কম পরিশ্রম করে এবং কম জ্বালানি খরচ করে। পরিষ্কার অয়েল গাড়িকে শহরের রাস্তায়ও ভালো মাইলেজ দিতে সাহায্য করে।
ইঞ্জিনকে সুরক্ষা দেয়
ঢাকার মতো শহরে গাড়ি বেশির ভাগ সময়ই জ্যামে দাঁড়িয়ে থাকে। নোংরা অয়েল ঘন হয়ে গিয়ে ইঞ্জিনকে সঠিক সুরক্ষা দিতে পারে না। সময়মতো অয়েল বদলালে ইঞ্জিন আইডল অবস্থাতেও নিরাপদ থাকে।
বড় ধরনের ক্ষতি থেকে বাঁচায়
অয়েল বদলানো অবহেলা করলে পিস্টন, রিং বা বিয়ারিংয়ের মতো অংশ নষ্ট হতে পারে যার মেরামত খুব ব্যয়বহুল। নিয়মিত অয়েল সার্ভিস এসব সমস্যা অনেকাংশে রোধ করে।
ইঞ্জিনের পারফরম্যান্স বাড়ায়
নতুন অয়েল থ্রটল রেসপন্স ভালো করে, অ্যাকসেলারেশন মসৃণ হয় এবং ইঞ্জিনের শব্দ কমে যায়। হাইওয়ে ও শহর-দুই জায়গাতেই পারফরম্যান্স স্থিতিশীল থাকে।
ইঞ্জিনের মোট আয়ু দীর্ঘ করে
পরিষ্কার অয়েল ক্ষয়–ক্ষতি কমায়, ফলে ইঞ্জিন বহু বছর ধরে শক্তি হারানো ছাড়া ভালো থাকে। দীর্ঘমেয়াদি ইঞ্জিন স্বাস্থ্যের মূল ভিত্তি এখানেই।
গাড়ির রিসেল ভ্যালু বাড়ায়
ক্রেতারা সবসময় ভালোভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা গাড়ির খোঁজ করেন। নিয়মিত অয়েল পরিবর্তনের রেকর্ড থাকলে গাড়ির প্রতি বিশ্বাস বাড়ে, দামও বেশি পাওয়া যায়।
ইঞ্জিনের আয়ু বাড়াতে সবচেয়ে কম খরচে সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো নিয়মিত অয়েল পরিবর্তন। একটি নির্দিষ্ট মেইনটেন্যান্স রুটিন, ভালো মানের ইঞ্জিন অয়েল এবং সময়মতো সার্ভিস, এসবই আপনার গাড়িকে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জিং রাস্তায় নির্ভরযোগ্য রাখবে।
সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
১. শহরে চালালে কতদিন পর অয়েল বদলানো উচিত?
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ৫,০০০-৭,০০০ কিলোমিটার চালানোর পর গাড়ির তেল পরিবর্তন করা প্রয়োজন। তবে বেশি সময় ধরে জ্যাম বা আইডল অবস্থায় থাকলে আরও আগে বদলানো ভালো।
২. কোন অয়েল ইঞ্জিনের জন্য সবচেয়ে ভালো?
বর্তমানের আধুনিক ইঞ্জিনে সিন্থেটিক অয়েল সবচেয়ে ভালো সুরক্ষা দেয় এবং ইঞ্জিনের আয়ু বাড়ায়।
৩. অয়েল পরিবর্তন করতে দেরি করলে কি ইঞ্জিনের ক্ষতি হয়?
হ্যাঁ। এক বছর বা তার বেশি সময় দেরি করলে তেলের ভেতর কাদা জমে যায়, ফলে ঘর্ষণ বাড়ে এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে না এবং ইঞ্জিনের ক্ষয় দ্রুত বাড়তে থাকে।
৪. নতুন অয়েল কি ফুয়েল সাশ্রয় করে?
হ্যাঁ। পরিষ্কার ও কম ঘর্ষণযুক্ত অয়েল ইঞ্জিনের চাপ কমায়, ফলে গাড়ি কম ফুয়েল ব্যবহার করে।
৫. গাড়ির জন্য অয়েলের মান কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
উচ্চমানের অয়েল লুব্রিকেশন ভালো রাখে, ইঞ্জিনের অংশগুলো পরিষ্কার রাখে এবং দীর্ঘ সময় জ্যামে দাঁড়িয়ে থাকলেও ইঞ্জিনকে সুরক্ষা দেয়।







































