স্মার্টলি গাড়ি কেনার চেকলিস্টঃ পেমেন্টের আগে ১০টি বিষয় বিবেচনা করুন

গাড়ি কেনা একটি রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা, তবে সঠিক প্রস্তুতি ছাড়া এটি বিভ্রান্তিকর হয়ে উঠতে পারে। একটি গাড়ি কেনার চেকলিস্ট আপনাকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করতে পারে, যাতে আপনি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো এড়িয়ে না যান। ইঞ্জিনের অবস্থা থেকে শুরু করে কাগজপত্র যাচাই পর্যন্ত, গাড়ি কেনার আগে কী কী পরীক্ষা করতে হবে তা জানা আপনাকে পরবর্তীতে ব্যয়বহুল পরিস্থিতি থেকে বাঁচাতে পারে।
এই নির্দেশিকাটি একটি প্র্যাকটিক্যাল গাড়ি পরিদর্শন চেকলিস্ট অফার করে, যেখানে গাড়ি কেনার আগে যাচাই করার ১০টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। নতুন কিংবা ব্যবহৃত, যে কোনো গাড়ি কেনার সময় এই গাড়ি কেনার টিপসগুলো আপনাকে সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত নিতে, দর কষাকষিতে আত্মবিশ্বাসী হতে এবং মানসিক শান্তির সাথে গাড়ি চালানোয় সাহায্য করবে।
পেমেন্টের আগে এই ১০টি বিষয় বিবেচনা করুন
১. বাহ্যিক অবস্থা
গাড়ির বাইরের অংশে ডেন্ট বা দাগ, স্ক্র্যাচ, রঙের সামঞ্জস্যতা এবং জং আছে কিনা পরীক্ষা করুন এবং সব প্যানেল ঠিক কিনা দেখুন। লাইট, মিরর, জানালা এবং টায়ারের ক্ষতি বা ত্রুটি যাচাই করুন।
২. ভেতরের অবস্থা
সিট, আসবাবপত্র এবং ড্যাশবোর্ডে কোন স্ক্র্যাচ, দাগ বা ত্রুটি আছে কিনা তা পরীক্ষা করুন। সব ইলেক্ট্রিক্যাল ফিচার, এয়ার কন্ডিশনিং এবং কন্ট্রোল ঠিকভাবে কাজ করছে কিনা তা দেখুন এবং স্টোরেজ কম্পার্টমেন্ট, মিরর এবং লাইটিং ঠিক আছে কিনা যাচাই করুন।
৩. ইঞ্জিন ও ফ্লুইড
ইঞ্জিনে অস্বাভাবিক শব্দ, লিক বা ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন আছে কিনা তা দেখুন, যাতে এটি মসৃণ এবং দক্ষতার সাথে চলছে। সঠিক লেভেল, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং কোনও দূষণ আছে কিনা তা নিশ্চিত করতে তেল, কুল্যান্ট, ব্রেক এবং ট্রান্সমিশন, পরীক্ষা করুন।
৪. ব্রেক ও সাসপেনশন
ব্রেকগুলো মসৃণভাবে কাজ করছে কিনা, প্যাডেল রেসপন্স ঠিক আছে কিনা এবং অস্বাভাবিক শব্দ হচ্ছে কিনা পরীক্ষা করুন। সাসপেনশন স্থিতিশীল আছে কিনা তা নিশ্চিত হোন।
৫. টায়ার এবং চাকা
ব্যবহৃত গাড়ির টায়ারগুলোর সঠিক ট্রেড গভীরতা, এবং সঠিক চাপ রয়েছে কিনা পরীক্ষা করুন যাতে নিরাপত্তা এবং পারফরম্যান্স নিশ্চিত হয়। ভবিষ্যতে হ্যান্ডলিং সমস্যা এড়াতে এবং একটি মসৃণ যাত্রা বজায় রাখতে চাকার ক্ষতি, অ্যালাইনমেন্ট এবং মজবুত ফিটিং পরীক্ষা করুন।
৬. গাড়ির নিচের অংশ
গাড়ির আন্ডারকারেজে মরিচা, তেলের লিক, অথবা ফ্রেমের ক্ষতি আছে কিনা তা পরীক্ষা করুন, বিশেষ করে ব্যবহৃত গাড়িতে। নতুন গাড়ির কাঠামোগত স্থায়িত্ব যাচাই করুন। এক্সহস্ট সিস্টেম এবং প্রোটেক্টিভ শিল্ড গুলোও পরীক্ষা করুন।
৭. লাইট ও ইলেকট্রিক সিস্টেম
সব হেডলাইট, ব্রেক লাইট, ইন্ডিকেটর এবং ইন্টিরিয়র লাইট সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা তা পরীক্ষা করুন। পাওয়ার উইন্ডো, ইনফোটেইনমেন্ট এবং ড্যাশবোর্ড ইন্ডিকেটরের মতো বৈদ্যুতিক সিস্টেমগুলোও পরীক্ষা করুন।
৮. মাইলেজ ও সার্ভিসিং রেকর্ড
ব্যবহৃত গাড়ির ক্ষেত্রে, ওডোমিটারের মাইলেজ সঠিক কিনা এবং গাড়িটি নিয়মিত সার্ভিসিং করা হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখুন। গাড়ির মাইলেজ পরীক্ষা করে দেখুন যাতে এটি গাড়ির ব্যবহারের রেকর্ডের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। নিয়মিত সার্ভিসিং নিশ্চিত করতে এবং কেনার আগে সম্ভাব্য সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে রক্ষণাবেক্ষণের রেকর্ড মনোযোগ দিয়ে দেখুন।
৯. টেস্ট ড্রাইভ
চালিয়ে দেখে নিন গাড়ির স্টিয়ারিং, এক্সিলারেশন, ব্রেক ও সাসপেনশন স্মুথ কাজ করছে কিনা। কেনার আগে আরাম, স্থিতিশীলতা এবং সামগ্রিক ড্রাইভিং অভিজ্ঞতা মূল্যায়ন করুন।
১০. ডকুমেন্ট যাচাই
গাড়ির সব প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস, যেমন রেজিস্ট্রেশন, ইন্স্যুরেন্স, ওয়ারেন্টি পেপার এবং সার্ভিস রেকর্ড সঠিক ও সম্পূর্ণ আছে কিনা যাচাই করুন। ব্যবহৃত গাড়ির ক্ষেত্রে, ভেহিক্যাল আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (VIN) নথির সঙ্গে মিলে কিনা নিশ্চিত করুন, যাতে মালিকানা হস্তান্তর নির্বিঘ্ন হয়।
পরিশেষ
গাড়ি কেনার চেকলিস্ট অনুসরণ করলে, আপনি কেনার আগে আরও আত্মবিশ্বাসী ও সচেতন সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। ইঞ্জিন পারফরম্যান্স থেকে শুরু করে কাগজপত্র যাচাই পর্যন্ত সম্পূর্ণ কার ইন্সপেকশন চেকলিস্ট মেনে চলা জরুরি। গাড়ি কেনার আগে আলোচিত ১০টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পর্যবেক্ষণ করলে সাধারণ সমস্যা ও অতিরিক্ত খরচ থেকে রক্ষা পাবেন। নতুন কিংবা ব্যবহৃত, যেমন গাড়িই কিনুন না কেন, সাবধানে পরীক্ষা এবং ডকুমেন্টেশন যাচাইকরণ, একটি নিরাপদ এবং নির্ভরযোগ্য ক্রয়ের নিশ্চয়তা দেয়।
সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
১. গাড়ি কেনার আগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কী কী বিষয় দেখা উচিত?
ইঞ্জিনের অবস্থা, ব্রেক সিস্টেম, টায়ারের মান, ডকুমেন্টেশন, এবং টেস্ট ড্রাইভ, ইত্যাদি অবশ্যই ভালোভাবে পরীক্ষা করা উচিত।
২. পুরনো গাড়ি কেনার সময় কীভাবে বুঝবেন গাড়িটি ভালো অবস্থায় আছে?
ইঞ্জিনের শব্দ শুনুন, ধোঁয়ার রঙ লক্ষ্য করুন, গিয়ার পরিবর্তন পরীক্ষা করুন এবং সার্ভিস রেকর্ড দেখুন।
৩. গাড়ির কাগজপত্র যাচাই করা কেন জরুরি?
নকল বা অসম্পূর্ণ ডকুমেন্ট থাকলে ভবিষ্যতে আইনি জটিলতা হতে পারে, তাই রেজিস্ট্রেশন, ইন্স্যুরেন্স ও ট্যাক্স পেপার যাচাই জরুরি।
৪. টেস্ট ড্রাইভ নেওয়ার সময় কী কী বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে?
ব্রেকের কার্যকারিতা, স্টিয়ারিং কন্ট্রোল, সাসপেনশন এবং গিয়ার পরিবর্তন স্মুথ কিনা পর্যবেক্ষণ করুন।
৫. ইঞ্জিন অয়েল ও কুল্যান্ট পরীক্ষা করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
এগুলো গাড়ির ইঞ্জিনের স্বাস্থ্য নির্ধারণ করে। ময়লা বা কালো তেল মানে রক্ষণাবেক্ষণ ঠিকমতো হয়নি।





























