মোটরসাইকেল লাইসেন্স রিনিউঃ যা কিছু জানা প্রয়োজন

একজন নিয়মিত বাইকারের জন্য মোটরসাইকেলের দরদাম জানা যেমন জরুরি, তেমনি সচল ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকাটা তার চেয়েও বেশি জরুরি। বিনা লাইসেন্সে বাইক চালানো আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। আবার মেয়াদ উত্তীর্ণ মোটরসাইকেল লাইসেন্স রিনিউ করাও অত্যাবশ্যক, নয়ত লাইসেন্স না থাকার মতই শাস্তি ভোগ করতে হবে।
সাধারণভাবে আমাদের বাইক ড্রাইভিং লাইসেন্সের মেয়াদ থাকে ১০ বছর। বাংলাদেশের সড়ক নিরাপত্তা আইন ২০১৮ অনুযায়ী এই ১০ বছর পর পর মোটরসাইকেলের লাইসেন্স নবায়ন করতে হয়।
মোটরসাইকেল লাইসেন্স রিনিউ করা না হলে যেসব সমস্যা হতে পারে
প্রতিদিন কোন ঝামেলা ছাড়া রাস্তায় বাইক চালাতে হলে ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন করা খুবই জরুরী। লাইসেন্স এর মেয়াদ শেষ হওয়ার দিন থেকে পরবর্তী ১৫ দিন পর্যন্ত আপনি অনলাইনে ড্রাইভিং লাইসেন্সটি নবায়নের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এক্ষেত্রে কোন জরিমানা দিতে হবে না।
মেয়াদ যদি শেষ হয়ে যায় এবং সময়মত মোটরসাইকেল লাইসেন্স রিনিউ করা না হয়, তাহলে প্রতি বছর দেরির জন্য আপনাকে ২৩০ টাকা করে জরিমানা দিতে হবে। তাছাড়া মেয়াদ-উত্তীর্ণ লাইসেন্স ট্র্যাফিক পুলিশের হাতে পড়লে আলাদা জরিমানা তো আছেই।
অনলাইন ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন প্রক্রিয়া
ধাপ ১ঃ প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট ও ব্যাংক ডিপোজিট
মোটরসাইকেল লাইসেন্স রিনিউ করার জন্য আপনার যেসব কাগজপত্র লাগবে তা হচ্ছে:
- ড্রাইভিং লাইসেন্স এর ফটোকপি
- জাতীয় পরিচয় পত্র (NID) এর ফটোকপি
- নাগরিক সনদ পত্র (সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিস থেকে) সত্যায়িত কপি
- ৪ কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি
- মেয়াদোত্তীর্ণ আসল ড্রাইভিং লাইসেন্স কার্ড
ব্যাংক ডিপোজিট দেওয়ার জন্য আপনার মেয়াদোত্তীর্ণ ড্রাইভিং লাইসেন্সের ফটোকপি BRTA অফিসে নবায়ন অফিসারের কাছ থেকে সত্যায়িত করাতে হবে। ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার সময় ব্যাংক ফরমের সাথে এই ফটোকপিটি জমা দিতে হবে।
মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে আবেদন করলে ফি হবে অপেশাদার লাইসেন্সের জন্য ২৪২৭ টাকা এবং পেশাদার লাইসেন্সের জন্য ১৫৬৫ টাকা। ১৫ দিনের পর থেকে প্রতি বছর দেরির জন্য ২০০ টাকা জরিমানা যোগ হবে।
ধাপ ২ঃ ফরম পূরণ ও জমা
- লাইসেন্স নবায়ন ফরম: যদি বিবাহিত হন, তাহলে স্বামী/স্ত্রীর নাম ও মোবাইল নাম্বার দিতে হবে। অবিবাহিত হলে পিতা বা মাতার নাম দিতে হবে। অনলাইন লাইসেন্স ফরম থেকে সংগ্রহ করা যায়।
- মেডিকেল ফরম: এমবিবিএস ডাক্তার দ্বারা টেস্ট করাতে হবে এবং সত্যায়িত করতে হবে। অনলাইনে ডাউনলোড করা যায়।
এই দুই ফরমে ছবি সংযুক্ত করতে হবে। এরপর জাতীয় পরিচয়পত্র, মেয়াদোত্তীর্ণ ড্রাইভিং লাইসেন্স, ব্যাংক স্লিপ, নাগরিক সনদ, মেডিকেল সার্টিফিকেটসহ সব ডকুমেন্ট জমা দিতে হবে।
পেশাদার লাইসেন্স রিনিউ
পেশাদার ফরম প্রিন্ট করে পুলিশ তদন্ত প্রতিবেদন ও ছবি জমা দিতে হবে এবং পুনরায় ব্যবহারিক পরীক্ষা দিতে হবে। সঠিক ডকুমেন্ট থাকলে আপনাকে ডুপ্লিকেট লাইসেন্স দেয়া হবে, যা বায়োমেট্রিক এসএমএস আসা পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারবেন।
ধাপ ৩ঃ বায়োমেট্রিক্স প্রদান
BRTA থেকে এসএমএসে দেয়া তারিখে অফিসে গিয়ে ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও ছবি দিতে হবে। এসময় একটি কম্পিউটার কপি দেয়া হবে।
ধাপ ৪ঃ স্মার্ট কার্ড সংগ্রহ
ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও ছবি দেয়ার ৩ মাস পর BRTA অফিস থেকে স্মার্ট কার্ড সংগ্রহ করতে পারবেন।
শেষকথা
উল্লিখিত ধাপগুলো অনুসরণ করলে সহজেই আপনার মোটরসাইকেল লাইসেন্স রিনিউ করতে পারবেন এবং পুনরায় রাস্তায় নির্ভয়ে বাইক চালাতে পারবেন।
গ্রাহকদের নিয়মিত কিছু প্রশ্নের উত্তর
অনলাইন ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন করবো কীভাবে?
BRTA ওয়েবসাইট থেকে নবায়নের ফরম সংগ্রহ করতে হবে। মেডিকেল ফরমও সেখানেই পাওয়া যায়। আবেদন অনলাইনে করা গেলেও ফাইনাল প্রসেসের জন্য BRTA অফিসে যেতে হবে।
অনলাইন ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করার নিয়ম কী?
গুগল প্লে-স্টোর থেকে DL Checker অ্যাপ ইন্সটল করুন। DL নাম্বার, রেফারেন্স নাম্বার এবং জন্ম-তারিখ দিলে লাইসেন্সের স্ট্যাটাস, মেয়াদসহ তথ্য পাওয়া যাবে।
কীভাবে অনলাইন ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে পারি?
BRTA সার্ভিস পোর্টাল এ লগইন করে ডকুমেন্ট আপলোডসহ লার্নার লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হবে। এরপর সিস্টেম থেকে লার্নার লাইসেন্স জেনারেট হবে যা প্রিন্ট করে ড্রাইভিং শেখার জন্য ব্যবহার করা যাবে।