গাড়ির অবচয়ঃ গাড়ির বয়স বাংলাদেশের বাজারে কিভাবে রিসেল ভ্যালুতে প্রভাব ফেলে?

Humyra Sharmind Alam
time
5 মিনিটে পড়া যাবে
feature image

বাংলাদেশে আপনি যখন নতুন বা রিকন্ডিশন কোনো গাড়ি কিনছেন, তখন সেটি শুধু যাতায়াতের মাধ্যম নয়, এক ধরনের বিনিয়োগও বটে। তবে রিয়েল এস্টেটের মতো সময়ের সাথে গাড়ির মূল্য পরিবর্তন হয়। কিন্তু এই বিনিয়োগের মূল্য সময়ের সাথে বাড়ে না - বরং কমে যায়। প্রতি বছর গাড়ির মূল্য কিছুটা কমতে থাকে, যাকে বলা হয় গাড়ির অবচয় (Vehicle Depreciation)।

বাংলাদেশে গাড়ির অবচয় সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকলে ক্রেতারা আরও বুদ্ধিমানের মতো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, আর বিক্রেতারাও তাদের গাড়ির সর্বোচ্চ রিসেল ভ্যালু পেতে পারেন।

গাড়ির অবচয় কী?

গাড়ির অবচয় বলতে বোঝায় সময়ের সাথে সাথে গাড়ির মূল্যের কমে যাওয়া। সহজভাবে বললে, আপনি যে দামে গাড়িটি কিনেছিলেন আর এখন বাজারে যে দামে এটি বিক্রি করা যাবে, এই দুই মূল্যের পার্থক্যই হলো অবচয়।

প্রত্যেকটি গাড়ির মূল্য কমতে শুরু করে ঠিক সেই মুহূর্ত থেকেই, যখন এটি শোরুম থেকে বের করা হয়। এটি ঘটে কারণ গাড়ির ব্যবহারজনিত ক্ষয়, নতুন প্রযুক্তির সংযোজন, ক্রেতাদের পছন্দের পরিবর্তন, আর নতুন মডেলের আগমন।

বাংলাদেশে যেহেতু গাড়ির বাজারে জাপানের রিকন্ডিশন গাড়ির প্রভাব সবচেয়ে বেশি, তাই এখানে গাড়ির মূল্য কমার হার (car value over time) নির্ভর করে ব্র্যান্ড, মডেল ও চাহিদার ওপর।

বাংলাদেশে গাড়ির অবচয় কেমন হয়?

বাংলাদেশে গাড়ির অবচয় একটু আলাদা ধরনের। কারণ এখানে নতুন গাড়ির সরবরাহ সীমিত এবং কর অনেক বেশি, তাই ব্যবহৃত জাপানি গাড়ির চাহিদা সবসময়ই বেশি থাকে।

ফলে এসব গাড়ি তুলনামূলক ধীরে অবমূল্যায়িত হয়। যেমন-Toyota Axio, Honda Fit, বা Nissan X-Trail এর মতো জনপ্রিয় রিকন্ডিশন গাড়িগুলো অন্য ব্র্যান্ডের তুলনায় অনেক দিন পর্যন্ত তাদের রিসেল ভ্যালু ধরে রাখতে পারে।

এই গাড়িগুলো জনপ্রিয় কারণ এগুলো জ্বালানি সাশ্রয়ী, পার্টস সহজে পাওয়া যায়, আর দীর্ঘমেয়াদে নির্ভরযোগ্য।

তবে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য গাড়িও বয়সের সাথে সাথে দাম হারায়।

সাধারণভাবে দেখা যায়ঃ

- প্রথম বছরে গাড়ির দাম কমে প্রায় ২০%-৩০%,

- তিন বছর পর কমে ৪০%-৫০%,

- আর পাঁচ বছরের পর কমে যায় ৬০%-৭০% পর্যন্ত, যা নির্ভর করে মাইলেজ ও অবস্থা অনুযায়ী।

উদাহরণ হিসেবে, আপনি যদি Toyota Premio ২৫ লাখ টাকায় কিনেন, তবে চার বছর পর ভালোভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করলে সেটি প্রায় ১৭-১৮ লাখ টাকায় বিক্রি হতে পারে।

কোন কোন বিষয় গাড়ির অবচয়ে প্রভাব ফেলে?

১. বয়স ও মাইলেজ

গাড়ির বয়স যত বাড়ে, তার রিসেল ভ্যালু তত কমে। তবে মাইলেজও গুরুত্বপূর্ণ। ৭ বছরের পুরনো কিন্তু কম চালানো গাড়ির দাম অনেক সময় ৩ বছরের বেশি চালানো গাড়ির চেয়ে ভালো পাওয়া যায়। বাংলাদেশে সাধারণত ক্রেতারা ৫০,০০০ কিলোমিটারের কম চালানো গাড়ি পছন্দ করেন।

২. ব্র্যান্ড ও মডেলের সুনাম

বাংলাদেশে ব্র্যান্ডের সুনাম রিসেল ভ্যালু নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখে। Toyota, Honda, এবং Nissan এর মতো ব্র্যান্ড ব্যবহৃত গাড়ির বাজারে রাজত্ব করে, কারণ এগুলো নির্ভরযোগ্য এবং রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কম। অন্যদিকে, BMW বা Mercedes-Benz এর মতো ইউরোপিয়ান বিলাসবহুল গাড়িগুলো দ্রুত অবমূল্যায়িত হয়, কারণ এদের মেরামতের খরচ বেশি এবং পার্টস পাওয়া কঠিন।

৩. অবস্থা ও রক্ষণাবেক্ষণ

গাড়ির বাহ্যিক ও যান্ত্রিক অবস্থা রিসেল ভ্যালুতে সরাসরি প্রভাব ফেলে। ক্রেতারা সাধারণত গাড়ির রঙ, দাগ, মরিচা, দুর্ঘটনার ইতিহাস ও সার্ভিস রেকর্ড দেখে সিদ্ধান্ত নেন। যে গাড়িতে নিয়মিত সার্ভিস করা হয়েছে এবং ইন্টেরিয়র পরিষ্কার, সেই গাড়ির দাম সবসময় ভালো পাওয়া যায়।

৪. বাজারের চাহিদা ও সরবরাহ

চাহিদা বেশি থাকলে রিসেল ভ্যালুও বেশি হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে ছোট সেডান ও হাইব্রিড গাড়ির চাহিদা সবচেয়ে বেশি, কারণ জ্বালানির দাম বেড়েছে এবং শহরে যানজট বেশি। অন্যদিকে বড় SUV বা বেশি ফুয়েল খরচ হয় এমন গাড়ি দ্রুত অবমূল্যায়িত হয়।

৫. জ্বালানির ধরন ও ফুয়েল এফিশিয়েন্সি

বাংলাদেশি ক্রেতারা ফুয়েল এফিশিয়েন্সি বা জ্বালানি সাশ্রয়ী গাড়ি বেশি পছন্দ করেন। যেমন- Toyota Aqua বা Honda Grace এর মতো হাইব্রিড গাড়িগুলো ধীরে অবমূল্যায়িত হয় কারণ এগুলোর মাইলেজ বেশি এবং চলার খরচ কম। অন্যদিকে ডিজেল বা CNG কনভার্টেড গাড়ির চাহিদা তুলনামূলক কম।

৬. রঙ ও ফিচারস

গাড়ির রঙও রিসেল ভ্যালুতে ভূমিকা রাখে। সাদা, সিলভার, কালো বা ধূসর রঙের গাড়ি বিক্রি করা সহজ হয়। অচেনা রঙের গাড়ির চাহিদা কম। এছাড়া, যেসব গাড়িতে নিরাপত্তা ফিচার, পুশ স্টার্ট, বা আধুনিক ইনফোটেইনমেন্ট সিস্টেম আছে, সেগুলোর দাম তুলনামূলক বেশি পাওয়া যায়।

প্রথম কয়েক বছরেই সবচেয়ে বেশি মূল্য কমে

গাড়ির প্রথম তিন বছরই অবচয়ের সবচেয়ে বড় সময়। এই সময়ে নতুন মডেল আসে, প্রযুক্তি আপডেট হয়, আর ব্যবহারজনিত ক্ষয়ও বেশি হয়। বাংলাদেশে সাধারণত ৩ থেকে ৫ বছরের পুরনো গাড়িকে ক্রেতারা সবচেয়ে পছন্দ করেন, কারণ এগুলো একদিকে সাশ্রয়ী আবার অন্যদিকে নির্ভরযোগ্যও।

কীভাবে অবচয়ের ক্ষতি কমানো যায়?

- বিশ্বস্ত ব্র্যান্ড নির্বাচন করুনঃ Toyota, Honda, Nissan বা Mitsubishi-এর গাড়ি রিসেল ভ্যালুতে এগিয়ে।

- নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করুনঃ নিয়মিত সার্ভিসিং করুন, জেনুইন পার্টস ব্যবহার করুন, এবং সার্ভিস রেকর্ড সংরক্ষণ করুন।

- অপ্রয়োজনীয় পরিবর্তন করবেন নাঃ বড় স্পয়লার, বডিকিট বা লাউড এক্সজস্ট অনেক ক্রেতার কাছে অপ্রিয় হতে পারে।

- মাইলেজ কম রাখুনঃ যত কম চালাবেন, তত বেশি দাম পাবেন।

- দুর্ঘটনা এড়িয়ে চলুনঃ ছোট দুর্ঘটনার ইতিহাসও দাম কমিয়ে দিতে পারে।

- সময়মতো বিক্রি করুনঃ ৭-৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই বিক্রি করা ভালো, কারণ এর পর অবচয় দ্রুত হয়।

বাংলাদেশের ব্যবহৃত গাড়ির বাজার

বাংলাদেশে ব্যবহৃত গাড়ির বাজার এখন অনেক সক্রিয়, বিশেষ করে Bikroy-এর মতো অনলাইন প্ল্যাটফর্মের কারণে। এখানে মূলত জাপানের রিকন্ডিশন গাড়িগুলোরই বেশি লেনদেন হয়। সরকারি শুল্ক ও আমদানি বিধিনিষেধের কারণে নতুন গাড়ির দাম অনেক বেশি, তাই ব্যবহৃত গাড়ির অবচয় তুলনামূলক ধীর হয়। এ কারণেই একটি ভালোভাবে রক্ষণাবেক্ষিত ৬ বছরের পুরনো Toyota এখনও তার মূল দামের ৬০%-৭০% পর্যন্ত মূল্য ধরে রাখতে পারে।

তবে জ্বালানির দাম বৃদ্ধি, করনীতি পরিবর্তন, বা আমদানি সীমাবদ্ধতা রিসেল ট্রেন্ডেও প্রভাব ফেলে। যেমন, যখন আমদানি শুল্ক বেড়ে যায়, তখন বাজারে থাকা ব্যবহৃত গাড়িগুলোর দাম বেড়ে যায়।

গাড়ির অবচয় একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, তবে কিছু সচেতন সিদ্ধান্ত নিয়ে আপনি এর প্রভাব অনেকটাই কমাতে পারেন। গাড়ির বয়স, অবস্থা, ব্র্যান্ডের সুনাম এবং রক্ষণাবেক্ষণই নির্ধারণ করে আপনি কত ভালো দামে এটি বিক্রি করতে পারবেন।

সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

১. বাংলাদেশে প্রতি বছর গাড়ির কত শতাংশ মূল্য কমে?

গড়ে প্রতি বছর গাড়ির প্রায় ১০%-১৫% মূল্য কমে, যা নির্ভর করে ব্র্যান্ড, মাইলেজ ও অবস্থা অনুযায়ী।

২. কোন গাড়িগুলোর রিসেল ভ্যালু সবচেয়ে ভালো?

Toyota Axio, Honda Fit, এবং Toyota Premio-এর মতো জনপ্রিয় জাপানি গাড়িগুলোর রিসেল ভ্যালু সবসময়ই বেশি থাকে।

৩. নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ কি গাড়ির অবচয় কমায়?

অবশ্যই। নিয়মিত সার্ভিসিং ও রেকর্ড সংরক্ষণ গাড়ির দাম দীর্ঘদিন ধরে রাখতে সাহায্য করে।

৪. হাইব্রিড গাড়ি ধীরে অবমূল্যায়িত হয় কেন?

Toyota Aqua বা Honda Grace এর মতো হাইব্রিড গাড়ি জ্বালানি সাশ্রয়ী হওয়ায় ক্রেতাদের কাছে বেশি জনপ্রিয়, তাই ধীরে অবমূল্যায়িত হয়।

৫. কখন গাড়ি বিক্রি করা সবচেয়ে ভালো সময়?

সাধারণত ৭-৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই বিক্রি করা ভালো, কারণ এর পর দাম দ্রুত কমে যায় এবং রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বেড়ে যায়।

অনুরূপ খবর

  • ⁠Used Vehicle Insights

    গাড়ির অবচয়ঃ গাড়ির বয়স বাংলাদেশের বাজারে কিভাবে রিসেল ভ্যালুতে প্রভাব ফেলে?

    time
    5 মিনিটে পড়া যাবে

সর্বশেষ গাড়ির রিভিউ

  • Suzuki Alto K10 2015

    Hatchback

    ৳ 800K - 1.2M

  • Toyota Aqua 2014

    Hatchback

    ৳ 1.5M - 1.6M

  • Suzuki Swift 2017

    Hatchback

    ৳ 1.7M - 2.2M

  • Toyota Vitz 2017

    Hatchback

    ৳ 1.8M - 2.3M

  • Nissan Leaf 2014

    Hatchback

    ৳ 4M - 6M

  • Mitsubishi Montero 2015

    SUV & 4X4

    ৳ 6.5M - 8.6M

  • Suzuki Wagon R 2018

    Hatchback

    ৳ 750K - 1.1M

  • Honda Civic 2019

    Saloon & Sedan

    ৳ 3.5M - 4.5M

  • Land Rover Defender 2020

    SUV & 4X4

    ৳ 14M - 18M

  • Mitsubishi Lancer 2017

    Saloon & Sedan

    ৳ 2.5M - 3M

  • Toyota Axio 2016

    Saloon & Sedan

    ৳ 1.8M - 2.4M

  • Toyota Premio G Superior 2018

    Saloon & Sedan

    ৳ 2.3M - 3M

সর্বশেষ বাইকের রিভিউ

  • Hero Ignitor 125 2020 IBS

    ৳ 115.7K - 128.5K

  • Honda X-Blade 160 ABS

    ৳ 194.9K - 216.5K

  • Honda Livo 110 Drum

    ৳ 107.9K - 119.9K

  • Keeway TXM 150

    ৳ 161.1K - 179K

  • Suzuki Gixxer Monotone

    ৳ 182K - 192K

  • Suzuki Gixxer SF Matt Plus

    ৳ 315K - 350K

  • Yamaha R15 S

    ৳ 409.5K - 455K

  • Hero Hunk 150 R Dual Disc ABS

    ৳ 166.1K - 232K

  • TVS Apache RTR 165 RP

    ৳ 297K - 360K

  • Suzuki Intruder FI ABS

    ৳ 247.5K - 320K

  • Suzuki Bandit 150

    ৳ 288K - 320K

  • KTM RC 125

    ৳ 333K - 566K

hero

Bikroy এ মাত্র ২ মিনিটে আপনার গাড়ি বা মোটরবাইকের বিজ্ঞাপন দিন!