বাংলাদেশে ব্যবহৃত গাড়ি কেনার নির্দেশিকা
বাংলাদেশে অনেকেই ব্যবহৃত গাড়ি কিনতে চান, বিশেষত অর্থ সাশ্রয় করার জন্য। নতুন মডেলের গাড়ির দাম বেশি হওয়ায়, পুরনো মডেলের গাড়ি প্রায় অর্ধেক বা তারও কম দামে পাওয়া যায়। একটি পুরনো গাড়ি কেনার উদ্দেশ্য হলো অর্থ সাশ্রয় করা। আপনি একটি ভালো মানের, নির্ভরযোগ্য ব্যবহৃত গাড়ি সঠিক দামে কিনে অনেক টাকা সাশ্রয় করতে পারেন। তবে, যদি সঠিক গাড়ি না কিনেন, তবে মেরামতের খরচ, সার্ভিসিং, মাইলেজ ইত্যাদি হিসাবে দীর্ঘমেয়াদী ব্যয় বাড়তে পারে।
আপনি কিছু টেকনিক্যাল বিষয়, ইঞ্জিন জ্ঞান এবং লাইসেন্সিং বিষয়ে যাচাই করে একটি ঝামেলা-মুক্ত গাড়ি কিনতে পারেন। ব্যবসার জন্য, রাইডশেয়ারিং, এবং সাধারণ কাজের জন্য নতুন মডেলের গাড়ি কেনার প্রয়োজন নেই, এই ক্ষেত্রে পুরনো গাড়ি উপযুক্ত। বর্তমানে বাজারে অনেক সস্তা ব্যবহৃত গাড়ি পাওয়া যাচ্ছে।
আজকের ব্লগে আমরা আলোচনা করব কিছু টিপস এবং কৌশল যেগুলি আপনাকে একটি পুরনো গাড়ি কেনার আগে জানা উচিত।
পুরনো গাড়ি কেনার আগে যা যা মনে রাখতে হবে
ব্যবহৃত গাড়ি কেনার গাইড - টেকনিক্যাল বিষয়
- বর্তমান অবস্থা: গাড়ির ইঞ্জিন, ব্রেক, সাসপেনশন, মরিচা, পেইন্ট এবং ইন্টেরিয়র (ড্যাশবোর্ড, সিট ইত্যাদি) পরীক্ষা করুন।
- রক্ষণাবেক্ষণ: রক্ষণাবেক্ষণ এবং মেরামতের রেকর্ড পরীক্ষা করুন, যেমন তেল পরিবর্তন, মোবিল এবং টিউন-আপ।
- মাইলেজ: অডোমিটার রিডিং পরীক্ষা করুন। যদি মাইলেজ সন্দেহজনকভাবে কম বা গাড়িটি অতিরিক্ত ব্যবহার করা হয়েছে, তাহলে তা এড়িয়ে চলুন। প্রয়োজনে প্রযুক্তিবিদ সহায়তা নিন।
- তেল লিকেজ: যদি কোনো লিকিং তেল থাকে তবে তা খারাপ চিহ্ন। এমন গাড়ি এড়িয়ে চলুন।
- কার্যকারিতা: টায়ার, বৈদ্যুতিন তার, হর্ণ, স্টিয়ারিং, হেডলাইট, টেল ল্যাম্প, উইপার এবং ফগ ল্যাম্প পরীক্ষা করুন।
- ব্যাটারি: ব্যাটারির অবস্থা এবং অ্যাসিড লেভেল পরীক্ষা করুন, এতে গাড়ির বয়স এবং রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কে ধারণা পাবেন।
- ধোঁয়ার রঙ:
- কালো ধোঁয়া – অতিরিক্ত জ্বালানি পোড়ানো
- সাদা ধোঁয়া – কুল্যান্ট লিকেজ
- নীল ধোঁয়া – ইঞ্জিন অয়েল সমস্যা
ব্যবহৃত গাড়ি কেনার গাইড – অফিসিয়াল ডকুমেন্টস
- গাড়ির রেজিস্ট্রেশন: রেজিস্ট্রেশন কাগজপত্র, চ্যাসিস নম্বর, পুলিশ কেস রেকর্ড বা বকেয়া পরীক্ষা করুন।
- বিমা কাগজপত্র: আপডেট এবং বৈধ কিনা তা নিশ্চিত করুন।
- কর কাগজপত্র: কর পরিশোধ নিশ্চিত করুন।
- ওয়ারেন্টি: মেরামত বা প্রতিস্থাপিত অংশের জন্য ওয়ারেন্টি কাগজপত্র পর্যালোচনা করুন।
- এমিশন স্ট্যান্ডার্ড: গাড়িটি ইউরো-১ বা ইউরো-২ মানদণ্ড পূরণ করে কিনা তা নিশ্চিত করুন (বাংলাদেশ আইন অনুসারে)।
- ফিটনেস সনদ: এটি বৈধ এবং আপডেট করা কিনা তা নিশ্চিত করুন।
আরো কিছু বিষয় মনে রাখুন
- টেস্ট ড্রাইভ নিন এবং ইঞ্জিনের আওয়াজ শুনুন।
- ইঞ্জিন স্টার্ট হতে কত সময় নেয় তা পরীক্ষা করুন (ব্যাটারি, কার্বুরেটর, ফুয়েল সিস্টেমের সমস্যা)।
- একজন অভিজ্ঞ মেকানিক নিয়ে গাড়ির পরীক্ষা করান।
- গাড়ির ভবিষ্যৎ রিসেল ভ্যালু বিবেচনা করুন।
- পুরনো গাড়ির জন্য, স্পেয়ার পার্টসের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করুন।
- সার্ভিসিং ইতিহাস পর্যালোচনা করুন এবং জরুরি মেরামতের প্রয়োজনীয়তা চেক করুন।
- গাড়ির অবস্থার ভিত্তিতে দাম আলোচনা করুন।
উপসংহার
গাড়ি কেনা কোন তাড়াহুড়োর কাজ নয়। এর জন্য অনেক পরিকল্পনা এবং চিন্তা-ভাবনা প্রয়োজন। কখনও কখনও এটি সিদ্ধান্ত নিতে মাসখানেকও লাগতে পারে, এবং আপনাকে আপনার দীর্ঘমেয়াদী চাহিদা এবং প্রয়োজনগুলোও বিবেচনা করতে হবে। একই সাথে, অন্যান্য খরচ যেমন গাড়ির পার্টস এবং বীমা দেখাও জরুরি। আদর্শভাবে, আপনাকে গাড়িটি ভালভাবে পরীক্ষা করতে হবে এবং দীর্ঘ টেস্ট ড্রাইভ নিতে হবে। এবং শেষ পর্যন্ত, দরাদরি না করার সিদ্ধান্তে অটল থাকুন। আসলে, আপনি ২০ মিনিটের মধ্যে দাম কমিয়ে আরও ভাল চুক্তি পেতে পারেন। আমরা আশা করি আমরা আপনাকে বাংলাদেশে একটি ব্যবহৃত গাড়ি কেনার জন্য সব প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সাহায্য করতে পেরেছি। কিছু গবেষণা আপনাকে দীর্ঘমেয়াদী অনেক সময় সাশ্রয় করবে।



































