ইয়ামাহা R15 V3 ইন্ডিয়ান মোটরসাইকেল ১৩০০+ কিমি রিভিউ - মোঃ নাজমুল
আমাদের দেশে অ্যাগ্রেসিভ স্টাইলের বাইকারদের জন্য স্পোর্টি ডিজাইন, অধিক মাইলেজ, দুর্দান্ত স্পিড, আর মসৃণ কর্ণারিং করতে পারাটা খুবই জরুরি; আর এই সবকিছু একসাথে যদি কোনো মোটরবাইকে পাওয়া যায়, তাহলে তো কথাই নেই!
আমি মোঃ নাজমুল, একজন বাইক প্রেমী এবং অ্যাগ্রেসিভ বাইকার। আমার জীবনের ২০ তম বাইক নিয়ে আজ কথা বলবো, যার নাম সবার প্রিয়, ইয়ামাহা R15 V3। সঙ্গত কারণেই বর্তমানে প্রো বাইকারদের মনে এই R15 V3 মোটরসাইকেলটি বিশেষ একটা জায়গা দখল করে রেখেছে। বাংলাদেশে R15 এর দাম অত্যন্ত ব্যয়বহুল। স্বপ্নের মত স্পিড, আর দুর্দান্ত স্টাইলিশ এই মোটরবাইকটি গত ২.৫ মাসে আমার মনেও বিশেষ একটি জায়গা করে নিয়েছে। তবে সেজন্য একে শতভাগ পারফেক্ট বাইক বলাটাও ভুল হবে। ১৩০০ কিলোমিটারের বেশি চালানোর পর আমার ব্যক্তিগত কিছু পর্যবেক্ষণ ও বিস্তারিতভাবে ইন্ডিয়ান R15 রিভিউ আপনাদের সামনে তুলে ধরবো।
R15 V3 মোটরবাইকে আমি যা কিছু ভালো পেয়েছি
১। আউটলুক
R15 V3 মোটরসাইকেলটির প্রথম ভালো দিক হচ্ছে এর আউটলুক। যেকোনো পাশ থেকেই দেখুন না কেন, দারুণ স্পোর্টি লুকের এই বাইকটি সকলের নজর কাড়বে। বিভিন্ন যায়গায় নিয়ে গেলে বন্ধুমহলেও এর প্রশংসা পেয়েছি।
২। ইঞ্জিন
ইয়ামাহা R15 V3 BS6 ভার্সনে দেয়া হয়েছে অসামান্য শক্তিশালী ১৫০ সিসি ইঞ্জিন, যা ১৯ বিএইচপি শক্তি উৎপাদনে সক্ষম। ১৫০ সিসি সেগমেন্টে এত পাওয়ার অন্য কোনো বাইকে সচরাচর দেখা যায় না।
৩। কুলিং সিস্টেম
বেশি আরপিএম-এ চালানোর সময় গরম হওয়া ঠেকাতে এতে রয়েছে লিকুইড কুলিং সিস্টেম। রেডিয়েটর ফ্যান ও ওয়াটার জ্যাকেট দ্রুত ইঞ্জিন ঠান্ডা করে, ফলে পারফর্মেন্স সবসময় ভালো থাকে।
৪। ভিভিএ প্রযুক্তি
ভ্যারিয়েবল ভালভ অ্যাকচুয়েশন (VVA) প্রযুক্তি ৭০০০ RPM-এ স্বয়ংক্রিয়ভাবে সক্রিয় হয়। এতে জ্বালানী ও বাতাসের সঠিক মিশ্রণ তৈরি হয়ে বাইক সবসময় শক্তিশালী থাকে।
৫। স্লিপার ক্লাচ
হাই স্পিডে হুট করে গিয়ার চেঞ্জ করলে ব্রেক বা ইঞ্জিনে ধাক্কা লাগার আশঙ্কা থাকে। স্লিপার ক্লাচ এই সমস্যা দূর করে, স্পিড আস্তে আস্তে কমায় এবং মসৃণ গিয়ারিং নিশ্চিত করে।
৬। ইউএসডি সাসপেনশন
আপ-সাইড ডাউন (USD) সাসপেনশন কর্ণারিংয়ে দুর্দান্ত ব্যালেন্স দেয়। এটি প্রিমিয়াম বাইক ফিচার, যা R15 V3-তে থাকায় কনফিডেন্স আরও বেড়ে যায়।
৭। স্মার্ট ফুয়েল ইনজেকশন সিস্টেম
EFI সিস্টেমে স্মার্ট সেন্সর আছে যা স্পিডের প্রয়োজন অনুযায়ী ফুয়েল-এয়ার মিশ্রণ ঠিক করে দেয়। ফলে পাওয়া যায় ভালো পারফর্মেন্স ও চমৎকার মাইলেজ।
৮। ডিজিটাল মিটার
১৮টি ফিচারসহ ডিজিটাল মিটারটিতে রয়েছে:
- অভ্যর্থনা বার্তা সেট করার অপশন
- ৭০০০ RPM-এ VVA সক্রিয় হওয়ার ইঙ্গিত
- গিয়ার পজিশন ইনডিকেটর
- তাৎক্ষণিক ফুয়েল খরচ
- গড় স্পিড ও ফুয়েল খরচ
- শিফট লাইট কাস্টমাইজেশন
৯। মাইলেজ
শহরে প্রায় ৪১ কিমি/লিটার এবং হাইওয়েতে ৪৫-৫০ কিমি/লিটার মাইলেজ পেয়েছি। ১৯ বিএইচপি পাওয়ারের বাইকে এই মাইলেজ প্রশংসনীয়।
১০। পেছনের চাকার গঠন
১৪০ মিমি সেকশনের গোলাকার চাকা কর্ণারিংয়ে দুর্দান্ত সাপোর্ট দেয়। স্পোর্টি রাইডিং আরও উপভোগ্য হয়।
R15 V3 মোটরবাইকে আমি যেসব সমস্যা দেখেছি
১। দাম
বাংলাদেশে লঞ্চের সময় এর দাম ছিল ৫,৩০,০০০ টাকা, যেখানে ইন্ডিয়ায় ছিল মাত্র ১,৮০,০০০ টাকা। আমি ABS সহ ইন্ডিয়ান ভার্সন কিনেছি ৪,৮৫,০০০ টাকায়। দাম নিঃসন্দেহে বড় সমস্যা।
২। এবিএস
প্রথম দিকের ভার্সনে ABS ছিল না, যা নিয়ে অভিযোগ ছিল সবার। ABS যুক্ত ভার্সনের দাম কমলে আমি এটি কিনি।
৩। সিট ও বসার পজিশন
পিলিয়ন সিট অস্বস্তিকর এবং পেছনে গ্র্যাব হ্যান্ডেল নেই। রাইডার ওজনও হ্যান্ডেলবারে বেশি চাপ দেয়, ফলে দীর্ঘ সময় চালালে হাত ও কোমরে ব্যথা হয়। লং ট্যুরে এটি অসুবিধাজনক।
৪। পেছনের চাকা উন্মুক্ত
মাডগার্ড না থাকায় বৃষ্টিতে কাদা ও ময়লা বাইকে লেগে যায়। এতে প্রতিবার রাইড শেষে পরিষ্কার করতে হয়।
৫। হর্ণ
প্রিমিয়াম বাইক হলেও হর্ণটি মানসম্মত মনে হয়নি। শব্দে প্রায়ই মানুষ এটিকে ছোট যানবাহনের হর্ণ ভেবে ভুল করে।
পরিশেষে
R15 V3 মোটরসাইকেলে সমস্যার তুলনায় সুবিধাই বেশি। এর প্রিমিয়াম ফিচার, স্টাইল ও পারফর্মেন্স আমার কাছে এটিকে অন্যতম পছন্দের বাইক করেছে।