গাড়ির মালিকানা পরিবর্তনের জন্য কি কি ডকুমেন্ট প্রয়োজন?
বাংলাদেশে মোটরচালিত যানবাহন, যার মধ্যে গাড়িও অন্তর্ভুক্ত, মালিকানা স্থানান্তরের জন্য কয়েকটি ডকুমেন্ট প্রয়োজন। এই ডকুমেন্টগুলি মূলত পুরানো গাড়ি বা অন্যান্য যানবাহন কেনা-বেচা এবং উত্তরাধিকার সূত্রে মালিকানা পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন। কিছু মৌলিক ডকুমেন্টের মধ্যে রয়েছে: গাড়ি শিরোনাম স্থানান্তর ডকুমেন্ট, বিক্রয় বিল, নিবন্ধন সার্টিফিকেট, বীমা সার্টিফিকেট, লাইসেন্স তথ্য, এবং নোটারাইজড পাওয়ার অব অ্যাটর্নি।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (BRTA) এর নির্দেশনা অনুযায়ী, যদি যানবাহনের মালিকানা সময়মতো স্থানান্তরিত না হয়, তবে কেনা-বেচার ক্ষেত্রে আইনি সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। তাই মালিকানা স্থানান্তরের প্রক্রিয়া বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। নিচে ক্রেতা, বিক্রেতা এবং উত্তরাধিকারীদের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট এবং প্রক্রিয়া আলোচনা করা হয়েছে।
বাংলাদেশে যানবাহন মালিকানা স্থানান্তরের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (BRTA) এর দ্বারা নির্ধারিত ডকুমেন্টগুলো মালিকানা স্থানান্তরের জন্য বহন করতে হবে। ক্রেতা, বিক্রেতা এবং যানবাহনের জন্য পৃথক ডকুমেন্ট প্রয়োজন। কিছু ক্ষেত্রে, ক্রেতা এবং বিক্রেতার ব্যক্তিগত ডকুমেন্টও প্রয়োজন হতে পারে। আপনি BRTA ওয়েবসাইট থেকে প্রয়োজনীয় ফর্ম ডাউনলোড করতে পারেন। সকল ফর্ম এবং ডকুমেন্টের কপি অবশ্যই attested হতে হবে।
ক্রেতার জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট
- ফিল্ড ট্রান্সফার অফ ওউনর্শিপ (TO) ফর্ম, ক্রেতার সিগনেচার এবং TTO তে নমুনা স্বাক্ষর সহ।
- ফি জমার রসিদ (যানবাহনের ধরনের উপর নির্ভর করে)।
- ক্রেতার TIN সার্টিফিকেটের কপি (ব্যক্তিগত যানবাহনের জন্য)।
- নিবন্ধন সার্টিফিকেট/ডিজিটাল নিবন্ধন।
- ক্রেতার ছবিসহ নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে আফিডেভিট।
- বীমা সার্টিফিকেট।
- তিনটি স্ট্যাম্প সাইজ কালার ফটোগ্রাফ।
যদি ক্রেতা একটি প্রতিষ্ঠান হয়, তবে উল্লিখিত সকল ডকুমেন্টের মধ্যে আফিডেভিট এবং অফিসিয়াল প্যাডে স্বাক্ষরের নোট বাদে অন্যান্য ডকুমেন্ট প্রয়োজন।
বিক্রেতার জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট
- ফিল্ড এবং স্বাক্ষরিত TTO ফর্ম।
- স্বাক্ষরিত বিক্রয় রসিদ।
- বিক্রেতার ছবিসহ নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে আফিডেভিট।
- বিক্রেতার TIN সার্টিফিকেটের কপি (ব্যক্তিগত যানবাহনের জন্য)।
- তিনটি স্ট্যাম্প সাইজ কালার ফটোগ্রাফ।
- বিক্রেতার নো অবজেকশন সার্টিফিকেট (NOC)।
যদি বিক্রেতা একটি প্রতিষ্ঠান হয়, তবে বোর্ড রেজোলিউশন, অনুমোদন, এবং অফিসিয়াল প্যাডে স্বাক্ষর প্রয়োজন। যদি গাড়ির ঋণ থাকে, তবে ব্যাংক বা প্রতিষ্ঠান থেকে ক্লিয়ারেন্সও জমা দিতে হবে।
উত্তরাধিকার সূত্রে মালিকানা স্থানান্তরের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট
- কোর্ট কর্তৃক প্রদত্ত উত্তরাধিকার সার্টিফিকেট।
- ফিল্ড TO ফর্ম, উত্তরাধিকারীর স্বাক্ষর এবং TTO তে নমুনা স্বাক্ষর সহ।
- নির্ধারিত ফি জমার রসিদ।
- উত্তরাধিকারীর TIN সার্টিফিকেটের কপি।
- নিবন্ধন সার্টিফিকেট/ডিজিটাল নিবন্ধন সার্টিফিকেট।
- নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে উত্তরাধিকারীর ছবি সহ আফিডেভিট যা উত্তরাধিকারী দাবি করে।
- তিনটি স্ট্যাম্প সাইজ কালার ফটোগ্রাফ।
যদি একাধিক উত্তরাধিকারী থাকে এবং মালিকানা একটির নামে স্থানান্তরিত হয়, তবে অন্য উত্তরাধিকারীদের নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে ছবি সহ আফিডেভিট জমা দিতে হবে।
BRTA-তে মোটর যানবাহন পরিদর্শন এবং বায়োমেট্রিক প্রক্রিয়া
ডকুমেন্ট এবং ফি জমা দেওয়ার পর, গাড়িটি নির্ধারিত সময়ে BRTA সার্কেল অফিসে উপস্থাপন করতে হবে। কর্মকর্তারা আবেদন যাচাই করবেন এবং যানবাহনটি পরিদর্শন করবেন। অনুমোদিত হলে, মালিকানা পরিবর্তনের অনুমতি বা স্বীকারোক্তি জারি করা হবে।
স্বীকারোক্তি প্রাপ্তির সাথে বায়োমেট্রিক অ্যাপয়েন্টমেন্টের তারিখ থাকবে। ওই তারিখে নতুন মালিকের বায়োমেট্রিক এবং ছবি নেওয়া হবে। একটি স্মার্ট কার্ড নিবন্ধন সার্টিফিকেট জারি করা হবে এবং নির্ধারিত তারিখে তা সংগ্রহ করতে হবে।
মালিকানা স্থানান্তর না করার সমস্যা
- যদি আপনার নামে নিবন্ধিত গাড়িটি সঠিক স্থানান্তর ছাড়া বিক্রি হয় এবং অপরাধে ব্যবহৃত হয়, তবে আপনাকে দায়ী করা হবে।
- যথাযথ নিবন্ধন ছাড়া গাড়ি কেনা পরবর্তীতে আইনি জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
- মিথ্যা ডকুমেন্ট প্রদান করলে অন্য পক্ষ আপনার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারে।
- মালিকানা স্থানান্তর না করলে বাংলাদেশ ট্রাফিক আইন ধারা 74 অনুযায়ী 5,000 টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। দ্বিতীয় অপরাধে 10,000 টাকা জরিমানা হতে পারে।
উপসংহার: এই সমস্যা এড়াতে, সবসময় সঠিক ডকুমেন্টের মাধ্যমে গাড়ির মালিকানা স্থানান্তর করুন। ক্রেতা এবং বিক্রেতা উভয়কেই প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট প্রস্তুত করে BRTA-তে জমা দিতে হবে যাতে প্রক্রিয়া সুরক্ষিতভাবে সম্পন্ন হয়।



































