গাড়ি চালানো শিখতে দেখে নিন এই বিশেষ উপায়গুলো

আপনি কি খুব সম্প্রতি গাড়ি চালান শিখতে চাচ্ছেন? যে কোন ধরনের গাড়ি চালানোর জন্য সবার প্রথমেই যেটা প্রয়োজন সেটি হচ্ছে একটি সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন। গাড়ি চালাবার চাইতে আপনাকে সবার আগে এই কাজে দক্ষ হতে হলে দরকার সাহস আর দৃঢ় মনোবল। এটা হচ্ছে আপনার মানসিক প্রস্তুতি। এবার আপনাকে একজন দক্ষ কারো কাছ থেকে গাড়ি চালানো শিখে ফেলতে হবে। এখন দক্ষ কেউ মানে এই নয় যে আপনি দুই থেকে আড়াই মাস কেউ শখের বসে গাড়ি চালানো শিখলো আর আপনি তার থেকে শিখবেন। মনে রাখবেন, গাড়ি চালানো একটি এয়ারপ্লেন ল্যান্ড করার সমান। তাই এর জন্য আপনাকে শরণাপন্ন হতে হবে একজন দক্ষ গাড়ি চালকের যার আছে অন্তত সাত থেকে আট বছরের অভিজ্ঞতা। তবে আজকের এই লেখায় আমরা আলোচনা করবো ড্রাইভিং শেখার জন্য প্রাথমিক কিছু দিক নির্দেশনা এবং কোথায় কিভাবে গাড়ি চালানোর প্রশিক্ষণ নিবেন সেই সমস্ত বিস্তারিত তথ্য।
গাড়ি চালানোর জন্য ৫টি প্রাথমিক দিক নির্দেশনা
গাড়ি চালাবার জন্য প্রথমে আপনাকে কিছু দিক নির্দেশনা অবশ্যই মেনে চলতে হবে। তা না হলে দেখা যাবে গাড়ির ড্রাইভিং শেখার নামে আপনাকে পড়তে হচ্ছে নানা ধরনের বিড়ম্বনায়। আর আপনাকে যাতে কোন ধরনের সমস্যায় না পড়তে হয় তার জন্য মাথায় রাখুন এই বিষয়গুলো।
১- খোলা মাঠে গাড়ি চালান
আপনি যদি গাড়ি চালানো শিখতে কোন কোর্সে বা কোচিং সেন্টারে ভর্তি হন তাহলে আপনাকে এই নিয়ে ভাবতে হবে না। গাড়ি চালানোর জন্য তাদের আলাদা ব্যবস্থা থাকে। তবে আপনি নিজে নিজে গাড়ি চালানো শিখতে চাইলে অবশ্যই খোলা মাঠে শিখুন।
২- প্রতিদিন অন্তত দুই ঘন্টা সময় দিন
প্রতিদিন অন্তত দুই ঘন্টা গাড়ি চালানোর উপর সময় দিন। আপনার গাইডার আপনাকে সকালে ত্রিশ মিনিট এবং রাতে ত্রিশ মিনিট গাইড দিতে পারবে। তবে এরপর আপনি অন্তত দুই ঘন্টা নিজে আপনার গাইডারের দেখানো নির্দেশনা অনুযায়ী চালাবার চেষ্টা করুন।
৩- গাড়ির বেসিক কিছু ধারণা মাথায় রাখুন
গাড়ি চালনার আগে কিছু বেসিক জিনিস জেনে রাখাটা জরুরি। যেমন ধরুন গাড়ির ইঞ্জিন, গিয়ার, স্টিয়ারিং এগুলো কোথায় থাকে এবং কোনটার কি কাজ। এগুলো নিয়ে একটু রিসার্চ করুন এতে করে আপনার জন্য গাড়ি চালানো শেখাটা সহজ এবং দ্রুততর হবে। এছাড়া গাড়ির তাপমাত্রা, ফুয়েলের পরিমাণ, এবং কত ডিগ্রির নিচে নেমে গেলে কি সমস্যা হয় সেগুলো সম্পর্কেও প্রাথমিকভাবে ধারণা নিন। এতে করে হঠাৎ যদি ইঞ্জিন গরম হয়ে যায় আপনি যেকোনো ধরনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতি এড়াতে পারবেন।
৪- গাড়ি হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেলে কিভাবে চালু করবেন তার ধারণা নিন
গাড়ি চালানো শেখার পাশাপাশি এটাও শিখে নিন হঠাৎ যদি গাড়ির ইঞ্জিন কাজ না করে তখন প্রাথমিকভাবে কি করা যেতে পারে। যদি হঠাৎ গাড়ি কাজ না করে তখন কিভাবে পুনরায় গাড়ি স্টার্ট করবেন ও কিভাবে গাড়ির যন্ত্রাংশ যাচাই করবেন সেটাও শিখে রাখুন। এতে করে আপনার গাড়ির ক্ষেত্রে আপনি নিজেই তার সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে পারবেন।
৫- সঠিকভাবে ব্রেক করতে শেখা
সঠিকভাবে ব্রেক না করতে পারার জন্য অনেকেই দুর্ঘটনার শিকার হন। তাই চেষ্টা করুন কিভাবে স্টিয়ারিং এ চাপ দিয়ে সঠিকভাবে ব্রেক কষতে হয়। এটা অনেকটাই প্র্যাকটিসের ব্যাপার। তাই যত বেশি প্র্যাকটিস করবেন তত বেশি এগিয়ে থাকবেন।
ড্রাইভিং শিখতে যা যা করবেন
ড্রাইভিং শেখার জন্য যা যা করতে হবে তা নিচের দিক নির্দেশনাগুলোর মাধ্যমে দেখে নিন।
- গাড়ির পার্কিং গিয়ার ঠিক আছে কিনা দেখে নিন। পার্কিং গিয়ার এবং নিউট্রাল গিয়ার একসাথে মানে গাড়িটি ফ্রি গিয়ারে আছে।
- ব্রেক চাপ দিয়ে চাবি দিয়ে গাড়ি স্টার্ট করুন। হালকা চাপ দিন এক্সিলেটরে।
- মিটার বোর্ড দেখে নিন, সব কিছু ঠিক আছে কিনা। তাপমাত্রা, ইন্ডিকেটর, লাইট ঠিকঠাকভাবে সচল কিনা নিশ্চিত করুন।
- গাড়িটিকে সামনে ও পেছনে নিয়ে যান, অবশ্যই তাকিয়ে নিশ্চিত হোন সবকিছু ঠিক আছে কিনা।
- হ্যান্ড ব্রেক লক করা কিনা পরীক্ষা করুন। লক করা থাকলে আনলক করুন।
- ডি (D) গিয়ারে দিন। স্টিয়ারিং শক্ত করে ধরুন, ব্রেক চাপ দিন ও ছেড়ে দিন, এরপর আস্তে করে এক্সিলেটরে চাপ দিন।
- গাড়ির গতি ৬০ কিমি পর্যন্ত রাখুন। নতুন শিখতে গিয়ে কখনোই বেশি গতিতে গাড়ি চালাবেন না।
- গাড়ি থামানোর জন্য এক্সিলেটর থেকে পা সরিয়ে ব্রেক আস্তে চাপুন।
- অটো গাড়ি হলে পেছনে নেয়ার জন্য রিয়ার গিয়ার ব্যবহার করুন।
- উঁচু বা নিচু রাস্তায় উঠা-নামার জন্য এল-ওয়ান ও এল-টু গিয়ার ব্যবহার করুন।
গাড়ি চালনা দ্রুত শেখার জন্য কিছু টিপস
- শুরুতে একা গাড়ি চালাতে যাবেন না, সাথে কাউকে রাখুন।
- গাড়ির সামনে P বা L প্লেট লাগান।
- দুর্ঘটনা এড়াতে ইন্ডিকেটর ব্যবহার করুন।
- অন্য যানবাহনের সাথে দূরত্ব বজায় রাখুন।
- সঠিকভাবে পার্ক করা শিখুন।
- গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করবেন না।
গাড়ি চালানোর কোর্স কোথায় শেখানো হয় এবং খরচ
আপনি ঢাকায় যেকোনো ড্রাইভিং ট্রেনিং সেন্টার থেকে ড্রাইভিং শিখতে পারবেন। তবে বাংলাদেশ ড্রাইভিং ইনস্টিটিউট সবচেয়ে ভালো। এছাড়াও প্রায় ৭৭টি অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। খরচ সাধারণত ৪০০০ থেকে ৭০০০ টাকার মধ্যে। এখানে ফুল কোর্স, মিডিয়াম কোর্স ও শর্ট কোর্স প্যাকেজে শেখানো হয়।
ড্রাইভিংয়ে দুর্ঘটনা এড়াতে যা করবেন না
ড্রাইভিং শেখা দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণ, আর এতে দক্ষ হতে হলে কিছু খুঁটিনাটি বিষয় মানতে হবে:
- গাড়ির টায়ার ব্রেক করলে কখনোই হঠাৎ ব্রেক করবেন না।
- পার্কিং ব্রেক ব্যবহার করুন, নাহলে অকেজো হয়ে যেতে পারে।
- সবসময় হেডলাইট জ্বালিয়ে রাখুন।
- রোড সাইন নয়, ট্রাফিকের দিকে বেশি নজর দিন।
- সাইড মিররে গাড়ির কোন অংশ যেন না দেখা যায় সেদিকে খেয়াল রাখুন।
পরিশেষে
উপরের পদ্ধতিগুলো কখনোই আপনাকে পুরোপুরি ড্রাইভিং শেখাবে না, যতক্ষণ না আপনি প্র্যাকটিক্যাল প্র্যাকটিস শুরু করছেন। হাতে কলমে শেখা আর তাত্ত্বিক জ্ঞান আলাদা ব্যাপার। তাই অভিজ্ঞ কারো কাছ থেকে শিখুন এবং নিয়মিত অনুশীলন করুন।