বাংলাদেশের আবহাওয়ায় সঠিক ইঞ্জিন অয়েলের ভিস্কোসিটি কীভাবে নির্বাচন করবেন

বাংলাদেশে গরম, আর্দ্রতা আর শীত - সবই একসাথে রয়েছে। তাই এমন একটি ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করতে হয়, যেটা বিভিন্ন তাপমাত্রায় ঠিকভাবে কাজ করতে পারে। বেশিরভাগ রাইডারই বিষয়টা ভুলে যায়; কিন্তু সঠিক ভিস্কোসিটি নির্বাচন করা বাংলাদেশে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভিস্কোসিটি ভুল হলে ইঞ্জিনের পারফরম্যান্স অনেকটাই কমে যেতে পারে।
বাংলাদেশের আবহাওয়ার জন্য কোন ভিস্কোসিটি ভালো
বাংলাদেশে এখন প্রায় সারাবছরই গরম থাকে। এই গরমে ইঞ্জিন অয়েল দ্রুত পাতলা হয়ে যায়। অনেকেই বুঝতে পারে না, কিন্তু বেশি গরম অয়েলের ঘনত্ব কমিয়ে দেয়। অয়েল খুব পাতলা হয়ে গেলে ইঞ্জিন সঠিক সুরক্ষা পায় না। আবার অয়েল খুব বেশি ঘন হলে ইঞ্জিন ভারী লাগে ও বেশি ফুয়েল খরচ করে।
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, বাংলাদেশের অনেক রাইডারই জানে না ইঞ্জিন অয়েলের বোতলে লেখা 10W-40 বা 20W-50 আসলে কী বোঝায়। প্রথম সংখ্যাটা (10W বা 20W) বলে দেয় শীত বা ঠান্ডায় অয়েল কত সহজে প্রবাহিত হয়। আর দ্বিতীয় সংখ্যাটা (40 বা 50) বোঝায় গরম ইঞ্জিনে অয়েল কতটা ঘন থাকবে। বাংলাদেশে অতিরিক্ত ঠান্ডা পড়ে না, তাই ‘W’ রেটিং খুব কম হওয়ার দরকার নেই। বরং দ্বিতীয় সংখ্যাটি আমাদের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ গরমেই আমরা বেশি রাইড করি। তাই 10W-40 এবং 20W-50 আমাদের দেশে খুবই কমন। 10W-40 একটু হালকা, তাই নতুন মডেলের বাইকগুলো ভালো কাজ করে। আর পুরনো বা বেশি ব্যবহৃত ইঞ্জিনে 20W-50 ব্যবহার করলে একটু বেশি সুরক্ষা পাওয়া যায়।
আপনি কিভাবে রাইড করেন সেটাও এখানে গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন জ্যামে কমিউট করেন? তাহলে আপনার ইঞ্জিন সাধারণের চেয়ে বেশি গরম থাকে। সেই ক্ষেত্রে একটু বেশি ভিস্কোসিটি ভালো। আর যদি হালকা রাইড করেন বা নতুন মডেলের বাইক হয়, তাহলে কম ভিস্কোসিটির অয়েলই যথেষ্ট। যদি আপনার বাইক মডিফাই করা থাকে বা অ্যাগ্রেসিভ রাইড করেন, তাহলে অবশ্যই বেশি হিট রেজিস্ট্যান্সের অয়েল ব্যবহার করবেন। সম্পূর্ণ সিন্থেটিক অয়েল একই ভিস্কোসিটিতে মিনারেল অয়েলের চেয়ে তাপ ভালোভাবে পরিচালনা করে।
অনেকেই যে ভুলটা করে, তা হলো ম্যানুয়াল না পড়ে যেটা জনপ্রিয় সেটাই কিনে ফেলে। ম্যানুয়ালে আপনার বাইকের জন্য কোন ভিস্কোসিটি সবচেয়ে ভালো কাজ করবে সেটা স্পষ্টভাবে লেখা থাকে। তাই সেই রেঞ্জের মধ্যেই থাকুন।
নতুন রাইড শুরু করার পর আমি নিজেও একটি ভুল করেছিলাম। তা হলো অন্যরা যে অয়েল ব্যবহার করেছিল, সেটাই নিয়েছিলাম। পরে বুঝতে পারি, সব বাইকের কন্ডিশন, বয়স এবং রাইডিং স্টাইল এক নয়। তাই অন্যের পছন্দ আপনার বাইকের জন্য সঠিক নাও হতে পারে।
পরিসংহার
আশা করছি এখন বুঝতে পারছেন কীভাবে বাংলাদেশে সঠিক ইঞ্জিন অয়েলের ভিস্কোসিটি নির্বাচন করবেন। এমন অয়েল ব্যবহার করুন যেটা ঠান্ডা স্টার্টে সহজে প্রবাহিত হয়, আবার ইঞ্জিন গরম হলে যথেষ্ট সুরক্ষাও দেয়। এমন ছোট ছোট সিদ্ধান্ত ইঞ্জিনকে দীর্ঘদিন ভালো রাখে। আর হ্যাঁ, অবশ্যই ম্যানুয়াল পড়তে ভুলবেন না।
সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
১. বাংলাদেশে বাইকের জন্য সঠিক ইঞ্জিন অয়েল ভিস্কোসিটি কোনটি?
10W-40 বাংলাদেশে সবচেয়ে কমন, কারণ এটা গরম আর হালকা শীত - দুটিতেই ভালো কাজ করে।
২. 20W-50 ইঞ্জিন অয়েল কী বেশি ঘন?
না, এটি পুরনো বা বেশি ব্যবহৃত ইঞ্জিনে ভালো কাজ করে। নতুন ইঞ্জিনে সাধারণত 10W-40 বেশি ভালো কাজ করে।
৩. শীতে কী খুব কম ‘W’ রেটিং-এর অয়েল ব্যবহার করতে হয়?
বাংলাদেশে খুব বেশি ঠান্ডা পড়ে না। তাই 10W রেটিং এখানে যথেষ্ট।
৪. ভুল ভিস্কোসিটি কি মাইলেজ কমায়?
হ্যাঁ। খুব ঘন অয়েল ফ্রিকশন বাড়ায় এবং খুব পাতলা অয়েল কম সুরক্ষা দেয়। তাই দুটিতেই মাইলেজ কমে।
৫. আমার বাইকের জন্য কোন ভিস্কোসিটি ঠিক হবে কীভাবে বুঝবো?
এইক্ষেত্রে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উপায় হলো - বাইকের সাথে দেয়া ম্যানুয়াল দেখা।







































