আপনার মোটরসাইকেলের মাইলেজ ও এফিশিয়েন্সি কীভাবে বাড়াবেন

মোটরসাইকেল এখন আমাদের দৈনন্দিন যোগাযোগের অন্যতম অনুষঙ্গ। বাংলাদেশে গণপরিবহন সংকট এবং অসহনীয় যানজট পরিস্থিতির কারণে মোটরসাইকেল কেনার হার প্রতিনিয়ত বাড়ছে। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে, সব শ্রেণী-পেশার মানুষ মোটরসাইকেল ব্যবহার করেন। মোটরসাইকেল আপনার সময় এবং যাতায়াত খরচ বাঁচাতে পারে। তবে গত এক-দশকে জ্বালানি তেলের দাম প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। ক্রমান্বয়ে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে এখন অনেকেই মাইলেজ এবং এফিশিয়েন্সির ব্যাপারে সচেতন হচ্ছেন।
রেগুলার বাইক ব্যবহারে মাইলেজ এবং পারফরম্যান্স কমতে থাকে। তবে রেগুলার মেইনটেন্যান্স, টায়ারের চাপ ঠিক রাখা, স্বাভাবিক গতিতে রাইডিং, ভালো ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার এবং কিছু কৌশল মেনে চললে, মোটরসাইকেলের মাইলেজ এবং এফিশিয়েন্সি বাড়ানো সম্ভব। এই ব্লগে আপনার মোটরসাইকেলের মাইলেজ ও এফিশিয়েন্সি কীভাবে বাড়াবেন, সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা, টিপস ও পরামর্শ তুলে ধরা হয়েছে।
মোটরসাইকেলের মাইলেজ ও এফিশিয়েন্সি বাড়ানোর কার্যকর উপায়
১. নিয়মিত সার্ভিসিং এবং সঠিক মেইনটেন্যান্স
মোটরসাইকেলের মাইলেজ এবং পারফরম্যান্স বাড়াতে নিয়মিত সার্ভিসিং এবং সঠিক মেইনটেন্যান্স জরুরি। নিয়মিত ইঞ্জিন পার্টস, ব্রেকিং সিস্টেম, টায়ার, এয়ার ফিল্টার, ইত্যাদি পরিষ্কার করতে হবে। সময়মতো ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন এবং চেইন লুব্রিকেট করা উচিত। উচ্চমানের সিন্থেটিক অয়েল ব্যবহার এবং এয়ার ফিল্টার রেগুলার পরিষ্কার করলে মাইলেজ কিছুটা বাড়বে। রেগুলার স্পার্ক প্লাগ এবং টায়ার প্রেশার পরীক্ষা করুন। ইঞ্জিন কার্বুরেটর ফুয়েল সিস্টেমের হলে, নিয়মিত কার্বুরেটর পরিষ্কার করুন। ফুয়েল ইনজেকশন সিস্টেম হলে ফুয়েল ইনজেক্টর রেগুলার চেক করুন। আপনার বাইকের ম্যানুয়াল/সার্ভিস ইন্টারভাল মেনে চলুন অথবা একজন দক্ষ মেকানিকের সাহায্যে টিউন করলে ইঞ্জিন ভালো অবস্থায় থাকবে এবং জ্বালানি খরচ কমবে।
২. রাইডিং হ্যাবিট পরিবর্তন করুন
বাইক থেকে ভালো মাইলেজ পেতে রাইডিং হ্যাবিট পরিবর্তন করুন। স্বাভাবিক স্পিডে বাইক চালানোর অভ্যাস করুন। বেশি স্পিড, ঘনঘন ব্রেক এবং এক্সিলারেশনের ফলে বেশি জ্বালানি কনজিউম হয়। সঠিক গিয়ারে রাইড করুন এবং এগ্রেসিভ থ্রটলিং এড়িয়ে চলুন। ধীরে ধীরে স্পিড বাড়ান এবং গিয়ার পরিবর্তন করুন। স্বাভাবিক স্পিডে বাইক চালালে, মাইলেজ অনেকটা বাড়ে, ইঞ্জিনের উপর প্রেশারও কম পরে। বাইক চালানোর সময় অযথা ক্লাচ লিভার চেপে রাখবেন না।
৩. ভালো মানের ফুয়েল এবং নির্ধারিত ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করুন
খরচ বাঁচাতে খোলা ফুয়েল ব্যবহার করবেন না, এগুলোতে ভেজাল মেশানো থাকে। অপরিশোধিত জ্বালানি ইঞ্জিনকে দুর্বল করে এবং এতে মাইলেজও কমে যায়। অনুমোদিত পেট্রোল স্টেশন থেকে জ্বালানি কিনুন। আপনার বাইকের জন্য প্রস্তাবিত নির্ধারিত গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করুন। ভালো মানের ফুয়েল এবং ইঞ্জিন অয়েল, মাইলেজের পাশাপাশি ইঞ্জিনের ডিউরেবিলিটি বাড়ায়।
৪. আপনার বাইকের জন্য প্রস্তাবিত টায়ার ব্যবহার করুন
সঠিক টায়ার মোটরবাইকের মাইলেজ বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত টায়ার প্রেশার চেক করুন। টায়ার প্রেশার কম থাকলে, ইঞ্জিনে চাপ বাড়ে, তাই ফুয়েল কনজাম্পশন বাড়ে। এছাড়া টায়ারের গ্রিপ ক্ষয় হলে ফুয়েল এফিশিয়েন্সি হ্রাস পায়।
মোটরসাইকেলের জ্বালানি সাশ্রয় ও মাইলেজ বাড়ানোর আরও কিছু কৌশল
১. অতিরিক্ত ওজন এড়িয়ে চলুন, এটি মাইলেজ কমায়।
২. লাইটওয়েট অ্যালয় হুইল এবং এক্সহস্ট সিস্টেম ব্যবহার করুন।
৩. রেগুলার ব্যাটারি চেক করুন।
৪. দীর্ঘ ট্রাফিকে ইঞ্জিন অফ রাখুন।
৫. প্রিমিয়াম সিন্থেটিক লুব্রিকেন্ট ব্যবহার করুন।
৬. রোদে বেশিক্ষণ বাইক পার্কিং করবেন না, এতে জ্বালানি বাষ্পীভূত হয়।
৭. উইন্ডশিল্ড এবং ফেয়ারিং বডি কিট ইনস্টল করুন। এগুলি স্থির গতিতে বাতাসের চাপ কমিয়ে মাইলেজ বাড়াতে সাহায্য করে।
পরিশেষে
মোটরবাইকের মাইলেজ শুধুমাত্র ইঞ্জিন পাওয়ারের উপর নির্ভর করে না। রেগুলার মেইনটেন্যান্স এবং সঠিক ড্রাইভিং হ্যাবিট মেনে চললে মোটরবাইকের মাইলেজ এবং এফিশিয়েন্সি অনেকটা বাড়ানো সম্ভব। এতে মাইলেজ বাড়ার পাশাপাশি, ইঞ্জিন পারফরম্যান্স ভালো থাকে, এবং পরিবেশ দূষণও অনেক কমে যায়। নির্দিষ্ট সময় পরপর সার্ভিসিং, এবং টায়ারের প্রেশার ঠিক রাখলে, দীর্ঘমেয়াদে ইঞ্জিন এফিশিয়েন্সি এবং ডিউরেবিলিটি বাড়ে। এই ব্লগের টিপস মেনে বাইকের নিয়মিত যত্ন নিন এবং সচেতন ভাবে বাইক চালান। এতে বাইকের জ্বালানির অপচয় কমবে, আপনার রাইডিং হবে আরও নিরাপদ এবং স্বাচ্ছন্দ্যময়।
সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
১. মোটরসাইকেলের মাইলেজ এবং এফিশিয়েন্সি কমার প্রধান কারণগুলো কী কী?
রেগুলার মেইনটেন্যান্স না করা, টায়ারের চাপ ঠিক না রাখা, স্বাভাবিক গতিতে রাইডিং না করা, ভালো ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার না করা, এয়ার ফিল্টার পরিষ্কার না রাখা, ইত্যাদি কারণে মাইলেজ এবং এফিশিয়েন্সি কমে যায়।
২. টায়ারের প্রেশার কম থাকলে মাইলেজের ওপর কেমন প্রভাব ফেলে?
টায়ারে বাতাস কম থাকলে ফ্রিকশন এবং রোলিং রেজিস্ট্যান্স বেড়ে যায়। ফলে ইঞ্জিনের উপর চাপ বেড়ে যায়, জ্বালানি বেশি পুড়তে থাকে।
৩. ভালো মাইলেজ পেতে কত স্পিডে বাইক চালানো উচিত?
সাধারণত ৪০-৬০ কিমি/আওয়ার স্পিডে মোটরবাইক চালালে স্বাভাবিকের চেয়ে মাইলেজ পাবেন। এই স্পিডে ইঞ্জিনে প্রেশার কম পরে।
৪. কতদিন পরপর ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করা উচিত?
আবহাওয়া এবং পরিবেশ দূষণের উপর ভিত্তি করে ১,০০০ থেকে ১,৫০০ কিমি পরপর ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করা উচিত। আপনার বাইকের জন্য প্রস্তাবিত নির্ধারিত গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করুন। এতে মাইলেজ এবং ইঞ্জিনের স্থায়িত্ব বাড়বে।
৫. ওভারলোডের কারণে মাইলেজ কি কমতে পারে?
হ্যাঁ, অতিরিক্ত যাত্রী কিংবা ওভারলোডের কারণে ইঞ্জিনের উপর চাপ পরে এবং মাইলেজ কমে যায়।







































