বাংলাদেশের রাস্তায় গাড়ির টায়ার দীর্ঘদিন ভালো রাখতে কীভাবে যত্ন নিবেন

গাড়ির মালিকদের কাছে গাড়ির টায়ার বেশ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নতুন গাড়ি কেনার পর অনেকেই তা জানেন না। তাই অনেকেই ভাবেন যে দূর থেকে দেখতে ঠিকঠাক লাগছে মানেই সব ঠিক আছে। কিন্তু এক বছর যেতে না যেতেই প্রথম টায়ারটা অসমভাবে ক্ষয় হয়ে যায়। টায়ারে কোনো পাংচার বা অন্য কোনো সমস্যা ছাড়াই। একমাত্র তখনই তারা বুঝতে পারেন যে গাড়ির টায়রের আলাদাভাবে কেয়ার করতে হয়।
বাংলাদেশের রাস্তায় টায়ার কেন দ্রুত ক্ষয় হয়
আমাদের রোডগুলোতে গর্ত, ভাঙা কর্নার ও হঠাৎ স্পিড ব্রেক - সবই আছে। বর্ষাকালে রোডে পানিও জমে থাকে। আবার অতিরিক্ত জ্যামের কারণে বারবার ব্রেক করতে হয়, যা টায়ারের ওপর অতিরিক্ত প্রেশার ফেলে। তাই গাড়িতে দামি টায়ার লাগিয়েও লাভ হয় না, তা ক্ষয় হয়ে যায়।
সঠিক টায়ার প্রেশার রাখা দরকার
গাড়ির টায়ারের বোধহয় সবচেয়ে বড় শত্রু ভুল টায়ার প্রেশার। প্রেশার কম রাখলে ফ্রিকশন বেড়ে যায়, ফ্রিকশন থেকে তৈরি হওয়া তাপে টায়ার ক্ষয়ে যায়। আবার প্রেশার বেশি রাখলে টায়ার শক্ত হয়ে ফেটে যেতে পারে। আমি আগে প্রায় কখনোই টায়ারের প্রেশার চেক করতাম না। যা ছিল ভুল। আমাদের দেশের অতিরিক্ত তাপমাত্রা ও দীর্ঘ ট্রাফিক জ্যামের কারণে মাসে অন্তত দুই বার টায়ারের প্রেশার চেক করা উচিত।
হুইল অ্যালাইনমেন্ট ও ব্যালেন্সিং
হুইল অ্যালাইনমেন্ট ঠিক না থাকলে টায়ার অসমভাবে ক্ষয় হয়। মূলত গর্তে পড়া বা ভাঙা রাস্তায় ওঠানামার সময় টায়ারের অ্যালাইনমেন্ট বদলে যেতে পারে। এখানে ব্যালেন্সিংও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বেশি গতিতে যদি স্টিয়ারিং ভাইব্রেট করে, তাহলে বুঝবেন টায়ারের ব্যালেন্স ঠিক নেই। তাই যত দ্রুত সম্ভব তা ঠিক করে নিবেন।
টায়ারের রোটেশন কেন জরুরি
শহরের রোডে বেশি ড্রাইভ করলে পেছনের টায়ারের তুলনায় সামনের টায়ার বেশি ক্ষয় হয়। তাই নির্দিষ্ট সময় পর পর টায়ারের রোটেশন দরকার। না হলে এক জোড়া টায়ার অনেক তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যাবে আর অন্য জোড়া ভালো থাকবে। সাধারণত প্রতি ৮,০০০ থেকে ১০,০০০ কিলোমিটার পর পর টায়ারের রোটেশন করলে ভালো রেজাল্ট পাওয়া যায়। এই অভ্যাস করার পর এখন আমার টায়ারের লাইফ স্প্যান আগের তুলনায় বেড়েছে।
ড্রাইভিং এর অভ্যাসে পরিবর্তন দরকার
টায়ারের জন্য ক্ষতিকর আরো কিছু বিষয় হলো হঠাৎ ব্রেক করা, অতিরিক্ত অ্যাক্সিলারেশন বা শার্প টার্ন নেয়া। এগুলো সাথে সাথে বোঝা যায় না তবে এগুলোর কারণে দীর্ঘমেয়াদে টায়ার দ্রুত ক্ষয় হয়। গর্ত দেখেও গতি না কমানো হচ্ছে টায়ারের জন্য আরো বেশি ক্ষতিকর। তাই টায়ার বেশিদিন ভালো রাখতে চাইলে এই অভ্যাসগুলো ছাড়তে হবে।
পরিসংহার
টায়ার কখনো একদিনেই নষ্ট হয় না। ছোট ছোট অবহেলার কারণেই ধীরে ধীরে টায়ার নষ্ট হয়ে যায়। বাংলাদেশের রোডগুলো যেহেতু বেশ চ্যালেঞ্জিং, তাই টায়ারের যত্ন নেয়াটাও এখানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এই ছোট পরিবর্তনগুলোই দীর্ঘমেয়াদে আপনার টাকা বাচানো এবং রোডে আপনাকে নিরাপদ রাখতে সাহায্য করবে।
সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
১. কত দিন পর পর টায়ারের প্রেশার চেক করা উচিত?
কোনো লং ড্রাইভে যাওয়ার আগে এবং মাসে অন্তত দুই বার টায়ারের প্রেশার চেক করা উচিত।
২. রাস্তার গর্ত কী টায়ার নষ্ট করে দেয়?
হ্যাঁ। গর্তে পরলে টায়ারের অ্যালাইনমেন্ট ও ব্যালেন্সিং নষ্ট হতে পারে।
৩. আমার গাড়ির হুইল অ্যালাইনমেন্ট ঠিক আছে কি না কীভাবে বুঝব?
গাড়ি একপাশে সরে যেতে থাকলে, বেশি স্পিডে স্টিয়ারিং ভাইব্রেট করলে বা টায়ার অসমভাবে ক্ষয় হলে বুঝবেন হুইল অ্যালাইনমেন্ট ঠিক নেই।
৪. কখন টায়ারের রোটেশন করা উচিত?
প্রতি ৮,০০০ থেকে ১০,০০০ কিলোমিটার পর পর টায়ারের রোটেশন করা উচিত।
৫. কী করলে টায়ার বেশিদিন ভালো থাকবে?
স্মুথ ব্রেক করা, হঠাৎ টার্ন নেয়া এড়ানো আর নিয়মিত যত্ন নিলে টায়ার অনেক দিন ভালো থাকে।







































