শীতকালে বাইকের চেইন, ক্যাবল ও লুব্রিক্যান্ট কীভাবে ভালো রাখবেন

শীতকালে আপনার বাইকের কিছুটা বাড়তি যত্ন প্রয়োজন। কারণ, তাপমাত্রা কমে গেলে তার প্রভাব আপনার পাশাপাশি আপনার বাইকের ওপরেও পরে। তাই এই সময়ে আপনার বাইকের চেইন, ক্যাবল ও ব্যবহৃত বিভিন্ন লুব্রিক্যান্টের একটু যত্ন নিলেই হয়। নইলে ঠান্ডা আবহাওয়ার প্রভাবে বাইকের পারফরম্যান্স কমে যেতে পারে। তাই চলুন জেনে নেওয়া যাক, এই শীতে কীভাবে আপনার বাইকের চেইন, ক্যাবল ও লুব্রিক্যান্টের যত্ন নিবেন।
চেইন পরিষ্কার রাখুন ও লুব্রিক্যান্ট ব্যবহার করুন
কম তাপমাত্রায় বাইক চেইনের লুব্রিক্যান্ট দ্রুত শুকিয়ে যায়। আবার ঠান্ডায় ধুলো ও ময়লা শক্ত হয়ে বাইকের চেইনে লেগে থাকে। এতে করে চেইনে ফ্রিকশন বেড়ে যায়। তাই শীতকালে কিছুদিন পর পর বাইকের চেইন কেরোসিন বা ভালো চেইন ক্লিনার দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
পরিষ্কার করার পর ভালো মানের চেইন লুব্রিক্যান্ট ব্যবহার করুন। চেইন সামান্য গরম থাকা অবস্থায় লুব্রিক্যান্ট অ্যাপ্লাই করলে তা ভালো ভাবে সব জায়গায় ছড়িয়ে যায়। তাহলে চেইন পরিষ্কার থাকবে ও ফ্রিকশন কমে গিয়ে বাইক আরও স্মুথ মনে হবে।
চেইনের টেনশন চেক করুন
অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, গরমকালের মতো শীতকালেও বাইকের চেইনের টেনশনে পার্থক্য দেখা দেয়। চেইন বেশি লুজ হয়ে পরলে শব্দ হবে, আবার বেশি টাইট হয়ে গেলে স্প্রকেটে অতিরিক্ত চাপ পরবে। বাইকের ম্যানুয়ালে দেয়া নির্দেশনা অনুযায়ী চেইনের টেনশন ঠিক আছে কি না তা দেখে নিন। এতে আপনার বাইকের চেইন অপ্রয়োজনীয় ক্ষয় থেকে রক্ষা পাবে।
ক্যাবল চেক করুন ও লুব্রিক্যান্ট ব্যবহার করুন
শীতকালে আসলে ক্লাচ ও ব্রেইকের ক্যাবল শক্ত হয়ে যায়। এতে করে লিভারে অতিরিক্ত চাপ দিতে হয় এবং রাইড আনকম্ফোর্টেবল হয়ে ওঠে। তাই ক্যাবলে ময়লা জমেছে কি না বা মরিচা ধরেছে কি না তা কিছুদিন পর পর চেক করুন।
আবার পুরো ক্যাবলের লাইনজুড়ে লুব্রিক্যান্ট ব্যবহার করলে সেটি সহজেই মুভ করতে পারে। তাই লিভার বেশি শক্ত মনে হলে সাথে সাথে লুব্রিক্যান্ট লাগিয়ে দিন। আপনার বাইকে টেফলন-লাইনড ক্যাবল ব্যবহার করা হয়েছে কি না দেখুন; এই ধরণের ক্যাবলে খুব হালকা লুব্রিক্যান্ট দিতে হয়।
লুব্রিক্যান্টেরও যত্ন প্রয়োজন
শীতকালে ইঞ্জিন অয়েল ও অন্যান্য লুব্রিক্যান্ট জমে যেতে পারে। জমে যাওয়া অয়েল বা লুব্রিক্যান্ট আসলে সমস্যা সমাধান না করে বরং তৈরি করে। যার কারণে ইঞ্জিনের পারফরম্যান্সের ওপর প্রভাব পরে। তাই শীতকালে ম্যানুফ্যাকচারারের নির্দেশনা অনুযায়ী কিছুটা পাতলা গ্রেডের তেল ব্যবহার করতে পারেন।
ম্যানুফ্যাকচারারের ম্যানুয়ালে দেয়া ভিস্কোসিটি রেঞ্জের লুব্রিক্যান্ট ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। ব্রেইক ফ্লুইড ও অন্যান্য লুব্রিক্যান্ট ঠিক আছে কি না সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
রাইডের আগে বাইককে গরম করে নিন
বাইরের তাপমাত্রা বেশি হলে বের হওয়ার আগে বাইক স্টার্ট করে ৩০ থেকে ৬০ সেকেন্ড গরম হতে দিন। এতে করে ইঞ্জিন অয়েল ভালোভাবে ছড়িয়ে পরবে ও চেইন-ক্যাবল নরম হবে। এই ছোট অভ্যাস ইঞ্জিন ও অন্যান্য পার্টসকে হঠাৎ অতিরিক্ত চাপ থেকে রক্ষা করবে।
পরিসংহার
শীতকালে অল্প কিছু সময় ব্যয় করে বাইকের চেইন, ক্যাবল ও লুব্রিক্যান্টের যত্ন নিলে বাইকের ওপর অতিরিক্ত চাপ পরে না এবং রাইডিং এক্সপিরিয়েন্স স্মুথ হয়। আবার এই অভ্যাসগুলো আপনাকে ভবিষ্যৎ-এর বাড়তি খরচ থেকেও রক্ষা করতে পারে। তাই শীতকালে ভালো রাইডিং এক্সপিরিয়েন্সের জন্য উপরে উল্লেখ করা বিষয়গুলো মেনে চলুন।
সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
১. শীতকালে কতদিন পর পর বাইকের চেইনে লুব্রিক্যান্ট দেয়া উচিত?
প্রতি ৩০০ থেকে ৪০০ কিলোমিটার রাইডের পর অথবা চেইন বেশি রুক্ষ বা শক্ত মনে হলে।
২. শীতকালে বাইকের ক্যাবল শক্ত মনে হয় কেন?
শীতকালে বাইকের ক্যাবলে ময়লা জমে যায় এবং লুব্রিক্যান্ট দ্রুত শুকিয়ে যায়, তাই ক্যাবল শক্ত মনে হয়।
৩. শীতকালে বাইকে কোন গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করা উচিত?
ম্যানুফ্যাকচারারের নির্দেশনা অনুযায়ী শীতকালের জন্য উপযোগী গ্রেডের তেল ব্যবহার করুন।
৪. বাইকের চেইনের টেনশন ঠিক আছে কি না কীভাবে বুঝবো?
চেইন যদি বেশি লুজ মনে হয় বা শব্দ করে, তাহলে কিছুটা টাইট করে নিন। সঠিক টেনশনের জন্য বাইকের ম্যানুয়াল চেক করুন।
৫. শীতকালে রাইডের আগে বাইক গরম করা কেনো জরুরী?
শীতকালে রাইডের আগে বাইক কিছুটা গরম হতে দিলে ইঞ্জিন অয়েল সঠিকভাবে প্রবাহিত হয় এবং ইঞ্জিন ও অন্যান্য অংশের ওপর হঠাৎ অতিরিক্ত চাপ পরে না।







































