রাতে হাইওয়েতে মোটরসাইকেল চালানোর ক্ষেত্রে কী কী সচেতনতা অবলম্বন করা জরুরি?

Humyra Sharmind Alam
time
6 মিনিটে পড়া যাবে

রাতে হাইওয়েতে মোটরসাইকেল চালানোর নিয়ম

রাতে হাইওয়েতে মোটরসাইকেল রাইডের সময় যেকোনো সমস্যা কিংবা দুর্ঘটনা এড়াতে আপনাকে বিভিন্ন দিকে খেয়াল রাখতে হবে। বাইক রাইডাররা প্রায়ই রাতে হাইওয়েতে বাইক রাইড করে থাকেন কোনো না কোনো প্রয়োজনে, অথবা শখের বসে। আমাদের দেশে প্রায়শই দেখা যায় তরুণ রাইডাররা মাওয়া হাইওয়েতে রাতে রাইড করতে যান। এর মধ্যে অনেক রাইডারেরই অভ্যাস থাকে রাতে হাইওয়েতে রাইড করার, আবার অনেকের কাছেই এক্সপেরিয়েন্সটি সম্পূর্ণ নতুন। তাই চলুন রাতে হাইওয়েতে মোটরসাইকেল চালানোর নিয়ম-গুলো জেনে নেইঃ

১. হেলমেট ব্যবহার করা

হাইওয়েতে মোটরসাইকেল চালানোর কৌশল-এর মধ্যে একটা হলো, ভালো মানের হেলমেট ব্যবহার করা। আপনি বাইক রাইডিং-এ যতো দক্ষ চালকই হোন না কেনো, একটা কথা সবসময় মনে রাখবেন সেইফ রাইডিং-এর জন্য হেলমেট ব্যবহার বাধ্যতামূলক। সচরাচর দেখা যায়, অনেকেই আমরা হেলমেট ব্যবহার করতে চাই না। অনেকেই মনে করেন হেলমেট একটা সুন্দর রাইডিং-এর অন্যতম বাধা, তাদের মতে হেলমেট পড়লে আশেপাশের সঠিকভাবে লক্ষ্য করা যায়না। অনেকের মতে, হেলমেট ব্যবহারের পর দেখা যায়, আপনার বাইকের মিটার ডিসপ্লে-এর তুলনায় বাইকের গতি কম মনে হয়। ব্যাপারটা হলো হেলমেট পড়ে থাকা অবস্থায় আপনার চারপাশের বাতাসের চাপের কারনে আপনি মাথায় একটা চাপ অনুভব করেন, যার ফলে আপনার মনে হয় গাড়ির গতি কম। আসলে এক্ষেত্রে আপনার একটা মাইন্ড-সেট তৈরি করতে হবে এবং নিয়মিত হেলমেট পড়ার অভ্যাস করতে হবে।

২. গতির উপর নিয়ন্ত্রণ

রাতে হাইওয়েতে মোটরসাইকেল চালানোর নিয়ম অনুযায়ী রাতে হাইওয়েতে বাইক রাইডিং-এর সময় গতির উপর নিয়ন্ত্রণ রাখাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। গতি অনিয়ন্ত্রিত হওয়ার কারনে প্রায় প্রত্যেকদিনই দুর্ঘটনার নিউজ আমরা সোশ্যাল মিডিয়া, টিভিতে দেখতে পাই। ‘অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালোনা’ - নিজেকে খুব দক্ষ প্রমাণ করতে চাওয়ার চেষ্টায় আপনি ঝোঁকের মাথায় রাতের অন্ধকারে গতি বাড়িয়ে চালিয়ে নিজেরই বিপদ ডেকে আনছেন। তাই, রাতে বাইক নিয়ে হাইওয়েতে স্পিড-শো করবেন না। মোটরসাইকেল চালানোতে সতর্কতা অবলম্বন করুন।

৩. ছো্ট খাটো গর্ত হতে সাবধান

অনেক সময় হাইওয়েতে মাঝে ছোট খাটো কিছু গর্ত থাকে, রাতে খুব একটা চোখেও পড়ে না। কিন্তু ঝুঁকি বিবেচনা করলে এগুলো মাঝে মাঝে ভালো বিপত্তি ঘটাতে পারে। এই ছোট খাটো গর্ত গুলোয় আপনার বাইকের চাকা পড়ে গেলে মুহূর্তের মাঝেই বাইকের কন্ট্রোল চলে যেতে পারে। তাই মোটরসাইকেল চালাতে সতর্কতা অবলম্বন করুন এবং এসব ছোট খাটো ব্যাপারে সাবধান হউন।

৪. বাতাসের চাপ

রাতে হাইওয়েতে বাতাসের চাপ অনেক বেশি থাকে এবং অনেক এলোমেলোভাবে বাতাস বইতে থাকে। যদি আপনার বাইকের নিয়ন্ত্রণজনিত কোনো সমস্যা থাকে তবে রাতে হাইওয়েতে বাইক চালাতে খুবই সাবধান থাকবেন। যদিও এখনকার সকল বাইক-ই প্রায় আধুনিক এরো ডিজাইন সম্বলিত, তারপরও আপনি যদি মনে করেন, বাতাসের চাপের কারনে বাইকের গতির হেরফের হতে পারে তবে সে অনুযায়ী ঝুঁকি বিবেচনা করে নিয়ন্ত্রণযোগ্য গতিতে বাইক চালাতে সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিচ্ছি।

৫. বাস/ট্রাক ওভারটেক

এটা সচরাচর দেখা যায়, বেশির ভাগ তরুন রাইডাররা রাতে হাইওয়েতে দূরপাল্লার বাস/ট্রাকগুলোর সাথে প্রতিযোগীতা করে। এটা বুদ্ধিহীনতারই পরিচয়। শুধু যে তারা নিজের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলে তা নয়, আশেপাশের রাইডারদেরও বিপদে ফেলে দেয়, আর এই কারনে বাইকার কিংবা পথচারীর মৃত্যুর খবর তো আছেই! ঝুঁকি বিবেচনা না করে কোনো কাজ করতে যাবেন না।রাতে হাইওয়েতে অবশ্যই খুবই সাবধান থাকবেন, বাস/ট্রাকের হেডলাইটের আলো দেখে দূরত্ব অনুমান করে বাইক চালাবেন। কোনো ভাবেই আগ বাড়িয়ে আপনি ওভারটেক করতে যাবেন না। একটা উক্তি না বললেই না “ছোট জিনিসের মোহে যে বড় কিছু হারাতে দুঃখবোধ করে না, সে আর যাই-ই হোক, শিক্ষিত নয়”, এইখানে ছোট জিনিস হলো “ওভারটেক করার প্রতিযোগিতা” আর বড় কিছু হলো “আপনার জীবন”। মোটরসাইকেল চালাতে সতর্কতা-গুলো মেনে চলবেন।

৬. স্পিড ব্রেকার লক্ষ্য করা

রাতে হাইওয়েতে মোটরসাইকেল চালানোর নিয়ম-এর মধ্যে আরেকটি বিষয় হলো রাতে হাইওয়েতে বাইক চালানোর সময় স্পিড ব্রেকারের দিকে নজর রাখবেন। অনেক সময়ই অনেক বাইকাররা স্পিড ব্রেকার খেয়াল করেন না, এমতাবস্তায় যদি স্পিড বেশি থাকে তবে দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে। তাই বলছি এরকম পরিস্থিতি মোকাবেলায় রাতে হাইওয়েতে স্পিড ব্রেকার ও ভাঙ্গা গর্ত গুলোর দিকে লক্ষ্য রেখে বাইক চালাবেন। হাইওয়েতে মোটরসাইকেল চালানোর কৌশল-গুলো আয়ত্তে আনুন।

৭. যানবাহনের গতিবিধি লক্ষ্য করে চলা

রাতে হাইওয়েতে মোটরসাইকেল চালানোর কৌশল-এর মধ্যে একটি হলো, হাইওয়েতে খেয়াল রাখতে হবে আপনার সামনে পিছনে কি ধরণের যানবাহন চলছে, গাড়ির গতি কেমন, কিভাবে চালাচ্ছে, কতোটা দূরত্বে অবস্থান করছে, এসব বিষয়। অনেকসময়ই দেখা যায়, আপনার গতি হয়তো ঠিক আছে, কিন্তু পাশের গাড়িটি গতির কন্ট্রোল হারিয়ে আপনার বাইকের সাথে ধাক্কা লাগিয়ে দেয়, এতে আপনি বড় একটা দুর্ঘটনার কবলে পড়তে পারেন। রাতের বেলা খেয়াল রাখা একটু কষ্টসাধ্য মনে হতে পারে, তারপরও সতর্ক থাকুন। ভারী যানবাহনের আশেপাশে, সামনে-পিছনে বাইক রাইড করার সময় নিজের ও পাশের গাড়ির গতিবিধির উপর খেয়াল রাখুন। রড, বাঁশ বহনকারী গাড়ি গুলো থেকে পর্যাপ্ত দূরত্ব রাখুন।

৮. রাতে হাইওয়েতে বৃষ্টি

বর্ষাকালে যেকোন সময় বৃষ্টি শুরু হতে পারে। হাইওয়েতে রাতে বৃষ্টি শুরু হওয়া মানে আপনি খুবই ঝামেলার মধ্যে পড়ে গেলেন, তাই না? অনেকেই হয়তো বৃষ্টির মাঝে বাইক চালিয়ে অভ্যস্ত। কিন্তু আপনি যদি অনভিজ্ঞ হোন, তবে কোথাও দাড়িয়ে বৃষ্টি কমার পর রাইd করাটাই ভালো। রাতে হাইওয়েতে মোটরসাইকেল চালানোর নিয়ম অনুযায়ী এটিই শ্রেয় হবে বলে মনে করি।বৃষ্টিতে আপনার বাইকের টায়ার বা গ্রিপিং অথবা রাস্তার সাথে চাকার সামঞ্জস্যতা ধরে রাখাটাই অনেক কঠিন ব্যাপার। ওয়েট-টায়ার থাকলে আপনার বাইকের স্পিড কমে যাবে আবার বেড়ে যাবে, এমন সমস্যা হবে আবার হাইওয়েতে গ্রিপিং সঠিকভাবে নাও হতে পারে। ঝুঁকি বিবেচনা-য় এটি গুরুত্বর দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। যেহেতু রাতে রাইড করছেন, উত্তম পরামর্শ এটাই হবে যে আপনি কোনো নিরাপদ স্থানে অবস্থান করুন এবং বৃষ্টি শেষ হলে আবার যাত্রা শুরু করুন। হাইওয়ের যেখানে সেখানে দাঁড়াবেন না, ছিনতাইকারীর কবলে পড়ার সম্ভাবনা আছে।

৯. রাস্তার বাঁক লক্ষ্য করে চলা

রাতে হাইওয়েতে মোটরসাইকেল চালানোর নিয়ম-এর মধ্যে আরেকটি হলো, রাতে হাইওয়েতে রাস্তার মাঝে থাকা টারনিং পয়েন্ট বা বাঁকগুলো দেখে চালাবেন। আপনার বাইকের ধরণ এবং কার্যক্ষমতা বুঝে এসব টার্নিং পয়েন্টগুলোর মাঝে টার্নিং কিংবা কর্নারিং করে জায়গাটুকু পার হবেন। তাড়াহুড়া করতে যাবেন না, বিশেষত পাহাড়ি বাঁকের ক্ষেত্রে। বাইকের চাকার আকৃতির উপরেও নির্ভর করে আপনি কীভাবে বাঁকগুলোতে টার্নিং করবেন। ধরুন “এফজেডএস” বাইকের টায়ার একটু গোল আকৃতি হবার কারনে এই বাইক দিয়ে আপনি সহজেই টার্নিং কিংবা কর্নারিং করে পার হতে পারবেন। আবার,ঝুঁকি বিবেচনা করলে অন্যান্য বাইক যেমন “পালসার” কিংবা “অ্যাপাচি” হলে ঝামেলায় পরতে পারেন, তাই বাঁক লক্ষ্য রাখবেন ও সাবধানে চালাবেন।

১০. হেডলাইট চেক করুন

হাইওয়েতে রাতের বেলায় আপনার হেডলাইট ভালো করে চেক করে পরে বাইক নিয়ে বের হবেন। এটি রাতে হাইওয়েতে মোটরসাইকেল চালানোর নিয়ম-এর মধ্যে অন্যতম। অবশ্যই স্বচ্ছ এবং ভালো মানের লাইট ব্যবহার করবেন। এতে করে ঝুঁকি অনেকটাই কমে যাবে। আরজিএম-এর তথ্য অনুযায়ী, ঝুঁকি বিবেচনা-য় দিনের তুলনায় রাতের বেলায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি দ্বিগুণ বেশি।আরও পড়ুন - হাইওয়েতে মোটরসাইকেল চালানোর নিয়ম ও কৌশল

আশা করি হাইওয়েতে মোটরসাইকেল চালানোর কৌশল-গুলো আয়ত্তে আনলে, রাতে হাইওয়েতে আপনার বাইক রাইডিং হবে আরও বেশি নিরাপদ। তাই হাইওয়েতে রাতে রাইড করার সম্পূর্ণ মজা উপভোগ করতে নিজ দায়িত্বে মোটরসাইকেল চালাতে সতর্কতা অবলম্বন করে বাইক চালান। বেপরোয়া ভাবে চালাতে গিয়ে নিজের জীবন হুমকির মুখে ফেলে দিবেন না। দিনের বেলা কিংবা রাতের বেলা যখনই হাইওয়েতে বাইক চালাবেন আশেপাশের সবকিছুর প্রতি ভালো করে নজর রেখে বাইক চালাবেন। মনে রাখবেন, “একটি দুর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না”।

অনুরূপ খবর

  • Driving Tips

    মোটরসাইকেলে গিয়ার শিফট করার ৫ টি সহজ ধাপ

    time
    5 মিনিটে পড়া যাবে
  • Driving Tips

    মোটরবাইকে মোটা টায়ার লাগানোর ভালো ও খারাপ দিক সম্পর্কে আলোচনা

    time
    3 মিনিটে পড়া যাবে
  • Driving Tips

    মোটরসাইকেল চালানোর সময় কীভাবে নিরাপদ ব্রেকিং করবেন

    time
    4 মিনিটে পড়া যাবে
  • Driving Tips

    বড় মোটরসাইকেল গ্রুপে সাথে ঘুরতে যাওয়ার সুবিধাসমূহ

    time
    4 মিনিটে পড়া যাবে
  • Driving Tips

    দীর্ঘ মোটরসাইকেল ভ্রমণে গ্রুপের আকার কি গুরুত্বপূর্ণ?

    time
    4 মিনিটে পড়া যাবে
  • Driving Tips

    বাংলাদেশে কি গাড়ি মডিফাই করা যায়?

    time
    3 মিনিটে পড়া যাবে
  • Driving Tips

    আপনার গাড়ির জন্য সেরা ইন্সুরেন্স কীভাবে বেছে নেবেন?

    time
    3 মিনিটে পড়া যাবে
  • Driving Tips

    গাড়ি ধোয়ার সঠিক নিয়ম

    time
    3 মিনিটে পড়া যাবে
  • Driving Tips

    গাড়ির ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশ: একটি বিস্তৃত সারসংক্ষেপ

    time
    4 মিনিটে পড়া যাবে
  • Driving Tips

    বাংলাদেশে গাড়ির জন্য লেনের নিয়মাবলী

    time
    3 মিনিটে পড়া যাবে

সর্বশেষ গাড়ির রিভিউ

  • Suzuki Alto K10 2015

    Hatchback

    ৳ 800K - 1.2M

  • Toyota Aqua 2014

    Hatchback

    ৳ 1.5M - 1.6M

  • Suzuki Swift 2017

    Hatchback

    ৳ 1.7M - 2.2M

  • Toyota Vitz 2017

    Hatchback

    ৳ 1.8M - 2.3M

  • Nissan Leaf 2014

    Hatchback

    ৳ 4M - 6M

  • Mitsubishi Montero 2015

    SUV & 4X4

    ৳ 6.5M - 8.6M

  • Suzuki Wagon R 2018

    Hatchback

    ৳ 750K - 1.1M

  • Honda Civic 2019

    Saloon & Sedan

    ৳ 3.5M - 4.5M

  • Land Rover Defender 2020

    SUV & 4X4

    ৳ 14M - 18M

  • Mitsubishi Lancer 2017

    Saloon & Sedan

    ৳ 2.5M - 3M

  • Toyota Axio 2016

    Saloon & Sedan

    ৳ 1.8M - 2.4M

  • Toyota Premio G Superior 2018

    Saloon & Sedan

    ৳ 2.3M - 3M

সর্বশেষ বাইকের রিভিউ

  • Hero Ignitor 125 2020 IBS

    ৳ 115.7K - 128.5K

  • Honda X-Blade 160 ABS

    ৳ 194.9K - 216.5K

  • Honda Livo 110 Drum

    ৳ 107.9K - 119.9K

  • Keeway TXM 150

    ৳ 161.1K - 179K

  • Suzuki Gixxer Monotone

    ৳ 182K - 192K

  • Suzuki Gixxer SF Matt Plus

    ৳ 315K - 350K

  • Yamaha R15 S

    ৳ 409.5K - 455K

  • Hero Hunk 150 R Dual Disc ABS

    ৳ 166.1K - 232K

  • TVS Apache RTR 165 RP

    ৳ 297K - 360K

  • Suzuki Intruder FI ABS

    ৳ 247.5K - 320K

  • Suzuki Bandit 150

    ৳ 288K - 320K

  • KTM RC 125

    ৳ 333K - 566K

hero

Bikroy এ মাত্র ২ মিনিটে আপনার গাড়ি বা মোটরবাইকের বিজ্ঞাপন দিন!