মোটর সাইকেল রাইডারদের নিরাপত্তার জন্য সেফটি গিয়ার

আপনি কি ছোটবেলা থেকেই সবচেয়ে আধুনিক ও স্বতন্ত্র একটি বাইকের মালিক হওয়ার স্বপ্ন দেখে আসছেন? আসলে ছোটবেলায় ভীষণ হাই-টেক আধুনিক বাইক, গাড়ি, এমনকি একটি বাড়ির মালিক হওয়ার স্বপ্ন দেখাটা খুব একটা অস্বাভাবিক নয়। আমাদের মধ্যে অনেকেই সেই স্বপ্নগুলো পূরণ করার পথে এগিয়ে যাই, কিন্তু বড় হতে হতে একটা সময় সেই স্বপ্নগুলো অধিক বাস্তবসম্মত জীবনের লক্ষ্যে পরিণত হয়ে যায়। কিন্তু ছোটবেলায় একটা জিনিস কখনও আমাদের চিন্তা করা হয়ে ওঠে না। তা হল নিরাপত্তা! হয়ত অনেকটা সেই কারণেই পূর্ণবয়ষ্ক হয়ে যাবার পরও আমরা নিরাপত্তা ব্যাপারটাকে ঠিক ভাবে গুরুত্ব দিই না। বাংলাদেশের একজন নতুন কিংবা অভিজ্ঞ বাইকার অথবা রাইডার হিসেবে, আমরা সব সময়ই এটা নিয়ে ভাবি যে আমাদের কেমন দেখাচ্ছে আর আমাদের মোটর সাইকেলটিকে কেমন দেখাচ্ছে। আমরা আমাদের বাইকিং স্টাইলের কথা মাথায় রেখে দারুণ সব পোশাক পড়ার ব্যাপারে অনেক বেশি মনোযোগী, অথচ যথাযথ মোটর সাইকেল গিয়ারের সাহায্যে নিরাপদ রাইডিং এর কথা চিন্তা করার সময়ই পাই না। তাহলে আপনি কোনটি চাইবেন? আপনার কি মনে হয় সম্পূর্ণ গিয়ার সহ পোষাক অর্থাৎ নিরাপদ রাইডিং কি সত্যিই জরুরী? আপনার কি কখনও এমন মনে হয়েছে যে মোটর সাইকেল গিয়ার ব্যবহার করে বাইকারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাটা কিছুটা অস্বস্তিকর বা অনাকর্ষণীয়? আজ আমাদের এই প্রতিবেদনে আমরা বাইকারদের নিরাপত্তার স্বার্থে তৈরি কিছু দারুণ আকর্ষণীয় মোটর সাইকেল গিয়ার সম্পর্কে জানবো, একই সাথে স্টাইল এবং আরামের দিকটাও মাথায় রাখবো, বিশেষ করে বাংলাদেশের রাস্তায় চলাফেরা করার জন্য!
যথার্থ মোটর সাইকেল গিয়ারের সাথে নিরাপদ রাইডিং
নিরাপদ রাইডিং হচ্ছে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার যা আমরা প্রায়ই খেয়াল করতে ভুলে যাই। এটা সত্যি যে মুক্তভাবে রাইডিং এর উত্তেজনার কোন তুলনা হয় না, কিন্তু নিরাপদ রাইডিং আপনাকে সম্ভাব্য বড়সড় ক্ষতির হাত থেকে বাঁচিয়ে দিতে পারে। আপনি যদি এমন একজন ব্যক্তি হন যার কাছে নিরাপত্তা গিয়ার তেমন ভালো লাগে না, কেননা সেগুলো পরে কোন আরাম নেই, তাহলে আপনি আপনার জন্য সেরা গিয়ার সেট খুঁজে পাবার কোন চেষ্টাই করছেন না। ক্রিকেটারদের কথা ভাবুন, তারা খেলার সময় বিভিন্ন রকম প্রোটেকশন যেমন প্যাড, হেলমেট ইত্যাদি ব্যবহার করে ক্রিকেট খেলেন এবং ভালো পারফর্মও করেন। গলির ক্রিকেটার হিসেবে এই এত সব এক্সেসরিজ পরতে খুব একটা ভালো না লাগলেও আপনি একজন প্রফেশনাল হিসেবে খেলতে গেলে সঠিক সরঞ্জাম ছাড়া খেলার কথা ভাবতেই পারবেন না।
একই ভাবে যথার্থ মোটর সাইকেল গিয়ার পরিহিত একজন রাইডার হিসেবে আপনি রাস্তার দিকে বেশি মনোযোগ দিয়ে চালাতে পারবেন, আর ছোটখাটো বিক্ষেপ যেমন বাতাসের ঝাপটা, চাপ, ধুলাবালি এবং অন্যান্য আবহাওয়ার সমস্যা, এসবের সময় আপনি নিরাপদ থাকবেন। আপনাকে ক্লান্তি, অবসাদ, দুর্বলতা ইত্যাদি সহজে কাবু করতে পারবে না, যার ফলে আপনি অধিক সময় নিরাপদভাবে বাইক চালাতে পারবেন। আর যদি কোন গুরুতর দুর্ঘটনা ঘটেও যায়, তাহলে অন্তত আপনি বড় ধরণের আঘাত পাওয়া থেকে নিরাপদে থাকতে পারবেন আর বেঁচে যাবেন। আপনি হয়ত দুর্ঘটনা একেবারে এড়িয়ে যেতে পারবেন না, কিন্তু সেরকম কিছু ঘটার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত থাকতে পারবেন এবং আঘাত কমিয়ে আনতে পারবেন। তরুণ প্রজন্মের জন্য মোটর সাইকেল হচ্ছে একটি স্টাইল অনুষঙ্গ এবং এর বাঁধ না মানা গতি আপনাকে দিতে পারে পরম স্বাধীনতা। কিন্তু বাংলাদেশের মত একটি দেশে রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ এবং বাইকারদের জন্য নিরাপত্তা বেশ বড় একটা চিন্তার বিষয়। বেশির ভাগ মানুষ আজকাল স্টান্টবাজি, রেস এবং অন্যান্য বিশেষ ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে মানুষের বেশি আগ্রহ দেখা যায়। নিরাপত্তা তাই সব সময়ই আগে আসা উচিত এবং যথাযথ মোটর সাইকেল গিয়ার ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি নিশ্চিন্ত মনে আপনার রাইডকে মসৃণ, নিরাপদ এবং উপভোগ্য করে তুলতে পারেন!
আরও দেখে নিন নতুন মোটরবাইক চালকদের জন্য নিরাপত্তামূলক পরামর্শ।
বাংলাদেশের রাইডারদের জন্য মোটর সাইকেল নিরাপত্তা গিয়ার এবং পোশাকের সম্পূর্ণ তালিকা
বাংলাদেশের রাস্তায় নিরাপদ রাইডিং এর জন্য আপনার ঠিক কোন গিয়ার এবং পোশাকগুলো প্রয়োজনীয় সেটা দেখার আগে চলুন জেনে নিই নিরাপত্তা গিয়ার কি এবং এটি আপনাকে কি কি সুবিধা দিতে পারে। মোটর সাইকেল গিয়ার হলো যেকোন কিংবা প্রত্যেকটি এমন বিশেষ ডিজাইনে তৈরি করা নিরাপত্তা সংক্রান্ত এক্সেসরিজ এবং পোশাক, যা মোটর সাইকেল চালানোর সময় আমাদের সবচেয়ে সংবেদনশীল ও নাজুক অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে সুরক্ষা দেয়। এই গিয়ার বাইকারদের নিম্নের বিভিন্ন উপায়ে নিরাপত্তা দিতে সক্ষম, যেমন:
- বাতাসের চাপ, ধুলাবালি, ময়লা অথবা বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচায়।
- গ্রীষ্ম কিংবা বর্ষা যেকোন আবহাওয়া সংক্রান্ত বিপত্তির সময় সহায়ক।
- খোলামেলা বাহন যেমন একটি মোটর সাইকেল চালানোর সময় অবসাদ এবং ক্ষয়ক্ষতির হার কমায়।
- মানবদেহের সংবেদনশীল ও নাজুক অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গুলোকে সম্ভাব্য ও সর্বোচ্চ সুরক্ষা দেয়।
- মাথা, মুখমণ্ডল, কাঁধ, পিঠ, বুক, কুনুই, হাঁটু, হাটুর নিচের অংশ, পায়ের পাতা এবং আরো বিভিন্ন অঙ্গের সুরক্ষা।
- সংঘর্ষ বা দুর্ঘটনার সময় যেকোন শারীরিক ক্ষয়ক্ষতি কিংবা আঘাতের পরিমাণ অনেকাংশে কমিয়ে আনে।
সুতরাং, নিরাপদ রাইডিং এর জন্য প্রয়োজনীয় সর্বজনীন এবং সবচেয়ে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা গিয়ার ও পোশাকসমূহ নিম্নরূপ:
মাথার জন্য: হেলমেট
হেলমেট জিনিসটা সত্যিই জীবন বাঁচাতে পারে! কেউ মোটর সাইকেল চালাচ্ছে অথচ হেলমেট পরেনি, এমনটা কেন যেন ভাবতেই ভয় করে… বিশেষ করে বাংলাদেশের ব্যস্ত রাস্তাগুলোয়, যেখানে বেশির ভাগ রাস্তার অবস্থা খুবই করুণ আর ভয়াবহ। স্টাইলের জন্য হোক কিংবা নিরাপত্তা, মার্কেটপ্লেসে পছন্দ করার মত বিভিন্ন রকম ডিজাইন এবং বিভিন্ন ধরণের হেলমেট পাওয়া যায়, যেমন:
- হাফ হেলমেট
- ফুল ফেস বা মুখ ঢাকা হেলমেট
- ওপেন ফেস বা মুখ খোলা হেলমেট
- মড্যুলার হেলমেট
- অফ-রোড হেলমেট
- ডুয়াল সাপোর্ট হেলমেট
স্বাভাবিক বা নিত্যদিনের পোশাক
বাইক চালানোর জন্য কি নির্দিষ্ট ধরণের কোন বিশেষ পোশাক পরা আবশ্যক? হ্যাঁ, অবশ্যই! পোশাক পছন্দ করার ক্ষেত্রে সব সময়ই আপনার আরামের কথা মাথায় রাখা উচিত, সাথে আবহাওয়ার অবস্থাও বিবেচনা করতে হবে। কিন্তু একজন বাইকার হিসেবে আপনাকে ‘নিরাপদ’ পোশাকের কথাও ভাবতে হবে। আপনার হাতকে রোদে পোড়ার থেকে বাঁচানোর জন্য কিছু, পায়ে হালকা পাতলা আঁচড় থেকে বাঁচানোর জন্য কিছু, ঝড়ো বাতাস, বৃষ্টি ইত্যাদি সব কিছুর জন্যই যথাযথ পোশাকের প্রয়োজন।
- স্টাইলিশ জ্যাকেট, বাতাস প্রতিরোধক কিংবা হালকা যে কোনো জ্যাকেট
- হাতা কাটা হালকা জ্যাকেট অথবা অন্যান্য এক্সেসরিজ যেমন মাফলার, স্কার্ফ
- লম্বা ফুল প্যান্ট
হাতের জন্য: গ্লাভস
একজোড়া গ্লাভস একজন বাইকারের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ ও কাজের এক্সেসরি যা কঠোর রাস্তায় চলাচলের জন্য এবং ট্র্যাফিক জ্যাম ও লং ড্রাইভের সময় বার বার ক্লাচ ও ব্রেক ব্যবহার করার ক্ষেত্রেও হাতের নিয়ন্ত্রণ উন্নত করতে সাহায্য করে।
- ফোমের গ্লাভস
- কাপড়ের গ্লাভস
- চামড়ার গ্লাভস
- আঙ্গুল খোলা গ্লাভস
- বাহুর জন্য হাতা বা স্লিভ
- হাতের গিঁটের সুরক্ষা সহ বাইকার গ্লাভস
- রোদে পোড়া থেকে বাঁচার জন্য পুরো হাতের মাস্ক বা গ্লাভস
পায়ের জন্য: বুটস
পায়ের জুতা বাইকারদের নিরাপত্তার ব্যাপারে বেশ অবহেলিত কিন্তু অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি মোটর সাইকেল গিয়ার।
- মোজা
- জুতা
- লোফার জুতা
- সেমি বুটস
- ফুল বুটস
চোখের জন্য: সানগ্লাস
একজন বাইকার হিসেবে আপনার চোখের দৃষ্টিকে আপনি কোনভাবেই অবহেলা করতে পারবেন না। বিশেষ করে বাংলাদেশের মত দেশে রাস্তার করুণ অবস্থার ক্ষেত্রে এই ব্যাপারটা বিশেষ ভাবে সত্যি।
- দিনে সূর্যের রশ্মি থেকে বাঁচার জন্য সানগ্লাস
- রাতের বেলায় স্বচ্ছ চশমা
- বৃষ্টি, ঝড়ো বাতাস কিংবা ঠাণ্ডার সময়ে গগলস
রাস্তায় চলাচলের সময় প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত নিরাপত্তা গিয়ার
মোটর সাইকেল চালানো আমাদের জন্য অন্যতম আনন্দদায়ক কাজগুলোর মধ্যে একটি এবং প্রায় প্রত্যেক বারই বাইকিং আমাদেরকে কিছুটা বাড়তি উত্তেজনা দেয়। কিন্তু এই সব কিছুর পেছনে বেশ কিছু সম্ভাব্য ঝুঁকি রয়ে যায়। রাস্তায় চলাচলের সময় নিরাপত্তা আমাদের কাছে বিশেষ অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত, কিন্তু মোটর সাইকেল চালানোর সময় এটা অনেক অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
১. আবহাওয়ার অবস্থা
বাংলাদেশের ভারী বর্ষণের ঋতু চলাকালীন সময়ে রাস্তাঘাট স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। একজন রাইডার হিসেবে আপনার উচিত সব সময় রেইঙ্কোট, প্যান্ট, অথবা অন্তত মাথা ঢাকার জন্য কোন ধরণের কভার সাথে রাখা।
২. সুরক্ষা এবং উপলক্ষ
সকল মোটর সাইকেল গিয়ারই ডিজাইন করা হয়েছে কোন না কোন বিশেষ ধরণের প্রোটেকশন বা সুরক্ষা দেয়ার জন্য, কিন্তু কোন দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে অন্যান্য সাধারণ নিরাপত্তা গিয়ারের কথাও চিন্তা ভাবনায় রাখা উচিত। পতন কিংবা সংঘর্ষের ক্ষেত্রে বাঁচার জন্য যেসব জিনিস ব্যবহার করা হয় সেগুলোই হলো প্রতিরক্ষামূলক নিরাপত্তা গিয়ার।
উপসংহার
এই প্রতিবেদনে আমাদের বিস্তারিত আলোচনার পর আশা করি আমাদের সবার মনে মোটর সাইকেল গিয়ার সংক্রান্ত সব রকম ভুল ধারণা ও বিভ্রান্তি কিছুটা হলেও দূরীভূত হয়েছে এবং এই প্রতিবেদনটি বাংলাদেশে মোটর সাইকেল চালানোর সময় যথাযথ নিরাপত্তা বজায় রাখার গুরুত্বটাও ভালোভাবে তুলে ধরতে পেরেছে।
আপনি যদি ভালো মোটর সাইকেল গিয়ার বা এক্সেসরিস খোঁজ করে থাকেন, তাহলে আজই ভিসিট করুন Bikroy.com-এ। সারা বাংলাদেশের শত শত নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্ত বিক্রেতাদের পক্ষ হতে হাজার হাজার পণ্যের বিজ্ঞাপন ব্রাউজ করুন আমাদের অনলাইন মার্কেটপ্লেসে। আজই খুঁজে নিন আপনার জন্য সেরা গিয়ার এবং রাইড করুন নিরাপদে!



































