বাংলাদেশের সেরা ৫টি হিরো কমিউটার বাইক সম্পর্কে আলোচনা
বাংলাদেশের মোটরসাইকেল বাজারে Hero MotoCorp-এর বাইকগুলো বিশেষ জনপ্রিয়। কম খরচে ভালো পারফরম্যান্স, কম মেইনটেনেন্স, এবং চমৎকার মাইলেজের কারণে Hero-এর কমিউটার বাইকগুলো সাধারণ মানুষের কাছে এক বড় ভরসার নাম। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সেরা পাঁচটি হিরো কমিউটার বাইকের ইঞ্জিন, পারফরম্যান্স, মাইলেজ, সাসপেনশন, গাড়ির আকার, ব্রেকিং সিস্টেম এবং জ্বালানি সাশ্রয়ের বর্ণনা দেওয়া হলো।চলুন আজকে জেনে নেই সেরা পাঁচটি হিরো কমিউটার বাইক নিয়ে বিস্তারিত-
১. Hero Splendor Plus
Hero Splendor Plus বাংলাদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় হিরো কমিউটার বাইকগুলোর একটি, যা এর সাদামাটা ডিজাইন, নির্ভরযোগ্যতা, এবং সহজলভ্যতার জন্য বিখ্যাত। এই হিরো বাইকটি অনেকদিন ধরেই সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন যাতায়াতের এক বিশ্বস্ত সঙ্গী হয়ে উঠেছে। Splendor Plus বাইকটিতে রয়েছে ৯৭.২ সিসি ক্ষমতার এয়ার কুলড, সিঙ্গেল সিলিন্ডার, ৪-স্ট্রোক ইঞ্জিন, যা ৮০০০ আরপিএম-এ ৮.২০ বিএইচপি শক্তি উৎপন্ন করতে সক্ষম। বাইকটির পারফরম্যান্স এক কথায় চমৎকার। শহরের রাস্তায় বা গ্রামের পথে, সব জায়গাতেই এটি স্বাচ্ছন্দ্যে চালানো যায়। এর সর্বোচ্চ গতি প্রায় ৭০ কিমি/ঘন্টা, যা দৈনন্দিন যাতায়াতের জন্য যথেষ্ট। Hero Splendor Plus বাইকটি তার অসাধারণ মাইলেজের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। এটি প্রায় ৭০-৭৫ কিলোমিটার প্রতি লিটার মাইলেজ দিতে সক্ষম, যা এটি কমিউটারদের কাছে খুবই বাজেটের হিসাবে খুব জনপ্রিয় করে তুলেছে। সাসপেনশন হিসেবে হিরো বাইকের মডেলটির সামনে রয়েছে টেলিস্কোপিক হাইড্রোলিক শক অ্যাবজর্ভার এবং পেছনে রয়েছে হাইড্রোলিক শক অ্যাবজর্ভার ইউথ সুইং আর্ম। এর ফলে রাস্তার উঁচুনিচু অসঙ্গতির মধ্যে দিয়েও আরামদায়ক রাইড নিশ্চিত করে। বাইকটির আকারের দিক থেকে বেশ ব্যালেন্সড, এর দৈর্ঘ্য ১৯৭০ মিমি, প্রস্থ ৭২০ মিমি এবং উচ্চতা ১০৪০ মিমি। ফলে শহরের যানজটপূর্ণ রাস্তায়ও এটি সহজে চলাচল করতে পারে। ব্রেকিং সিস্টেম হিসেবে সামনে এবং পেছনে ড্রাম ব্রেক থাকায় এটি যথেষ্ট কার্যকরী এবং নিরাপদ। সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন চলাচলের ক্ষেত্রে কম জ্বালানিতে বেশি পথ পাড়ি দেওয়ার উপযোগী বাইক হিসেবে Hero Splendor Plus নিঃসন্দেহে সেরা কমিউটার বাইকগুলোর মধ্যে অন্যতম। যদিও বাইকটি তে নেই কোনো অ্যান্টি থেফট লক।
২. Hero Glamour
Hero Glamour তার আধুনিক ডিজাইন এবং উন্নত প্রযুক্তির জন্য বাংলাদেশে সেরা হিরো বাইক ২০২৪ এর কাতারে আছে। বাইকটির শক্তিশালী ইঞ্জিন এবং উন্নত ফিচারগুলো এটিকে তরুণ এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে সমানভাবে জনপ্রিয় করে তুলেছে। এই বাইকটিতে রয়েছে ১২৪.৭ সিসি ক্ষমতার সিঙ্গেল সিলিন্ডার, এয়ার কুলড ইঞ্জিন, যা ৭৫০০ আরপিএম-এ ৯ বিএইচপি শক্তি এবং ৪০০০ আরপিএম-এ ১০.৩৫ এনএম টর্ক উৎপন্ন করতে সক্ষম। পারফরম্যান্সের ক্ষেত্রে Hero Glamour অত্যন্ত মসৃণ ও নির্ভরযোগ্য। এটি হাইওয়ে বা শহরের রাস্তা উভয় ক্ষেত্রেই ভালো পারফরম্যান্স দেয়। সর্বোচ্চ গতি প্রায় ৯৫ কিমি/ঘন্টা পর্যন্ত উঠে থাকে, যা দ্রুতগামী যাতায়াতের জন্য বেশ উপযোগী। এই বাইকটি প্রতি লিটার জ্বালানিতে প্রায় ৪৫ কিমি পর্যন্ত মাইলেজ দিতে পারে, যা একটি ১২৫ সিসি বাইকের জন্য বেশ ভালো। সাসপেনশন সিস্টেমে সামনে টেলিস্কোপিক শক এবং পেছনে হাইড্রোলিক শক অ্যাবজর্ভার যুক্ত রয়েছে, যা অসম বা খারাপ রাস্তায়ও মসৃণ চলাচল নিশ্চিত করে। Hero Glamour-এর দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং উচ্চতা বেস মানানসই যা এটিকে আরামদায়ক ও ব্যালেন্সড রাখে। ব্রেকিং সিস্টেম হিসেবে বাইকটিতে রয়েছে সামনের দিকে ডিস্ক ব্রেক এবং পেছনে ড্রাম ব্রেক, যা নিশ্চিত করে ভালো নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা। হিরো কমিউটার বাইক রিভিউ বিবেচনায় Hero Glamour একটি আধুনিক, শক্তিশালী এবং জ্বালানি সাশ্রয়ী বাইক, যা বাংলাদেশের গ্রাহকদের কাছে জনপ্রিয় কারণ এটি উচ্চ পারফরম্যান্স এবং ভালো মাইলেজের সমন্বয় করে।
৩. Hero HF Deluxe
Hero HF Deluxe বাংলাদেশের বাজারে আরেকটি জনপ্রিয় হিরো কমিউটার বাইক, যা এর সহজলভ্যতা এবং চমৎকার মাইলেজের কারণে গ্রাহকদের মধ্যে বিশেষভাবে পছন্দের। HF Deluxe বাইকটিতে ৯৭.২ সিসি ক্ষমতার এয়ার কুলড, সিঙ্গেল সিলিন্ডার, ৪-স্ট্রোক ইঞ্জিন রয়েছে, যা ৮০০০ আরপিএম-এ ৮.২০ বিএইচপি শক্তি উৎপন্ন করে। বাইকটির পারফরম্যান্স নির্ভরযোগ্য এবং আরামদায়ক, যা দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত। সর্বোচ্চ গতি প্রায় ৭০ কিমি/ঘন্টা পর্যন্ত যায়। এটি প্রতি লিটার জ্বালানিতে প্রায় ৫০ কিমি পর্যন্ত মাইলেজ দিতে পারে, যা এটিকে কম খরচে দৈনন্দিন যাতায়াতের জন্য আদর্শ করে তুলেছে। সাসপেনশনে সামনে টেলিস্কোপিক শক এবং পেছনে ২-স্টেপ অ্যাডজাস্টেবল শক রয়েছে, যা রাস্তায় সব ধরনের ধাক্কা সহজে সামলাতে সক্ষম। Hero HF Deluxe-এর আকার উচ্চতার সাথে খুবই ভারসাম্যপূর্ণ। এর ব্রেকিং সিস্টেমও অত্যন্ত কার্যকর, সামনে এবং পেছনে ড্রাম ব্রেক যুক্ত রয়েছে, যা নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করে। একটু সেকেলে আউটলুক হলেও এতে আছে ১২ ভোল্টের মেইন্টেনেন্স ফ্রি ব্যাটারি এবং ডিজিটাল আরপিএম মিটার। বাংলাদেশে কম খরচে দীর্ঘপথ পাড়ি দেওয়ার জন্য HF Deluxe অন্যতম সেরা একটি কমিউটার বাইক।
৪. Hero Passion X Pro
হিরো মটোকর্পের ২০১৯ সালে রিলিজ করা এই বাইকটি ১১০ সিসি বাইক সেগমেন্টের অন্যতম সেরা একটি হিরো কমিউটার বাইক। Hero Passion X Pro আধুনিক ডিজাইন এবং উন্নত ফিচারসমৃদ্ধ একটি কমিউটার বাইক, যা বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে জনপ্রিয়। এর স্টাইলিশ লুক, উন্নত ইঞ্জিন পারফরম্যান্স এবং ভালো মাইলেজের জন্য এটি বাংলাদেশে অন্যতম সেরা কমিউটার বাইক হিসেবে বিবেচিত হয়। Passion X Pro-তে রয়েছে ১১০ সিসি ক্ষমতার এয়ার কুলড, সিঙ্গেল সিলিন্ডার, ৪-স্ট্রোক ইঞ্জিন, যা ৭৫০০ আরপিএম-এ ৯.৩০ বিএইচপি শক্তি এবং ৫৫০০ আরপিএম-এ ৯ এনএম টর্ক উৎপন্ন করতে সক্ষম। এই বাইকের ইঞ্জিন পারফরম্যান্স অত্যন্ত মসৃণ এবং দ্রুত গতিতে চলার সময়ও এটি স্থিতিশীলতা ধরে রাখে। কারন বাইকটিতে ব্যবহার করা হয়েছে এর পূর্বসূরী Passion Pro এর রিফাইন্ড ইঞ্জিন। কমিউটার বাইক হিসেবে এর ইঞ্জিন যথেষ্ট পাওয়ারফুল এবং স্মুথ। সর্বোচ্চ গতি প্রায় ৯০ কিমি/ঘন্টা পর্যন্ত উঠতে পারে, যা দৈনন্দিন এবং দীর্ঘ যাত্রার ক্ষেত্রে কার্যকর। Passion X Pro প্রতি লিটার জ্বালানিতে গড়ে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার মাইলেজ দিতে সক্ষম, যা এটিকে জ্বালানি সাশ্রয়ী করে তোলে। এর সামনের সাসপেনশন হিসেবে রয়েছে টেলিস্কোপিক শক অ্যাবজর্ভার এবং পেছনে ৫-স্টেপ অ্যাডজাস্টেবল শক, যা রাস্তায় মসৃণ রাইড নিশ্চিত করে। এছাড়া ব্রেকিং সিস্টেমে সামনের দিকে ডিস্ক ব্রেক এবং পেছনে ড্রাম ব্রেক যুক্ত রয়েছে, যা দ্রুত গতিতে ভালো নিয়ন্ত্রণ প্রদান করে। Passion X Pro একটি স্টাইলিশ, শক্তিশালী এবং আরামদায়ক কমিউটার বাইক, যা বাংলাদেশের রাস্তায় মসৃণ এবং নির্ভরযোগ্য যাতায়াতের জন্য অন্যতম সেরা বিকল্প।
৫. Hero Super Splendor
Hero Super Splendor তার দীর্ঘস্থায়ীতা, শক্তিশালী ইঞ্জিন এবং অসাধারণ মাইলেজের কারণে বাংলাদেশের কমিউটার বাইকের মধ্যে বিশেষভাবে জনপ্রিয়। এটি একটি ভারসাম্যপূর্ণ বাইক যা শহুরে ও গ্রামীণ উভয় ধরনের রাস্তার জন্য উপযোগী। Super Splendor-এ রয়েছে ১২৪.৭ সিসি ক্ষমতার সিঙ্গেল সিলিন্ডার, এয়ার কুলড, ৪-স্ট্রোক ইঞ্জিন, যা ৭৫০০ আরপিএম-এ ১০.৬ বিএইচপি শক্তি এবং ৬০০০ আরপিএম-এ ১০.৬ ন্যানোমিটার টর্ক উৎপন্ন করে। এই বাইকটির পারফরম্যান্স অনেক স্থিতিশীল এবং দীর্ঘ যাত্রার জন্যও এটি কার্যকরী। সর্বোচ্চ গতি প্রায় ১০০ কিমি/ঘন্টা পর্যন্ত উঠে থাকে, যা দ্রুত গতিতে চলার জন্য আদর্শ। Hero Super Splendor বাইকটি প্রতি লিটার জ্বালানিতে প্রায় ৫০ কিমি পর্যন্ত মাইলেজ দিতে পারে। সাসপেনশনের ক্ষেত্রে সামনে রয়েছে টেলিস্কোপিক শক এবং পেছনে ৫-স্টেপ অ্যাডজাস্টেবল হাইড্রোলিক শক, যা খারাপ রাস্তায়ও আরামদায়ক রাইড নিশ্চিত করে। ব্রেকিং সিস্টেম হিসেবে সামনে এবং পেছনে ড্রাম ব্রেক রয়েছে, যা শহরের ব্যস্ত রাস্তায় নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করে। তবে এতে নেই কোনো এবিএস সিস্টেম। Hero Super Splendor তার শক্তিশালী ইঞ্জিন এবং ভালো জ্বালানি সাশ্রয়ের কারণে বাংলাদেশে অন্যতম সেরা হিরো কমিউটার বাইক হিসেবে বিবেচিত।
এই পাঁচটি হিরো কমিউটার বাইক বাংলাদেশের মোটরসাইকেল বাজারে বিশেষভাবে জনপ্রিয় কারণ তারা শক্তিশালী ইঞ্জিন, জ্বালানি সাশ্রয়ী মাইলেজ, এবং আরামদায়ক রাইডের একত্রে সমন্বয় করে। দৈনন্দিন যাতায়াতের জন্য নির্ভরযোগ্য এবং বাজেট-বান্ধব এই বাইকগুলো বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের জন্য আদর্শ।

































