২ - ৪ লক্ষ টাকায় রানার মোটরবাইক সম্পর্কে আলোচনা
বাংলাদেশের বাজেট-ফ্রেন্ডলি বাইকের বাজারে রানার বেশ চমৎকার কিছু মডেল এনেছে, যা বিভিন্ন ধরনের রাইডারের চাহিদা পূরণে সক্ষম। শহরের ব্যস্ত রাস্তায় স্বাচ্ছন্দ্যে চালানো হোক বা দীর্ঘ ভ্রমণে শক্তি ধরে রাখা; রানার মোটরবাইকগুলো সবক্ষেত্রেই নির্ভরযোগ্য পারফরম্যান্সের প্রতিশ্রুতি দেয়। Runner Knight Rider, Runner Turbo 125, Runner Bolt 165R, এবং Runner Hawk 200 – এই মডেলগুলো বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বিশেষভাবে তৈরি হয়েছে যাতে প্রতিটি রাইডার তার প্রয়োজনমতো সঠিক বাইকটি খুঁজে পান। শক্তিশালী ইঞ্জিন, ভালো মাইলেজ, আরামদায়ক সাসপেনশন, এবং মানসম্মত ব্রেকিং সিস্টেমের সমন্বয়ে তৈরি এই বাইকগুলো শুধু যে প্রতিদিনের যাত্রায় আস্থা এনে দিচ্ছে তা নয়, পাশাপাশি দামে সাশ্রয়ী হওয়ায় সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে রয়েছে। চলুন এই বাইকগুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-
১। Runner Knight Rider
বাংলাদেশের বাজারে ১,৪২,০০০ টাকা থেকে ১,৪৫,০০০ টাকার ভেতরে থাকা Runner Knight Rider রানারের ১৫০ সিসি ক্ষমতাসম্পন্ন একটি শক্তিশালী বাইক। বাইকটির ৪-স্ট্রোক, সিঙ্গেল-সিলিন্ডার এয়ার কুলড ইঞ্জিনটি ১১.৯২ কিলোওয়াট শক্তি উৎপাদন করে ৭৫০০ আরপিএম-এ, যা শহরের ভেতরে এবং বাইরে চালানোর জন্য উপযুক্ত। ইঞ্জিনের সাথে যুক্ত ৫-স্পীড গিয়ারবক্স এটিকে চালনার সময় অত্যন্ত মসৃণ অভিজ্ঞতা প্রদান করে। বাইকটির মাইলেজ ৪০-৪৫ কিলোমিটার প্রতি লিটার, যা নিয়মিত যাতায়াতের জন্য বেশ সাশ্রয়ী। বাইকটির আকর্ষণীয় এবং আধুনিক ডিজাইন যে কারও নজর কাড়তে সক্ষম। ডায়মন্ড ফ্রেমের চেসিসের তৈরি এই বাইকটির সামনের দিকে টেলিস্কোপিক সাসপেনশন এবং পিছনের দিকে মনোশক সাসপেনশন রয়েছে, যা উঁচুনিচু রাস্তায় আরামদায়ক রাইডিং নিশ্চিত করে। ব্রেকিং সিস্টেম হিসেবে সামনের দিকে সিঙ্গেল ডিস্ক ব্রেক এবং পিছনে ড্রাম ব্রেক সংযুক্ত রয়েছে, যা দ্রুত এবং নিরাপদে ব্রেক করার সক্ষমতা প্রদান করে। ১৬.৮ লিটার ফুয়েল ট্যাংক ক্ষমতা থাকায় এটি দীর্ঘ ভ্রমণের জন্যও উপযুক্ত। বাইকটির ওজন ১৪৩ কেজি হওয়ায় এটি চালানোর সময় বেশ ভারসাম্যপূর্ণ এবং স্থিতিশীল থাকে। তবে রানার মোটরবাইকের দাম অনুসারে ১৫০ সিসি ক্যাটাগরির অন্যান্য বাইকের তুলনায় এর পাওয়ার কিছুটা কম। পাশাপাশি এখনও হ্যালোজেন হেডlight ব্যবহার করা হয়েছে, যেখানে আধুনিক বাইকগুলোতে এলইডি ব্যবহৃত হচ্ছে। নেই কোনো অ্যান্টি থেফট লক। সে যাই হোক, Runner Knight Rider 150cc এর শক্তিশালী ইঞ্জিন, ভালো ব্রেকিং সিস্টেম এবং আরামদায়ক সাসপেনশন এটিকে দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য এবং হাইওয়ে রাইডিং-এর জন্য বাজারে এটিকে একটি আদর্শ পছন্দ করে তুলেছে।
২। Runner Turbo 125cc
এখন আমরা বাংলাদেশের একটি রানার মোটরবাইক এর জনপ্রিয় মডেল সম্পর্কে আলোচনা করব, যার নাম Runner Turbo 125। এটি রানারের একটি গুরুত্বপূর্ণ মডেল এবং বর্তমানে এর বাজারে বেশ চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই রানার মোটরবাইক এর দাম ১,২০,০০০ -১,২৫,০০০ টার ভেতর যা সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে বলে মনে করা হয়। Runner Turbo 125 বাইকে ১২৪.৬ সিসির এয়ার কুলড, ৪ স্ট্রোক এবং পেট্রোলচালিত ইঞ্জিন দেওয়া হয়েছে যা ৮৫০০ আরপিএম-এ সর্বাধিক ১১.২৬ কিলোওয়াট শক্তি এবং ৭০০০ আরপিএম-এ ১১ এনএম টর্ক উৎপন্ন করতে সক্ষম। বাইকটির ৫-স্পীড গিয়ারবক্স শহরের ভেতরে চালানোর জন্য যেমন ভালো, তেমনি দীর্ঘ ভ্রমণের ক্ষেত্রেও মসৃণ গিয়ার পরিবর্তনের সুবিধা প্রদান করে এবং এতে রয়েছে ওয়েট মাল্টি-প্লেট ক্লাচ। বাইকটির সর্বোচ্চ গতি ৯০ কিমি। রানার মোটরবাইকের দাম অনুসারে বাইকটির মাইলেজ ৫০-৫৫ কিমি প্রতি লিটার, যা এটিকে ফুয়েল সাশ্রয়ী করে তোলে। সামনের দিকে হাইড্রোলিক টেলিস্কোপিক সাসপেনশন এবং পিছনের দিকে কয়েল স্প্রিং হাইড্রোলিক সাসপেনশন থাকার কারণে এটি রাইডিংকে আরও আরামদায়ক এবং স্থিতিশীল করে তোলে। ব্রেকিং সিস্টেম হিসেবে, সামনে ডিস্ক ব্রেক এবং পিছনে ড্রাম ব্রেক রয়েছে, যা যেকোনো জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত ব্রেক করার জন্য কার্যকর। তবে পিছনের টায়ারটি আরেকটু চওড়া হলে গ্রিপিং ক্ষমতা বাড়ত। এছাড়া বাইকটিতে ১৫ লিটার ফুয়েল ট্যাংক থাকার কারণে এটি দীর্ঘ ভ্রমণের জন্যও যথেষ্ট কার্যকর। Runner Turbo 125cc-এর ভালো মাইলেজ, উন্নত গিয়ারবক্স এবং আরামদায়ক সাসপেনশন এটিকে বাজেটের মধ্যে একটি আদর্শ মোটরবাইক করে তুলেছে।
৩।Runner Bolt 165R
Runner Bolt 165R রানারের একটি প্রিমিয়াম এবং শক্তিশালী নেকড স্পোর্টস মোটরবাইক, যা তার পারফরম্যান্স এবং আকর্ষণীয় ডিজাইনের জন্য পরিচিত। বাইকটিতে ১৬৫ সিসি সিঙ্গেল-সিলিন্ডার, ৪-স্ট্রোক, এয়ার কুলড ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে যা ১৩.২০ কিলোওয়াট শক্তি উৎপাদন করে ৭৫০০ আরপিএম-এ। এই ইঞ্জিনটি দীর্ঘ সময় ধরে চালানোর জন্য শক্তিশালী এবং কার্যকর। ৫-স্পীড গিয়ারবক্স থাকায় বাইকটিকে আরও মসৃণভাবে পরিচালনা করতে সহায়ক করে, বিশেষ করে হাইওয়ে বা শহরের বাইরে। এই রানার মোটরবাইকটির মাইলেজ প্রায় ৩৮-৪০ কিমি প্রতি লিটার, যা বড় ইঞ্জিনের বাইকের জন্য যথেষ্ট সাশ্রয়ী। সামনের দিকে টেলিস্কোপিক ফ্রন্ট সাসপেনশন এবং পিছনে মনোশক সাসপেনশন থাকার কারণে বাইকটি উঁচুনিচু রাস্তা এবং কঠিন পরিবেশেও আরামদায়ক রাইডিং অভিজ্ঞতা প্রদান করে। ব্রেকিং সিস্টেম হিসেবে, Runner Bolt 165R বাইকটির সামনে ও পিছনের দিকে ড্রাম ব্রেক সংযুক্ত রয়েছে, যা নিরাপত্তা এবং দ্রুত ব্রেকিং ক্ষমতা নিশ্চিত করে। ১২ লিটার ফুয়েল ট্যাংক থাকার কারণে দীর্ঘ ভ্রমণের সময়ও চালকদের জ্বালানি ফুরিয়ে যাওয়ার চিন্তা করতে হয় না। ১৫০ কেজি ওজনের এই বাইকটি ভারসাম্যপূর্ণ এবং স্থিতিশীল। Runner Bolt 165R সম্পূর্ণ LED লাইটিং সেটআপের সাথে আসে। বাইকটির হেডলাইটে দুই ধাপের LED লাইট রয়েছে, যা উচ্চ এবং নিম্ন বিমের জন্য ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও, এর ডিজিটাল ইন্সট্রুমেন্ট ক্লাস্টারে স্পিড, আরপিএম, ফুয়েল গেজ, ওডোমিটার সহ সময়, গিয়ার পজিশন এবং ট্রিপ মিটারও দেখায়।
৪। Runner Hawk 200
Runner Hawk 200 বাইকটি বাংলাদেশের বাজারে একটি শক্তিশালী এবং স্টাইলিশ মডেল হিসেবে স্বীকৃত। এর 200cc সিঙ্গেল সিলিন্ডার, ৪-স্ট্রোক এয়ার-কুলড ইঞ্জিনটি ১৭ বিএইচপি শক্তি এবং ১৬ এনএম টর্ক প্রদান করে, যা এই বাইকটিকে চমৎকার পারফরম্যান্স পাওয়ার দেয়। বাইকটির ডিজাইন অত্যন্ত আকর্ষণীয়, যা বাইকটিকে আধুনিক রাইডারদের পছন্দের তালিকায় রাখে। Runner Hawk 200 বাইকটি আধুনিক স্পেসিফিকেশন এবং পারফরম্যান্সের মিশেলে গড়া। এই বাইকের মাইলেজ প্রায় ৪০-৪৫ কিমি/লিটার, যা এফিশিয়েন্ট ফুয়েল ব্যবহারের নিশ্চয়তা দেয়। সাসপেনশন সিস্টেমে সামনের দিকে টেলিস্কোপিক এবং পিছনে মনোশক রয়েছে, যা দারুণ কমফোর্ট প্রদান করে। এছাড়া, বাইকটির ব্রেking সিস্টেম সামনের এবং পিছনের উভয় চাকার জন্য ডিস্ক ব্রেক, যা নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। এছাড়া, এটি লং ড্রাইভের জন্য আরামদায়ক এবং শক্তিশালী পারফরম্যান্স প্রদান করে।
উল্লেখিত চারটি বাইক বাংলাদেশে বাজেট রানার বাইক ২০২৪ সালে এর মধ্যে সেরা কিছু বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হয়। এগুলো প্রতিটি মডেলই নির্ভরযোগ্য ইঞ্জিন পারফরম্যান্স, উচ্চ মাইলেজ, আরামদায়ক সাসপেনশন, এবং সাশ্রয়ী মূল্যে পাওয়া যায়। শহরের ব্যস্ত ট্রাফিক কিংবা দীর্ঘ দূরত্বের যাত্রায়, এই বাইকগুলো প্রতিদিনের যাতায়াতের জন্য আদর্শ।

































