মোটরসাইকেলের ইমার্জেন্সি ব্রেক – কী, কেন, এবং কখন প্রয়োজন

Humyra Sharmind Alam
time
11 মিনিটে পড়া যাবে
feature image

রাস্তায় চলাচলকারী যেকোনো যানবাহনের জন্য ব্রেকিং সিস্টেম খুব জরুরি একটি বিষয়। ইমার্জেন্সি ব্রেক একটি দরকারি স্কিল যা প্রত্যেক চালকের জানা জরুরি। জরুরী ব্রেক হলো খুবই নূন্যতম সময়ের মধ্যে, নূন্যতম দূরত্বে বাইক থামিয়ে ফেলা। বাইক বা গাড়ি চালাতে জানা যতটা সহজ, ঠিক মতো থামাতে জানা বা ব্রেক করতে জানা ততোটাই কঠিন। এজন্যে অনেক প্র্যাক্টিসের প্রয়োজন হয়। দুর্ঘটনা হঠাৎ করেই হয়, ইমার্জেন্সি সিচুয়েশন হুট্ করেই আসে। বাইক চালানোর সময় দুর্ঘটনা এড়ানো এবং ইমার্জেন্সি সিচুয়েশন হ্যান্ডেল করার জন্য ইমার্জেন্সি ব্রেকিং প্রাকটিস করা প্রয়োজন। কারণ মাঝে মাঝে জীবন মৃত্যুর সীমারেখা হয়ে যায় ইমারজেন্সি মুহুর্তে সঠিক ব্রেকিং। তাই বাইক বা গাড়ি চালানো শেখার সাথে সাথে, সেটাকে কিভাবে থামাতে হয় তাও শিখতে হবে।সঠিক ভাবে ব্রেক করতে পারলে আপনার জীবন বাঁচবে, রাস্তায় চলাচলকারী মানুষজনও নিরাপদ থাকবে। এই ব্লগে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে মোটরসাইকেলের ইমার্জেন্সি ব্রেক কেন এবং কখন প্রয়োজন। এবং ইমার্জেন্সি বা জরুরী ব্রেক কিভাবে করবেন।

আপনি যদি বাইক চালনায় অভিজ্ঞ হন, তাহলে আপনার ধারণা আছে কিভাবে সেফটি নিশ্চিত করে সঠিকভাবে ব্রেক করতে হয়। এখনকার মডার্ন বাইক গুলোতে সেফটি নিশ্চিত করতে এবং সহজে ব্রেক কন্ট্রোল করার জন্য নানান ধরনের উন্নত প্রযুক্তির ব্রেকিং সিস্টেম সংযুক্ত করা হয়েছে। তবে ব্রেকিং সিস্টেম যতই হাই-কোয়ালিটির হোক না কেন, বাইকার যদি বাইকের ব্রেক কন্ট্রোল করতে না জানে তাহলে তা টোটালি ভ্যালুলেস। ব্রেকের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হয়, দক্ষ হতে হয়। অনেক সময় অভিজ্ঞ চালকদেরও ইমার্জেন্সি ব্রেক করতে ভুল-চুক হয়ে যায়। যেকোনো ইমার্জেন্সি সিচুয়েশনে বাইক কন্ট্রোল, অর্থাৎ দুর্ঘটনা এড়াতে কেবলমাত্র ব্রেকিং সিস্টেম আপনাকে বাঁচাতে পারে। তাই সকল চালকদের ব্রেক ডিভাইস সম্পর্কে ক্লিয়ার আইডিয়া থাকতে হবে।

মোটরসাইকেলের ইমার্জেন্সি ব্রেক কেন প্রয়োজন

আপনারা যারা মোটরসাইকেল চালান, তাদের ইমার্জেন্সি অর্থাৎ জরুরি প্রয়োজনে হার্ড ব্রেক করার দক্ষতা অর্জন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যতই সাবধানে থাকেননা কেন, রাস্তাঘাটে চলাচলে ইমার্জেন্সি সিচুয়েশন তৈরি হতেই পারে, তখন দক্ষতার সাথে মোটরসাইকেলের ইমার্জেন্সি ব্রেক বা হার্ড ব্রেক করতে না পারলে দুর্ঘটনা ঘটবেই। রাস্তাঘাটে ইমার্জেন্সি সিচুয়েশন হটাৎ করেই তৈরি হয়, বেশির ভাগ দুর্ঘটনা ঘটে ঠিক সময়ে ঠিকভাবে জরুরি ব্রেক করতে না পারার কারণে। মনে রাখবেন বাইকের স্পীড তোলা যেমন আর্ট, তেমনি সেটাকে পিন পয়েন্টে ব্রেক করা বা থামানোও আরো বেশী আর্টের পর্যায়ে পড়ে।

ইমারজেন্সি সিচুয়েশনে শুধু সামনের ব্রেকে মনোযোগ দেবেন। সাধারণত জরুরি মুহূর্তে আমাদের ইনস্টিংক্ট পেছনের ব্রেক চেপে ধরার জন্য প্ররোচিত করে। এবং এরকম পরিস্থিতিতে পরলে, আপনার সিটিং পজিশন চেঞ্জ করে ফেলবেন।

বিভিন্ন গাড়ি বা বাইকের স্পেসিফিকেশন বিভিন্ন রকম। কোনো মোটরসাইকেলের স্পীড বেশি, কোনোটার ওজন বেশি, তাছাড়াও রয়েছে অফরোড বাইক, হাইওয়ে বাইক, কমিউটার বাইক, ক্রুসার বাইক, ট্যুরিং বাইক, এরকম নানান পার্থক্য রয়েছে। এরকম বিভিন্ন পার্থক্যের কারনে বাইকের ব্রেকিং সিস্টেমও আলাদা আলাদা হয়ে থাকে। আবার ব্রেকিং সিস্টেমেও রয়েছে নানান পার্থক্য, যেমন, ডিস্ক ব্রেক, ড্রাম ব্রেক, এবিএস ব্রেক ইত্যাদি। বিভিন্ন পার্থক্যের কারনে বাইক ব্রেক করার সুনির্দিষ্ট কোনো নিয়ম নেই। কিন্তু ইমার্জেন্সি সিচুয়েশনে ইমার্জেন্সি ব্রেক করার প্রয়োজন হয়। এই ব্লগে এই জরুরি ব্রেক নিয়েই বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

ইমার্জেন্সি ব্রেক কি?

ব্রেক হল বাইক, গাড়ী বা যেকোনো মোটরযানের স্পীড কমাতে বা থামাতে সাহায্য করে। আমরা অনেকেই মনে করি ব্রেক মানে হাইড্রলিক এবং প্যাডের ব্যবহার। তা নয়, ব্রেকিং সিস্টেমের মধ্যে রয়েছে অনেক কিছু - ব্রেক লিভার, ব্রেক লিকুইড, ডিস্ক-ড্রাম ব্রেক, পিস্টন ব্রেক, ক্যালিপার্স ব্রেক ইত্যাদি।

ব্রেকিং সাধারণত দুই রকমের -

  • (১) অ্যাক্টিভ ব্রেকিং, ব্রেক লিভার চেপে এই ব্রেক ধরতে হয়। ডান হাত এবং ডান পা দিয়ে এই ব্রেক কন্ট্রোল যায়। প্রাকটিস করে অ্যাক্টিভ ব্রেকিংয়ে আপনাকে দক্ষ হতে হবে। অ্যাক্টিভ ব্রেকিং এর মূল অংশ গুলো হলো - ইনিশিয়াল বাইট, প্রগ্রেশন বাইট এবং স্টপিং পাওয়ার। আপনি যখন ব্রেক লিভারে প্রেসার দেবেন তখন সামনের চাকা মাটিতে আটকে যাবে, এই অবস্থাকে বলে ইনিশিয়াল বাইট। গতিশীল অবস্থায় হটাৎ ব্রেক করা হলে পিছলে বা স্কীড করতে পারে, প্রগ্রেশন বাইট হলো এই অবস্থা থেকে কতটুকু জোরালো ভাবে হ্যান্ডেল করতে পারে। আপনার বাইকের ব্রেকিং সিস্টেম কেমন এবং বাইকের ওজনের উপর ডিপেন্ড করে স্টপিং পাওয়ার কাজ করবে। যেমন ১২০ কেজি ওজনের বাইকে ডিস্ক ব্রেক, এবং এর কম ওজনের বাইকে ড্রাম ব্রেক ব্যবহার করা হয়।
  • (২) প্যাসিভ ব্রেকিং বা ইঞ্জিন ব্রেকিং, এই ব্রেক থ্রটল বা এক্সিলারেটর ছেড়ে দিলেই নিজে নিজেই শুরু হয়ে যায়। ব্রেক চাপার প্রয়োজন হয় না। আসল কথা এই ব্রেকিং হল, থ্রটল ছেড়ে দিলে বাইক নিজের ওজনের উপরে আস্তে আস্তে স্লো হয়ে যায়। তবে আপনি লো গিয়ারে থ্রটল ছেড়ে দেবেননা। কারণ লো গিয়ারে পাওয়ার খুব কম থাকে তাই প্যাসিভ ব্রেকিং ব্যবহারে আরপিএম ড্রপ করে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাই লো গিয়ারে রেখে, ক্লাচ ধরে একই সাথে থ্রটল ছেড়ে ব্রেক করুন।

ইমার্জেন্সি ব্রেকের রকমফের

বাইক, গাড়ি, সাইকেল সহ যে কোন মোটরযানের স্পীড কন্ট্রোল করার জন্য ব্রেক ব্যবহার করা হয়। এটি মোটরযানের একটি সেফটি সিস্টেম, যা কোনো গতিশীল যান্ত্রিক সিস্টেম থেকে এনার্জি অবসর্ব করে এর গতিকে বাধাপ্রাপ্ত করে। এই ব্রেকের রয়েছে বিভিন্ন রকমফের।

  • (১) ডিস্ক ব্রেক ডিস্ক ব্রেক ধরনের ব্রেকিং সিস্টেমে 'ব্রেক ক্যালিপার এবং ব্রেক রোটর' একসাথে সংযুক্ত থাকে। ব্রেক রোটর চাকার সাথে কানেক্টেড থাকে, এটি চাকার ঠিক মাঝখানে হাবের সাথে সংযুক্ত থাকে এবং এর সাথেই ঘুরতে থাকে। বাইকার ব্রেক প্যাডেলে প্রেসার দিলে, ক্যালিপার রোটরকে প্যাড দিয়ে চেপে ধরে। এই চাপে রোটor থেমে যায়, তাই চাকাও থেমে যায়। এখন সব ধরণের স্ট্যান্ডার্ড বাইকে ডিস্ক ব্রেক ব্যবহার হয়।
  • (২) ড্রাম ব্রেক এধরণের ব্রেকিং সিস্টেমে, বাইকের চাকার সাথে গোল ড্রাম শেপের মতো একটি ব্রেক সংযুক্ত থাকে। এখানে ড্রাম চাকার ঠিক মাঝে হাবের সাথে কানেক্টেড থাকে, রোটরের সাথে ঘুরতে থাকে। ড্রাম ব্রেক সিস্টেমে, ব্রেক পিস্টন এবং ব্রেক শু থাকে। বাইকার প্যাডেলে প্রেসার দিলে তা পিস্টনে চলে যায়, এবং ব্রেক শু ড্রাম এর দুই পাশে চেপে ধরে। এই চাপে রোটর থেমে যায়, তাই চাকাও থেমে যায়। তবে এধরণের ব্রেকিং সিস্টেমে, কম ব্রেক ফোর্স জেনারেট হয়। এটি মূলত বাইকের পেছনের চাকায় ব্রেকিংয়ে সাপোর্ট দেয়।
  • (৩) অ্যান্টি-লক ব্রেকিং সিস্টেম (এবিএস) এখনকার সব স্ট্যান্ডার্ড বাইকে এবিএস প্রযুক্তির ব্রেকিং ইন্সটল করা থাকে। দুর্ঘটনা প্রতিরোধে এই ব্রেকিং সিস্টেম অনন্য। এটি বাইকারদের অনেক সুরক্ষা দেয়। বাইক চালানোর সময় হঠাৎ সামনে অপ্রত্যাশিত কোন কিছু চলে আসতে পারে, তখন এই হঠাৎ সংঘর্ষ বা বিপদ এড়াতে এবিএস ব্রেকিং সিস্টেম ভালো কাজে আসে। হঠাৎ হার্ড ব্রেক করলে চাকা লক হয়ে যায়। এতে বাইক উল্টে যেতে পারে, অথবা স্কিড করতে পারে। এবিএস চাকা লকআপ হতে বাধা দেয়, এতে বাইক পিছলে যায় না।
  • (৪) ইমার্জেন্সি ব্রেক জরুরি প্রয়োজনে এই ব্রেক ব্যবহার করা হয়। ডিস্ক কিংবা ড্রাম ব্রেক ছাড়াই এই ব্রেকিং সিস্টেম আলাদা ভাবে কাজ করে। গাড়ি এবং বাইকের ইমার্জেন্সি ব্রেকিং সিস্টেম ভিন্ন। কোন কোন বাইকে জরুরি ব্রেকের জন্য আলাদা প্যাডেল থাকে, আবার কোন কোন বাইকে স্টিয়ারিং হুইলের সাথে কানেক্টেড থাকে এই ব্রেক লিভার।

ইমার্জেন্সি ব্রেক কখন প্রয়োজন

বাইকে দুইটি ব্রেক রয়েছে, একটি সামনে বা ফ্রন্ট হুইলে এবং আর একটি পেছনে বা রেয়ার হুইলে।

ফ্রন্ট হুইলের ব্রেক আপনি ডান হাত দিয়ে কন্ট্রোল করতে পারবেন এবং পেছনের চাকার ব্রেক আপনি ডান পা দিয়ে কন্ট্রোল করতে পারবেন। ইমার্জেন্সি ব্রেক করার সময় এই দুটি ব্রেক এক সাথে ধরতে হয়। এরকম হটাৎ ব্রেক করার প্রয়োজন হলে, আপনি যদি একটি ব্রেক ধরেন, তাহলে হয় বাইক উল্টে পরবে, না হলে স্কীড করবে। তাই হ্যান্ড ব্রেক এবং ফুট ব্রেক ব্যবহারে দক্ষ হবার চেষ্টা করুন।

জরুরী ব্রেকিং এর সময় একটি ব্রেক চাপলে যা হয় -

ফ্রন্ট হুইলের ব্রেক চাপলে, সামনের চাকা লক হয়ে, উল্টে পরে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে। কারণ তখন পিছনের চাকা থামেনি। রিয়ার হুইলের ব্রেক চাপলে, চাকা পিছলে পড়ে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে। কারণ তখন সামনের চাকা থামেনি। তবে বাইকে আন্টি লক ব্রেকিং সিস্টেম (এবিএস) থাকলে এরকম সমস্যায় পরবেন না। এবিএস আপনাকে জরুরী ব্রেকিংয়ে সাহায্য করবে।

ধরুন আপনি ইমার্জেন্সি সিচুয়েশনে পরেছেন, ওই সময় আপনি কোন ব্রেক ব্যবহার করে বাইক কন্ট্রোল করবেন। আপনার বাইকের ওজন, ব্রেক এর ধরণ (ডিস্ক/ড্রাম), ব্রেকিং সিস্টেম (এবিএস/হাইড্রোলিক), এসব বিষয় বিবেচনা করে ব্রেক ধরার চর্চা করুন। এতে আপনি নিজেই ডিসিশন নিতে পারবেন কিভাবে কোন পরিস্থিতে কোন ব্রেক ব্যবহার করলে বাইক নিয়ন্ত্রন করতে পারবেন। দুই ব্রেক একসাথে চেপে ধরার প্রাকটিস করে বাইক নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করবেন।

ইমার্জেন্সি সিচুয়েশনে শুধু ব্রেকিং সিস্টেমের উপর ভরসা করবেন না, রাস্তার কন্ডিশনও বিবেচনা করবেন। বাইকের গতি বেশি থাকলে পেছনের ব্রেকে খুব প্রেসার দেবেন না। ধীরে ধীরে প্রেসার দিয়ে দ্রুত নিয়ন্ত্রনে আনবেন। কারণ রিয়ার হুইলে বেশি প্রেসার দিলে চাকা লক হয়ে যেতে পারে।

মোটরসাইকেলের ইমার্জেন্সি ব্রেকিং টেকনিক –

টেকনিক (১) - ফ্রন্ট ব্রেক চেপে ধরে রাখা অবস্থায় ২/৩ গিয়ার ফেলে দিন। গিয়ার নিচে নামাতে নামাতে রিয়ার ব্রেকে প্রেসার দিন। আপনি ৫০-৬০ কিমি স্পীডের ওপরে গতিতে থাকলে এই টেকনিক ভালো কাজে দেবে। মনে রাখবেন শুস্ক রাস্তায় এটি কাজে দেবে, ভেজা রাস্তায় এই টেকনিক এপ্লাই করবেন না। এই সময় ক্লাচ ধরবেন না, কারণ ক্লাচ পেছনের চাকাকে ট্রান্সমিশন ফ্রি করে দেবে, তাই গতি কমার বদলে বেড়ে যাবে এবং চাকা স্কীড করবে।

টেকনিক (২) – বাইক কর্নারিং বা মোর ঘোরার সময় হটাৎ জরুরি ব্রেক করার প্রয়োজন হলে, প্রথমে বাইক সোজা করে ফ্রন্ট ব্রেক চেপে ধরবেন। এই টেকনিক ৪০-৫০ স্পিডে ভালো কাজে দেবে। কর্নারিংয়ে সিগন্যাল দিন এবং সামনের গাড়ি বা বাইক না বুঝে ওভারটেক করতে যাবে না। পিছনের ইনডিকেটর সিগন্যাল দিয়ে রাখবেন।

যদি এমন সিচুয়েশনে পরেন যে, সংঘর্ষ এড়ানো যাচ্ছে না, তখন বাইক হেলিয়ে পিছনের চাকাকে স্লাইড করে সামনে নিয়ে আসবেন। তখন সংঘর্ষ হলে বাইক সামনে চলে যাবে আপনি পিছনে থাকবেন। এতে অন্তত বড় দুর্ঘটনা এড়াতে পারবেন। এরকম সিচুয়েশনে বাইকে থেকে হাত, পা, বা আপনার সিটিং পজিশন ডিসপ্লেস হয়ে গেলে বাইক ধরে থাকবেন না, ছেড়ে দিবেন। সবসময় হেলমেট ব্যবহার করবেন, দুই হাত ভাঁজ করে মুখ এবং মাথা ধরে রাখবেন।

বাইক কর্নারিং বা মোর ঘোরার সময় যদি এমন সিচুয়েশনে পরেন যে, সংঘর্ষ এড়ানো যাচ্ছে না, তখন শরীর ছেড়ে দিন, বাইক দুই পায়ের মাঝে থেকে ছেড়ে দিন। বাইক ধরে থাকবেন না, ছেড়ে দিবেন। কর্নারিং বা মোর ঘোরার কখনোই বেশি স্পীডে যাবেন না। আপনার বাইকের টপ স্পীড থাকা অবস্থায় নরমাল ব্রেক করলে স্টপিং ডিস্টেন্স কতটুকু হয়, টপ স্পীড থাকা অবস্থায় ফুল ব্রেক ধরলে কতটুকু ডিস্টেন্সে পুরোপুরি থেমে যায়, এসব মেজারমেন্ট মাথায় রাখুন। সবচেয়ে বড় কথা এমন স্পীড তুলবেন না, যা আপনি কন্ট্রোল করতে সক্ষম না।

জরুরি ব্রেক করার কিছু বিজ্ঞানসম্মত সঠিক নিয়ম

অনেক চালক ব্রেক করার সময়, আগে ক্লাচ চেপে ধরেন। ইমার্জেন্সি সিচুয়েশনে ব্রেক করার সময়, ক্লাচ চেপে ধরলে পিছনের চাকা ট্রান্সমিশন ফ্রি হয়ে যায়, এতে গতি কমার বদলে বেড়ে যায়, এবং চাকা স্কীড করে। তবে স্পীড কম থাকলে, ক্লাচ চেপে ধরলে, তেমন কোনো সমস্যা হয় না। তাই ব্রেক করার সময়, ক্লাচ চেপে রাখলে চাকার রোটেশন স্পীড বাধাগ্রস্থ হয়। এতে হটাৎ চাকা থেমে গেলেও, ভরবেগের কারণে, বাইকটি জোরে ছুড়ে দেয়া বস্তুর মত চাকার ওপর দিয়ে সামনে যেতে চায়, কিন্তু চাকা থেমে থাকায় স্কিডিং করতে থাকে। এতে বাইকার ব্যালান্স হারিয়ে ফেলেন, দুর্ঘটনার সম্ভবনা সৃষ্টি হয়।

ব্রেক করার প্রথমে আপনি যতটা সম্ভব বাইক স্লো-ডাউন করবেন। বাইকের মোমেন্টাম অর্থাৎ ভরবেগ কমিয়ে আনতে হবে। এর মানে হল, আপনার এবং বাইকের ভর তো আর পরিবর্তন হবে না, তাই গতি যত বাড়বে ভরবেগ অর্থাৎ মোমেন্টাম, সমানুপাতে বাড়তে থাকবে। তাই ভরবেগ কমানোর জন্য বাইকের গতি কমাতে হবে। এখন প্রশ্ন হলো ব্রেক করার আগেই কিভাবে বাইকের গতি কমাবেন?

উত্তর হলো, আপনি বাইকের গতি বাড়িয়ে চালাচ্ছেন, তাই এক্সিলেটর অপোজিট দিকে টানলেই গতি কমে আসবে। তবে জরুরি ব্রেকের ক্ষেত্রে 'ইঞ্জিন ব্রেক' করতে হবে, খেয়াল রাখতে হবে ক্লাচ না ধরে এক্সিলেটর ছেড়ে দিতে হবে, এতে দ্রুত বাইক ইঞ্জিনের আর পি এম কমে আসবে। এই প্রসেসকেই 'ইঞ্জিন ব্রেক' বলে।

পদার্থ বিজ্ঞানের ভাষায় বললে, ইঞ্জিনের গতি জড়তাকে কাজে লাগিয়ে বাইকের গতি কমিয়ে আনতে হবে। আর পি এম কমে আসলে বাইকের ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়, তখন বাইক শুধু চাকার উপর চলতে থাকে। এই সময়ে চাকার গতির অনুপান বুঝে হাতের ও পায়ের ব্রেক চেপে বাইক দাঁড় করিয়ে ফেলবেন। সম্পূর্ণ কন্ট্রোলে আসার পর পায়ের ব্রেক ছেড়ে দেবেন, বাইক স্ট্যান্ডের উপর দাঁড় করবেন। তবে আপনি যদি ইঞ্জিন অফ করতে না চান তাহলে ক্লাচ চেপে রাখলেই হবে।

এই বিষয় গুলো মনে রেখে, বেশ কয়েকবার প্রাকটিস করলেই, পুরো ব্যাপারটাই আপনার আয়ত্বে এসে পরবে। ইমার্জেন্সি ব্রেকের সময় এই কাজটি করতে হয় ২/১ সেকেন্ডের কম সময়ের মধ্যেই। মাথায় রাখবেন, ড্রাইভিংয়ের সময় শুধু রাস্তার দিকেই মনোযোগ দেবেন, অমনোযোগী অবস্থায় ড্রাইভ করবেন না।

উপরের আলোচনাগুলো আপনার কাছে জটিল মনে হলে, সংক্ষেপে কিছু বিষয় মাথায় রাখবেন -

  • (১) ইমার্জেন্সি সিচুয়েশনে এক্সিলেটর সম্পূর্ণ ছেড়ে দেবেন, বাইক সম্পূর্ণ কন্ট্রোলে না আসা পর্যন্ত ক্লাচ চেপে ধরে থাকবেন না।
  • (২) এক্সিলেটর ছেড়ে দিলে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যাবে, তবে গতি থাকার কারণে চাকার উপর চলতে থাকবে। তখন হাতের এবং পায়ের ব্রেক ধরতে হবে। বাইক সম্পূর্ণ থেমে যাবে। হাতের এবং পায়ের ব্রেক আগে পরে ধরবেন না, এতে হয় বাইক স্কীড করবে, না হলে উল্টে যাবে।
  • (৩) ইমার্জেন্সি ব্রেকিংয়ে একটু এদিক-ওদিক হলে সামনের চাকা লক আপ হয়ে উল্টে পরে যেতে পারেন। এটাই সবচেয়ে বড় সমস্যার জায়গা। পিছনের চাকা আটকে গেলেও থ্রটল দিয়ে আপনি স্কিড কন্ট্রোল করতে পারবেন, কিন্তু ফ্রন্ট হুইল আটকে গেলে, কিছুই করা যায় না। ইমার্জেন্সি সিচুয়েশনে খুব দ্রুত ডিসিশন নিতে হয়। সাধারণত ফ্রন্ট হুইল আটকে যায় বাইকের ইনিশিয়াল বাইট আর স্টপিং পাওয়ার না থাকলে।

পরিশেষে, কিছু বিষয় মাথায় রাখবেন, বাইকের ব্রেক কন্ট্রোল সব সময় নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে হয় না। মাথা ঠান্ডা রেখে মোটরসাইকেল চালাবেন। পরিবেশ পরিস্থিতি, রাস্তা ঘাটের অবস্থা, এসব বিবেচনা করে ব্রেক কন্ট্রোলিং আলাদা রকম হয়। তাই বাইক চালানোর পূর্বে ব্রেক, টায়ার, ইঞ্জিন, অয়েল এগুলো চেক করে নিবেন। জরুরী ব্রেকিং আয়ত্ব করার জন্য ভালোভাবে প্রাকটিস করবেন। প্র্যাকটিস থাকলে শরীরের অটো রিফ্লেক্সেই আপনি ব্রেকিং করতে পারবেন। আর একটা কথা সব সময় মনে রাখবেন, সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি।

বাইক সম্পর্কে আরো ধারণা পেতে ভিসিট করুন বাইকস গাইডে। এখানে আপনি বিভিন্ন ব্র্যান্ড, মডেল, সিসি এবং দামের পরিসর অনুযায়ী মোটরসাইকেল সম্পর্কিত বিভিন্ন আপডেট তথ্য পাবেন ।

অনুরূপ খবর

  • Auto Parts & Accessories

    ব্যাটারি চালিত উত্তপ্ত মোটরসাইকেল গিয়ার সম্পর্কে আলোচনা

    time
    4 মিনিটে পড়া যাবে
  • Auto Parts & Accessories

    শীতকালের জন্য ৫টি সেরা মোটরসাইকেল জ্যাকেট সম্পর্কে আলোচনা

    time
    4 মিনিটে পড়া যাবে
  • Auto Parts & Accessories

    ৫টি সেরা মোটরসাইকেল বুট সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

    time
    5 মিনিটে পড়া যাবে
  • Auto Parts & Accessories

    মহিলাদের জন্য ৫টি সেরা মোটরসাইকেল রেইন গিয়ার

    time
    4 মিনিটে পড়া যাবে
  • Auto Parts & Accessories

    মোটরসাইকেল বুট ক্রেতাদের জন্য গাইডলাইন

    time
    7 মিনিটে পড়া যাবে
  • Auto Parts & Accessories

    প্রতিরক্ষামূলক মোটরসাইকেল বুট সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

    time
    5 মিনিটে পড়া যাবে
  • Auto Parts & Accessories

    ২০২৩ সালে ৫টি সেরা মোটরসাইকেলের হর্ন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

    time
    5 মিনিটে পড়া যাবে
  • Auto Parts & Accessories

    মোটরবাইকের স্ট্র্যাপের ধরণ নিয়ে আলোচনা

    time
    3 মিনিটে পড়া যাবে
  • Auto Parts & Accessories

    CE Rated মোটরসাইকেল গিয়ার বোঝার এবং বেছে নেওয়ার উপায়

    time
    4 মিনিটে পড়া যাবে
  • Auto Parts & Accessories

    মোটরসাইকেল চালানোর পোশাক বলতে কি বোঝায় ? বিস্তারিত আলোচনা

    time
    4 মিনিটে পড়া যাবে

সর্বশেষ গাড়ির রিভিউ

  • Suzuki Alto K10 2015

    Hatchback

    ৳ 800K - 1.2M

  • Toyota Aqua 2014

    Hatchback

    ৳ 1.5M - 1.6M

  • Suzuki Swift 2017

    Hatchback

    ৳ 1.7M - 2.2M

  • Toyota Vitz 2017

    Hatchback

    ৳ 1.8M - 2.3M

  • Nissan Leaf 2014

    Hatchback

    ৳ 4M - 6M

  • Mitsubishi Montero 2015

    SUV & 4X4

    ৳ 6.5M - 8.6M

  • Suzuki Wagon R 2018

    Hatchback

    ৳ 750K - 1.1M

  • Honda Civic 2019

    Saloon & Sedan

    ৳ 3.5M - 4.5M

  • Land Rover Defender 2020

    SUV & 4X4

    ৳ 14M - 18M

  • Mitsubishi Lancer 2017

    Saloon & Sedan

    ৳ 2.5M - 3M

  • Toyota Axio 2016

    Saloon & Sedan

    ৳ 1.8M - 2.4M

  • Toyota Premio G Superior 2018

    Saloon & Sedan

    ৳ 2.3M - 3M

সর্বশেষ বাইকের রিভিউ

  • Hero Ignitor 125 2020 IBS

    ৳ 115.7K - 128.5K

  • Honda X-Blade 160 ABS

    ৳ 194.9K - 216.5K

  • Honda Livo 110 Drum

    ৳ 107.9K - 119.9K

  • Keeway TXM 150

    ৳ 161.1K - 179K

  • Suzuki Gixxer Monotone

    ৳ 182K - 192K

  • Suzuki Gixxer SF Matt Plus

    ৳ 315K - 350K

  • Yamaha R15 S

    ৳ 409.5K - 455K

  • Hero Hunk 150 R Dual Disc ABS

    ৳ 166.1K - 232K

  • TVS Apache RTR 165 RP

    ৳ 297K - 360K

  • Suzuki Intruder FI ABS

    ৳ 247.5K - 320K

  • Suzuki Bandit 150

    ৳ 288K - 320K

  • KTM RC 125

    ৳ 333K - 566K

hero

Bikroy এ মাত্র ২ মিনিটে আপনার গাড়ি বা মোটরবাইকের বিজ্ঞাপন দিন!