সর্বোচ্চ সুরক্ষার জন্য সঠিক হেলমেট কীভাবে নির্বাচন করবেন?

সঠিক হেলমেট হলো একজন রাইডারের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সুরক্ষা সরঞ্জাম। দুর্ঘটনার সময় হেলমেট মাথাকে গুরুতর আঘাত থেকে রক্ষা করে। তবে সব হেলমেট সমান নিরাপত্তা দেয় না। ভুল মাপের বা নিম্নমানের হেলমেট ব্যবহার করলে ঝুঁকি বেড়ে যায়। কিছু বিষয় যেগুলো গুরুত্ব দিতেই হবে। যেমনঃ সঠিক ফিট, সেফটি সার্টিফিকেশন, হেলমেটের ধরণ এবং আরাম। হেলমেট কেনার আগে এসব বিষয় জানা থাকলে আপনি নিজের জন্য নিরাপদ ও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
সঠিক হেলমেট বাছাইয়ের ১০টি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ
১. সেফটি সার্টিফিকেশন যাচাই করুন
সবসময় চেষ্টা করবেন সেফটি-কে সবচেয়ে আগে গুরুত্ব দেওয়ার। এমন হেলমেট বাছাই করবেন যেগুলোর সেফটি সার্টিফিকেশন যেমন DOT, ECE বা ISI অনুমোদিত আছে। এগুলো সেফটির দিক থেকে খুবই ভালো মানের হেলমেট।
২. সঠিক সাইজ নির্বাচন করুন
হেলমেটের সাইজের ক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হবে, এটি যেন খুব ঢিলা বা খুব টাইট না হয়। কারণ, খুব টাইট হলে, মাথায় ব্যথা হতে পারে। আবার খুব ঢিলা হলে, তা অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। চেষ্টা করবেন সঠিক মাপের হেলমেটটি বাছাই করার, এতে আপনি সুরক্ষাও ভালো পাবেন।
৩. সঠিক ধরণের হেলমেট বেছে নিন
অনেক ধরণের হেলমেট পাওয়া যায়, যেমনঃ ফুল-ফেস, হাফ-ফেস ইত্যাদি। নিরাপত্তার দিক থেকে ফুল-ফেস হেলমেট সবচেয়ে নিরাপদ। এটি মুখ ও চিবুক সম্পূর্ণ ঢেকে রাখে। হাফ-ফেস হেলমেট সম্পূর্ণ মুখ ঢেকে রাখে না, তাই এটি কম নিরাপদ।
৪. ভেতরের প্যাডিং পরীক্ষা করুন
ভালো প্যাডিং আঘাত শোষণ করে। এছাড়াও এটি আরামদায়কও হয়ে থাকে। প্যাডিং পরীক্ষার ক্ষেত্রে দেখতে হবে এটি শক্ত ও মানসম্মত কিনা। অতিরিক্ত নরম বা ক্ষয়প্রাপ্ত প্যাডিং হলে তা বাদ দিতে হবে, কারণ প্যাডিং নরম মানে তা আঘাত শোষণ করতে পারবে না।
৫. চিবুকের স্ট্র্যাপ শক্ত কিনা দেখুন
স্ট্র্যাপের প্রধাণ কাজ হচ্ছে দুর্ঘটনার সময় হেলমেটকে সঠিক জায়গায় ধরে রাখা। এখন স্ট্র্যাপ যদি শক্ত না হয়ে নরম হয়, তবে তা হেলমেটকে সঠিক জায়গায় ধরে রাখতে পারবে না। দুর্ঘটনার সময় তখন চিবুকে আঘাত লাগার সম্ভাবনাই বেশি থাকবে। তাই স্ট্র্যাপ মজবুত হওয়া জরুরি।
৬. বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা আছে কিনা
যেহেতু বাংলাদেশের আবহাওয়া অনুযায়ী আমাদের বেশিরভাগ সময়টাই গরমের আবহাওয়া, তাই ভালো ভেন্টিলেশনের বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। ভালো ভেন্টিলেশন ঘাম কমাবে। এছাড়াও এটি দীর্ঘ রাইডে মনোযোগ ধরে রাখতেও সাহায্য করবে।
৭. পুরনো বা ব্যবহৃত হেলমেট এড়িয়ে চলুন
ব্যবহৃত বা পুরনো হেলমেটের গুণগত মান সাধারণত কমই থাকে। ব্যবহৃত হেলমেট হলে জানার উপায় নেই যে এটি আগেও দুর্ঘটনার সময় ব্যবহার করা হয়েছিল কিনা। পুরনো বা ব্যবহৃত হেলমেট আপনাকে সঠিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবে না। তাই চেষ্টা করুন ব্যবহৃত হেলমেট না কেনার।
৮. হেলমেটের ভাইসরের মান ও ভিজিবিলিটি যাচাই করুন
হেলমেটের ভাইসর যতো প্রশস্ত এবং পরিষ্কার হবে, এর ভিজিবিলিটি তত ভালো হবে। মনে রাখবেন, যেহেতু এই ভাইসর দিয়েই আপনাকে রাস্তা দেখতে হবে তাই এই ক্ষেত্রে কোনো আপোষ করা ঠিক হবে না।
৯. হেলমেট আরামদায়ক হতে হবে
অনেক বাইকারই হেলমেটকে বাড়তি ঝামেলা হিসেবে মনে করে। এর পিছনে একটা বড় কারণ হচ্ছে, হেলমেট আরামদায়ক না হওয়া। হেলমেট আরামদায়ক হলে তা নিয়মিত পরতে উৎসাহ দিবে।
১০. হেলমেটের ওজন ও ভারসাম্য যাচাই করুন
হেলমেট এমনভাবে মাথায় বসতে হবে যেনো মাথা নাড়ালে হেলমেট না নড়ে যায়। অনেক সময় দেখা যায়, হেলমেটের ভারসাম্য সঠিকভাবে না থাকার কারণে, বাইক দ্রুত চালালে, হেলমেটও নড়ে যায়। হেলমেটের ওজন সামনে বা পেছনে বেশি ভারী হলে দীর্ঘ রাইডে ঘাড়ে চাপ পড়ে। এছাড়াও বাইক নিয়ন্ত্রণেও সমস্যা হয়।
শেষ কথা
প্রত্যেক বাইকারকে খেয়াল রাখতে হবে, বাইকের সেইফটি যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তার চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ নিজের সেইফটি। জীবন রক্ষার জন্য সঠিক হেলমেট নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। অবশ্যই দাম ও ফ্যাশনের চেয়ে নিরাপত্তাকে বেশি গুরুত্ব দিবেন। এই হেলমেটই হতে পারে দুর্ঘটনার সময় আপনার প্রকৃত বন্ধু।
সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
১. ফুল-ফেস হেলমেট কি সবচেয়ে নিরাপদ?
হ্যাঁ। যেহেতু ফুল-ফেস হেলমেট মাথা, মুখ, চোয়াল সব ঢেকে রাখে তাই হাফ-ফেস বা ওপেন-ফেস থেকে এর কার্যকারীতা অনেক বেশি।
২. হেলমেট কতটা টাইট হওয়া উচিত?
হেলমেট এমন হবে যে যা ঢিলা হবে না যে মাথা নাড়ালে হেলমেটও নড়বে, আবার এতো টাইটও হবে না, যে তা মাথায় যন্ত্রণার কারণ হয়।
৩. দুর্ঘটনার পর কি একই হেলমেট ব্যবহার করা যায়?
বিশেষজ্ঞদের মতে, দুর্ঘটনার পর একই হেলমেট ব্যবহার করা একদমই উচিত নয়। কারণ হেলমেটের ক্ষতি হয়ে থাকতে পারে, যার ফলে এটি আগের মতো নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবে না।
৪. কত সময় পর হেলমেট বদলানো উচিত?
হেলমেট বদলানোর ব্যাপারটি আসলে বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে। যেমনঃ কে কত যত্ন সহকারে ব্যবহার করে, দৈনিক/সাপ্তাহিক কতবার এর ব্যবহার হয়, কতবার দুর্ঘটনায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে ইত্যাদি। তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, ৩-৫ বছর পরই হেলমেট পরিবর্তন করা উচিত। তবে ক্ষতি হলে যত দ্রুত সম্ভব।
৫. ভারী হেলমেট কি বেশি নিরাপদ?
না, বিষয়টি একদমই এমন না। হেলমেট কতটা নিরাপদ তা নির্ভর করে এর সার্টিফিকেশন, ব্র্যান্ড, ডিজাইন ইত্যাদির উপর।






































