মোটরসাইকেল মালিকানা পরিবর্তন পদ্ধতি

মোটরসাইকেল বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় পরিবহন মাধ্যম, এবং এর ক্রয়ের পরিধিও দিন দিন বাড়ছে। অনেকেই আছেন যারা কম দামের মধ্যে সেকেন্ড হ্যান্ড মোটরসাইকেল কিনতে চান। মোটরসাইকেল বা অন্য পরিবহন যে কোনো ধরনের যানবাহনের বৈধ মালিকানা থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আজকাল আমরা প্রায়শই অন্যদের কাছ থেকে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল কিনে থাকি কিন্তু ঝামেলা এড়াতে আমরা প্রায়ই মালিকানা পরিবর্তন না করার ভুল করি। আপনার মোটরসাইকেলের মালিকানার কাগজপত্র নিজের নামে থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কারণ মোটসাইকেলের দ্বারা যদি কোনো দুর্ঘটনা অথবা অপরাধমূলক কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে তাহলে ক্রেতা এবং বিক্রেতা উভয়কেই আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দ্বারা হয়রানি ও বড় ধরনের অসুবিধার সম্মুখীন হতে হবে। আরেকটি সমস্যা হচ্ছে, আপনার মোটরসাইকেল চুরি হয়ে গেলে আপনার নামের মালিকানার কাগজপত্র ছাড়া কিছুই করা যাবে না।
তাই বাইক বিক্রির পর মালিকানার কাগজপত্র পরিবর্তন করা জরুরি। বিআরটিএ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে মোটরসাইকেলের মালিকানা পরিবর্তন করা মোটেও কঠিন নয়। আজকের আর্টিকেলে আমরা মোটরসাইকেলের মালিকানার পরিবর্তন পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করবো এবং আপনি কিভাবে কাজটি সম্পন্ন করতে পারবেন এবং এর জন্য আপনার কী কী জিনিস প্রয়োজন হবে তা নিয়ে একটি ছোট্ট গাইডলাইন দেওয়ার চেস্টা করবো। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।
মোটরসাইকেল মালিকানা পরিবর্তন পদ্ধতি
সেকেন্ড-হ্যান্ড বাইক কেনার সময় অনেকেই জানেন না কিভাবে মোটরসাইকেলের মালিকানা হস্তান্তর করতে হয়। আমরা যখন একটি পুরাতন বা সেকেন্ড হ্যান্ড মোটরসাইকেল কিনি তখন মোটরসাইকেলের মালিকানা পরিবর্তনের জন্য আমাদের নিজের নামে মোটরসাইকেলের কাগজ বা নম্বর প্লেট তৈরি করতে হয়।
মোটরসাইকেলের মালিকানা পরিবর্তন করতে যা যা লাগবে
- T.O ফর্ম
- T.T.O ফর্ম
- নিবন্ধন শংসাপত্র
- ব্যাঙ্ক ফি জমা রসিদ
- তিন কপি ছবি সহ মালিকের স্বাক্ষর ফর্ম
- আসল ব্লুবুক
- বীমা শংসাপত্র
- সেলস রসিদ
- ক্রেতার NID ফটোকপি
- PUC সার্টিফিকেট
- বিক্রেতার NID ফটোকপি
- রোড ট্যাক্স সার্টিফিকেট
- হলফনামা ও ক্রেতা-বিক্রেতার ছবি সহ চুক্তিপত্র
মোটরসাইকেলের মালিকানা পরিবর্তনের নিয়ম
মোটরসাইকেলের মালিকানা পরিবর্তন একটি দ্বিমুখী প্রক্রিয়া যেখানে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়কে কাজ সম্পাদন করতে হয়।
ক্রেতার কাজ
- TO এবং TTO ফর্মে স্বাক্ষর।
- ব্যাংক রিসিট জমা।
- TIN, NID ও ঠিকানার প্রমাণপত্র জমা।
- রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট, ট্যাক্স টোকেন, ফিটনেস কপি জমা।
- হলফনামা (২০০ টাকা)।
- যদি প্রতিষ্ঠান হয়, অফিসিয়াল প্যাডে লেটার।
- তিন কপি ছবি ও ফর্ম পূরণ।
- বিআরটিএ পরিদর্শন সনদ।
- মোটরসাইকেল অন-স্পট পরিদর্শন।
বিক্রেতার কাজ
- TTO ফর্মে স্বাক্ষর।
- সরকারি নন-জুডিশিয়াল হলফনামা।
- যদি কোম্পানি হয়, বোর্ড রেজুলেশন ও অনুমোদনপত্র।
- ঋণ পরিশোধপত্র ও ছাড়পত্র (প্রয়োজনে)।
- বিক্রয়ের ফটোসহ হলফনামা।
- NID ফটোকপি।
অন্য কাগজপত্র
- বৈধ ঠিকানা প্রমাণ
- বৈধ পরিচয় প্রমাণ
- দুটি ছবি
মোটরসাইকেল মালিকানা পরিবর্তন খরচ
মালিকানা পরিবর্তন ফি: ৩৫০০ টাকা
স্ট্যাম্প: ৬০০ টাকা
নথি লেখা: ৩০০ টাকা
হলফনামা: ১৫০০ টাকা
মালিকানা পরিবর্তন না করলে কী হবে
BRTA নির্দেশ অনুযায়ী, মালিকানা পরিবর্তন না করলে বাইক চুরি হওয়া হিসেবে ধরা হবে এবং পুলিশ বাজেয়াপ্ত করবে। মালিককে জেল, জরিমানা ও শাস্তি পেতে হতে পারে। ক্রেতা প্রতারণা বা ক্ষতির ঝুঁকিতে থাকবে। অনিবন্ধিত যান হিসেবে অভিযোগ উঠতে পারে।
শেষকথা
মোটরসাইকেল মালিকানা পরিবর্তনের প্রক্রিয়াটি কিছুটা সময়সাপেক্ষ হলেও এটি করলে আপনি আইনি জটিলতা থেকে মুক্ত থাকবেন। তাই ব্যবহৃত বাইক কেনার সময় অবশ্যই মালিকানা পরিবর্তন করে বৈধ মালিকানা নিশ্চিত করুন।