মোটরসাইকেল রেজিস্টেশনের প্রক্রিয়া

বাইক কেনার সময় প্রায় সবাই বেশ কিছু বিষয় নিয়ে চিন্তা করেন – কিভাবে বাইকের রেজিস্ট্রেশন করা যায়? রেজিস্ট্রেশন নিজেরা করা কি বেশি সময় সাপেক্ষ? রেজিস্ট্রেশন করতে কত টাকা লাগবে? শোরুম থেকে বাইক কেনার পরে নিজে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবো?
হ্যাঁ অবশ্যই পারবেন - আপনি নিজে আপনার বাইকের রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন এবং কত সিসি বাইকের জন্য কত টাকা লাগবে ও কি কি ডকুমেন্ট প্রয়োজন হবে, কিভাবে ব্যাংকে টাকা জমা দেবেন, সকল সমস্যার সমাধান নিয়ে এখানে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এখানে আমরা মোটামুটি একটি পরিষ্কার ধারণা দেয়ার চেষ্টা করেছি রেজিষ্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পর্কে।
বিআরটিএ অফিসে যেয়ে আপনার কি কি করনীয় সেটা ধারাবাহিকভাবে এখানে আলোচনা করা হয়েছে। আপনি সেই অনুযায়ী আপনার বাইকের জন্য আবেদন করতে পারবেন এবং কি কি ডকুমেন্ট প্রয়োজন সকল কিছুর বিস্তারিত নিচে সিরিয়াল অনুযায়ী দেয়া হয়েছে। এখানে ধাপে ধাপে মোটরসাইকেল রেজিস্টেশনের সহজ প্রক্রিয়া নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
- প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করে মোটরযানের নিবন্ধন করুন,
- নির্ধারিত টাকা ব্যাংকে জমা দিন,
- এপ্লিকেশন সাবমিশন করুন,
- ডিজিটাল ব্লু বুক এবং নাম্বার প্লেট লিপিবদ্ধকরণ,
- ব্লু বুক এবং আরএফআইডি নাম্বার প্লেট গ্রহন করুন,
- সবশেষে মোটরসাইকেলটি সরেজমিনে পরিদর্শনের জন্য হাজির করতে হবে।
আপনি যদি নিজে রেজিস্ট্রেশন করতে চান প্রথমেই আপনি বেছে নিন আপনার নিকটবর্তি কোথায় বিআরটিএ অফিস আছে, প্রথমেই আপনি বিআরটিএ অফিসে যাবেন, যাওয়ার পরে নির্ধারিত ফরমে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ (নিচে উল্লেখ করা আছে) আপনার বাইক/মোটরযানের রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবেদন করবেন।
মোটরযানের নিবন্ধন (সংক্ষেপে)
সেবাপ্রত্যাশী সংশ্লিষ্ট বিআরটিএ অফিসে নির্ধারিত ফরমে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ তাঁর মোটরযানের রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবেদন করবেন। বিআরটিএ অফিস কর্তৃক আপনার আবেদন ও সংযুক্ত ডকুমেন্ট যাচাই-বাছাই করে সঠিক পেলে আপনাকে প্রয়োজনীয় রেজিস্ট্রেশন ফি নির্ধারিত ব্যাংকে জমা প্রদান করতে হবে। আপনাকে একটি এ্যাসেসমেন্ট স্লিপ প্রদান করবে এবং নির্ধারিত ফি জমা প্রদানের পর গাড়িটি পরিদর্শণের জন্য উক্ত বিআরটিএ অফিসে হাজির করতে হবে।
আপনার গাড়িটি পরিদর্শণ করার পর মালিকানা এবং গাড়ি সংক্রান্ত সকল তথ্য বিআরটিএ ইনফরমেশন সিস্টেমে এন্টি করার পর সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ার) কর্তৃক রেজিস্টেশন অনুমোদন প্রদান করা হবে এবং রেজিস্ট্রেশন নম্বর উল্লেখপূর্বক একটি ডকুমেন্ট/প্রাপ্তিস্বীকারপত্র, ফিটনেস সার্টিফিকেট এবং ট্যাক্স টোকেন প্রিন্ট করে বিআরটিএ সংশ্লিস্ট কর্মকর্তাদের মাধ্যমে স্বাক্ষর করে আপনাকে প্রদান করা হবে।
ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট (ডিআরসি) তৈরীর পরে গ্রাহকের বায়োমেট্রিক্স (ডিজিটাল ছবি, ডিজিটাল স্বাক্ষর ও আঙ্গুলের ছাপ) প্রদানের জন্য গ্রাহককে সংশ্লিষ্ট অফিসে উপস্থিত হতে হবে; এজন্য গ্রাহককে তার মোবাইল ফোনে এসএমএস পাওয়ার পরে। বায়োমেট্রিক্স প্রদানের পর ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট গ্রহণের জন্যও আপনাকে এসএমএস এর মাধ্যমে জানানো হবে।
মোটরসাইকেল রেজিস্টেশনের প্রক্রিয়া
প্রথম ধাপ - প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ
প্রথমে আপনাকে আপনার নতুন কেনা মোটরসাইকেলটির সকল আইনসম্মত কাগজ পত্র সংগ্রহ করতে হবে আপনার ডিলারের কাছে থেকে, যেমন:
- আমদানী সম্পর্কিত কাগজপত্র (বিআরটিএ দ্বারা অনুমোদিত)
- কাস্টমস সম্পর্কিত কাগজপত্র
- গেট পাস
- মূসক ১১ চালানপত্র
- সোনালী ব্যাংকে ট্রেজারি চালান
- ক্যাশ মেমো
- জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি
[আপনাকে এই সব সকল কাগজপত্রের ফাইল ডিলারের কাছে থেকে সংগ্রহ করতে হবে যার কাছে থেকে আপনি বাইকটি কিনেছেন৷]
সকল কাগজপত্র সংযুক্ত করার পর এপ্লিকেশন সেটটি বিআরটিএ অফিসে নিয়ে যাচাই করিয়ে নিন। যদি তারা অনুমোদন দেয়, তাহলে একটি এসেসমেন্ট স্লিপ দেয়া হবে। এটি পূরণ করে ব্যাংকে জমা দিতে হবে।
নতুন বাইক রেজিষ্ট্রেশনে বিআরটিএ কতৃক ধার্যকৃত মূল্য
- ৫০-১০০ সিসি (৯০ কেজির নীচে) → ১২,৩৯০ টাকা
- ৫০-১০০ সিসি (৯০ কেজির উপরে) → ১৭,৩৯০ টাকা
- ১০১-১৫০ সিসি (৯০ কেজির নীচে) → ১৩,৭৯০ টাকা
- ১০১-১৫০ সিসি (৯০ কেজির উপরে) → ১৮,৭৯০ টাকা
সকল ফি এবং চার্জের উপর ১৫% ভ্যাট যোগ হবে। ব্যাংকে জমা দেয়ার সময় এটি হিসাব করতে হবে।
তৃতীয় ধাপ - এপ্লিকেশন সাবমিশন
ব্যাংকে টাকা জমা দেয়ার পর কাগজপত্র বিআরটিএ’র রেজিস্ট্রেশন ডেস্কে জমা দিতে হবে। যানবাহন পরিদর্শনের পর একটি একোনলেজমেন্ট স্লিপ দেয়া হবে।
চতুর্থ ধাপ – ডিজিটাল ব্লু বুক এবং নাম্বার প্লেট লিপিবদ্ধকরণ
এ পর্যায়ে বায়োমেট্রিক (ছবি, আঙুলের ছাপ, স্বাক্ষর) সংগ্রহ করা হবে এবং তথ্য ডাটাবেসে সংরক্ষণ হবে।
পঞ্চম ধাপ – ব্লু বুক এবং আরএফআইডি নাম্বার প্লেট গ্রহণ
সাধারণত এক মাসের মধ্যে এসএমএসের মাধ্যমে জানানো হয় এবং আপনি বিআরটিএ অফিস থেকে ব্লু বুক ও নাম্বার প্লেট সংগ্রহ করতে পারবেন।
বিশেষ দ্রষ্টব্য
আপনি যদি কোম্পানির বাইক রেজিস্ট্রেশন করতে চান, অবশ্যই কোম্পানির প্যাড এবং অথরাইজেশন লেটার নিয়ে যেতে হবে।
প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট বিষয়ে কিছু তথ্য
- যৌথ মালিক হলে হলফনামা
- কোম্পানি হলে সিল ও স্বাক্ষর
- ব্যাংক সংক্রান্ত হলে তাদের প্যাডে আবেদন
- জাতীয় পরিচয়পত্র/পাসপোর্ট/ইউটিলিটি বিল
- ৩ কপি ছবি (ব্যক্তি মালিকানার ক্ষেত্রে)
- কাস্টমস ও আমদানি কাগজপত্র
- সেল সার্টিফিকেট
- ট্যাক্স ও ভ্যাট চালান
- রিকন্ডিশন হলে টিও ফরম, টিটিও ফরম, পুনঃরেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট
সকল কাগজপত্র যাচাই শেষে বিআরটিএ থেকে ফাইনাল রেজিস্ট্রেশন প্রদান করা হয়।