বাংলাদেশে আসন্ন ২৫০ সিসি মোটরবাইক নিয়ে আলোচনা
জগতে এমন খুব কম অনুভূতি রয়েছে যা একটি ভাল বাইক বা মোটরসাইকেল চালানোর অনুভূতিকে হার মানায়। আপনি এক্ষেত্রে অনভিজ্ঞ হয়ে থাকুন কিংবা অভিজ্ঞ, মোটরসাইকেল চালানোর সময় পাওয়া রোমাঞ্চকর অনুভূতি হার মানায় সবকিছুকে। আর এজন্য প্রয়োজন উন্নতমানের এবং উচ্চগতিসম্পন্ন বাইক। আর উচ্চগতির জন্য প্রয়োজন উচ্চসিসি সম্পন্ন মোটরবাইক। কিন্তু বাংলাদেশে তা এতদিন সম্ভব ছিলো না, কারণ ১৬৫ সিসির ওপরে মোটরসাইকেল আমদানি ও বাজারে ছাড়া ছিলো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু বাইকারদের জন্য সুখবর হলো শীঘ্রই দেশের বাজারে আসছে ২৫০ সিসি মোটরবাইক।
২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে প্রথমবারের মতো ২৫০ সিসি মোটরবাইক আমদানির কথা বলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি তাঁর বাজেট বক্তৃতায় বলেন, “দেশে ২৫০ সিসির বেশি ইঞ্জিন ক্ষমতার মোটরসাইকেল তৈরি করতে দেশে কারখানা হচ্ছে। এ পণ্য আমদানিতে বর্তমানে কোনো শুল্ক আরোপ করা নেই।” যদিও তিনি পরে শুল্ক আরোপ করার কথা বলেন।
যাই হোক, দীর্ঘ দিন ধরেই ২৫০ সিসির বেশি ইঞ্জিন ক্ষমতার মোটরসাইকেল বাজারে আনার দাবি জানিয়ে আসছেন ব্যবসায়ীরা, আরন দাব আরো জোরালো হয় যখন বিশ্বখ্যাত মোটরসাইকেল ব্র্যান্ড রয়্যাল অ্যানফিল্ড এইদেশে আসার আগ্রহ প্রকাশ করে।
এক্ষেত্রে সিসির সঙ্গে গতির সম্পর্ক এর দিকটি একটু আলোচনা করা দরকার। সিসি বা কিউবিক ক্ষমতা বাইকের ইঞ্জিনের শক্তি উৎপাদনের ক্ষমতা বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। কিউবিক ক্ষমতা হল বাইকের ইঞ্জিনের চেম্বারের আয়তন। বাইকের সিসি যত বেশী হবে, শক্তি উৎপাদনের সময় বায়ু এবং জ্বালানী মিশ্রণের পরিমাণতত বেশী হবে, এবং ইঞ্জিনের শক্তি উৎপাদনের পরিমাণ তত বেশি হবে। অর্থাৎ বলা যায়, উচ্চ সিসিসম্পন্ন বাইকগুলো নিম্ন সিসি বাইকগুলোর তুলনায় বেশি ইঞ্জিন ক্ষমতা সম্পন্ন এবং দ্রুততর হয়।
২৫০ সিসি বাইক কেন এদেশে নতুন?
বেশ কিছু কারণে ২৫০ সিসি মোটরবাইক দেশে নিষিদ্ধ ছিলো। যেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-
- ২৫০ সিসি মোটরসাইকেলের শক্তিশালী ইঞ্জিন সামলানো কিছুটা কঠিন, বিশেষ করে অনভিজ্ঞ রাইডারদের জন্য। তাই অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য এই বাইক বাজারে ছড়া হয়নি।
- ২৫০ সিসি বাইকের দাম অবশ্যই কম ইঞ্জিনশক্তি সম্পন্ন বাইকগুলোর তুলনায় বেশি, তাই ধারণা করা হয়েছে দেশের বাজারে এই বাইকের চাহিদা খুব বেশী থাকবে না।
- দেশের বেশীরভাগ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা অনুযায়ী কম ক্ষমতা সম্পন্ন ও জ্বালানি-সাশ্রয়ী মোটরবাইকের উপযোগিতা বেশী মনে হওয়ায় সেগুলোকেই মূলত বাজারে রাখার ব্যবস্থা করা হয়।
যাই হোক, সময়ের সাথে দেশের বাইকাররা দক্ষ হওয়ায় এবং তাদের আরো দ্রুতগতিসম্পন্ন ও শক্তিশালী বাইকের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায়, ১৬৫ সিসি এর বেশি মোটরবাইক আমদানিতে যে নিষেধাজ্ঞা ছিলো তা উঠে যাচ্ছে, এবং বাজারে আসছে বেশি ইঞ্জিন ক্ষমতার ২৫০ সিসি মোটরবাইক।
বাজারে ২৫০ সিসি মোটরবাইক আসার প্রভাব
২৫০ সিসি মোটরবাইক বাজারে আনার প্রথম সুবিধা হচ্ছে বাইক কেনার ক্ষেত্রে অপশন অনেক বৃদ্ধি পাবে। সর্বপ্রথম আমরা বর্তমানের মডেলগুলোর মধ্যে কিছু আপগ্রেড পাব। এছাড়াও হায়ার ক্যাপাসিটি বাইকে আমরা নতুন নতুন ফিচারস পাব । দ্বিতীয়ত হাই-টেক, ওয়ার্ল্ড ক্লাস, মর্ডান বাইকগুলো বাজারে আসবে। সেই সব প্রিমিয়াম মোটরসাইকেলগুলো দেশে আমদানি করা হবে বিভিন্ন মাধ্যমে। আর এই আমদানিকৃত ২৫০ সিসি বাইকগুলোর মধ্যে থাকতে পারে হোন্ডা সিবি আর ২৫০ আরআর, ইয়ামাহা আর২৫, কাওয়াসাকি জেড২৫০ অথবা সুজুকি জিএসএক্স২৫০আর এর মত মোটরবাইক এবং অফ রোডের মধ্যে সিআরএফ২৫০ র্যালি এবং কাওয়াসাকি কেএলএক্স২৫০ পাওয়া যেতে পাড়ে বিক্রয় ডট কম সহ অন্যান্য অনলাইন এবং অফলাইন মার্কেটপ্লেস গুলোতে।
২৫০ সিসি মোটরবাইক চালানোর সুবিধাসমূহ
পূর্বের নিম্নগতি সম্পন্ন ও নিম্ন ইঞ্জিনক্ষমতা সম্পন্ন বাইকগুলো থেকে ২৫০ সিসি এর মোটরসাইকেলগুলো নিঃসন্দেহে একটি আপগ্রেড। চলুন দেখে নেয়া যাক আমরা কী কী পেতে যাচ্ছি ২৫০ সিসি মোটরবাইকগুলো থেকে-
পাওয়ার এবং পারফরম্যান্স
২৫০সিসি বাইক এর পাওয়ার এবং পারফরম্যান্স আগের মোটরসাইকেলগুলোর তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। এটি আরও আনন্দদায়ক বাইক রাইডিং অভিজ্ঞতা এবং আরামে দীর্ঘ যাত্রা পরিচালনা করার ক্ষমতা প্রদান করে।
বিচিত্রতা
এই বাইকগুলি বহুমুখী এবং এগুলো দিয়ে শহরের ভিতরে যাতায়াত যেমন আরামদায়ক, তেমনি হাইওয়ে তে এবং অন্যান্য বিচিত্র পরিস্থিতিতে পরিচালনা করতে পারে, যা এগুলিকে বাইকারদের পছন্দের তালিকায় উপরের সারিতে নিয়ে আসে।
ডিজাইন
২৫০ সিসি মোটরবাইক গুলোতে থাকে দৃষ্টিনন্দন ও প্রিমিয়াম ডিজাইন, যা তাদেরকে বাইকারদের নিকট আরো আকর্ষণীয় করে তোলে।
উন্নত বৈশিষ্ট্য
আধুনিক ২৫০সিসি মোটরসাইকেলগুলিতে প্রায়শই উন্নততর ফিচার যেমন ডিজিটাল ডিসপ্লে, উচ্চতর সাসপেনশন ইত্যাদি থাকে, যা বাইকারদের আরো নিরাপত্তা এবং স্বাচ্ছন্দ্য প্রদান করে।
২৫০সিসি বাইকের লিস্ট যেখান থেকে আপনি নিজের জন্য বেছে নিতে পারেন
যখন পুরোদমে দেশে ২৫০সিসি মোটরসাইকেল আমদানি শুরু হবে, তখন বাজারে পাওয়া যাবে বিভিন্ন বিখ্যাত ব্রান্ডের বিখ্যাত মডেলের বাইক। বিক্রয়েও আপনি পাবেন নানা নামীদামী ব্র্যান্ডের নামীদামী মডেলের বাইক। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু মোটরবাইক হলো-
ইয়ামাহা এফজেড২৫ (Yamaha FZ 25)
ইয়ামাহা এফজেড২৫ একটি জনপ্রিয় ২৫০ সিসি বাইক যা এর স্পোর্টিং ডিজাইন এবং নির্ভরযোগ্য পারফরম্যান্সের জন্য পরিচিত। এর ইঞ্জিনের ক্ষমতা ২৪৯ সিসির মতো, যা এটিকে বাইকারদের নিকট আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
সুজুকি জিক্সার ২৫০ (Suzuki Gixxer 250)
সুজুকি জিক্সার ২৫০ শক্তি এবং সন্দর ডিজাইনের একটি আকর্ষণীয় কম্বিনেশন অফার করে। এটিতে একটি ২৪৯ সিসি এর একক-সিলিন্ডার ইঞ্জিন রয়েছে এবং এটি চালানোর ক্ষেত্রে স্বাচ্ছন্দ্য এবং দ্রুততার জন্য বাইকারদের নিকট বেশ গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেছে।
বাজাজ ডোমিনার ২৫০ (Bajaj Dominar 250)
বাজাজ ডোমিনার ২৫০ হল একটি ২৪৮.৭৭ সিসি ইঞ্জিন সংযুক্ত একটি স্পোর্টিং বাইক। অনেক দূরপথ ভ্রমণের ক্ষেত্রে এটি বেশ সুবিধাজনক, এবং এটির ডিজাইন বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে বাইক চালাতে সাহায্য করে।
সিএফ মটো ২৫০ এসআর (CFM Moto 250 SR)
সিএফ মটো ২৫০ এসআর একটি ২৫০ সিসি ইঞ্জিন সংবলিত স্পোর্টস বাইক। এর রয়েছে চিত্তাকর্ষক ডিজাইন এবং অসাধারণ কর্মক্ষমতা, যা একে জনপ্রিয় করে তুলেছে কমবয়সী বাইকারদের কাছে।
বেনেলি টিএনটি ২৫০( Benelli TNT 250)
বেনেলি টিএনটি ২৫০ এর রয়েছে আকর্ষণীয় ইতালীয় ডিজাইন, এবং এটির ইঞ্জিনের ক্ষমতা ২৪৯ সিসি। এটি এর অনন্য গঠনকাঠামো এবং স্বচ্ছন্দ্য রাইডিং এর জন্য প্রশংসিত।
রয়্যাল অ্যানফিল্ড বুলেট ২৫০ (Royal Enfield Bullet 250)
বলার অপেক্ষা রাখে না ২৫০ সিসি ইঞ্জিনক্ষমতার এই বাইকটি বিশ্বখ্যাত রয়্যাল অ্যানফিল্ড ব্র্যান্ডের একটি মডেল, যেটি একজন বাইকারকে অনন্য ডিজাইন এবং গঠন কাঠামোর পাশাপাশি একটি প্রিমিয়াম মোটরবাইক রাইডিং অভিজ্ঞতা প্রদান করবে।
কীভাবে নিজের জন্য বেছে নিবেন ২৫০ সিসি বাইক?
আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক ২৫০ সিসি বাইক বাছাই করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনার পছন্দ করার সময় এখানে কিছু বিষয় বিবেচনা করতে হবে-
রাইডিং স্টাইল
আপনার প্রাথমিক রাইডিং স্টাইল নির্ধারণ করুন - আপনি শহরে যাতায়াত করবেন, হাইওয়েতে দীর্ঘ রাইড করবেন, নাকি অফ-রোড যাচ্ছেন।
স্বাচ্ছন্দ্য এবং গঠন কাঠামো
নিশ্চিত করুন যে বাইকের গঠন আপনার শরীর এবং রাইডিং পছন্দের সাথে মানানসই।
বাজেট
আপনার নতুন মোটরসাইকেলের জন্য একটি বাজেট সেট করুন এবং বাইকের দাম, রক্ষণাবেক্ষণ এবং জ্বালানী খরচ সহ সংশ্লিষ্ট খরচ বিবেচনা করুন।
রক্ষণাবেক্ষণ
আপনার এলাকায় আপনার পছন্দের বাইকের জন্য সার্ভিসিং সেন্টার এবং খুচরা যন্ত্রাংশের প্রাপ্যতা নিয়ে খোঁজ নিন।
টেস্ট রাইড
বাইকের পারফরম্যান্স, স্বাচ্ছন্দ্য এবং চালানোর অনুভূতি পেতে কেনার আগে একটি টেস্ট রাইড নিন।
শেষ কথা
বাংলাদেশে ২৫০ সিসি মোটরসাইকেলের আগমন দেশের মোটরসাইকেল শিল্পে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হবে। দেশের লাখ লাখ মোটরবাইক রাইডারের জন্য এটি একটি স্বপ্ন সত্যি হবার মত ব্যাপার। ২৫০সিসি বাইক বাজারে আসায় বেছে নেওয়ার জন্য যেমন পাওয়া যাবে বিভিন্ন বিখ্যাত মডেল ও ব্র্যান্ডের বাইক, একইভাবে রাইডাররা পাবেন নিজেদের পছন্দমতো স্টাইল, ক্ষমতা, এবং পারফরম্যান্স অনুযায়ী বাইক বেছে নেওয়ার সুযোগ। একটি ২৫০ সিসি এর মোটরবাইক নিয়ে আসবে একটি রোমাঞ্চকর রাইডিং অভিজ্ঞতা উপভোগ করার জন্য সবধরণের সুযোগ সুবিধা। আর আপইনি আপনার পছন্দমতো যেকোন বাইকই খুঁজে পাবেন দেশের সবচেয়ে বড় কেনাবেচার অনলাইন মার্কেটপ্লেস Bikroy-এ। আপনাকে হাজার হাজার অপশনের মধ্যে নিজের জন্য উপযুক্ত বাইকটি খুঁজে পেতে বেশ কিছু বিষয় বিবেচনা করতে ভুলবেন না, যেমন আপনার রাইডিং স্টাইল, বাজেট এবং ব্যক্তিগত স্বাচ্ছন্দ্য।

































