১ - ২ লক্ষ টাকার মধ্যে মোটরবাইক সম্পর্কে আলোচনা
সাশ্রয়ী মূল্যের বাইকগুলো সাধারণত কমিউটার এবং স্ট্যান্ডার্ড টাইপ হয়ে থাকে। স্বল্প দূরত্বে দৈনন্দিন ঘন ঘন ব্যবহারের জন্য এসব বাইক বেশ ভালো সাপোর্ট দিতে পারে। এছাড়াও এই বাইকগুলো ফুয়েল ইফিসিয়েন্ট, মাইলেজ বেশি, রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কম, এবং খুচরা যন্ত্রাংশ সারা দেশেই পাওয়া যায়। সিটি কিংবা রিমোট অঞ্চলে রেগুলার যাতায়াতের প্রয়োজনে এই ধরণের বাইকগুলো আপনাকে দীর্ঘ-মেয়াদি সুবিধা দেবে। মূলত রেগুলার ব্যবহার উপযোগিতা, স্বল্প দাম, জ্বালানি সাশ্রয়ী এবং লং-লাস্টিং ইঞ্জিন পারফরম্যান্সের কারণে এগুলো এখনো গ্রাহক জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে। বাইকগুলোর ইঞ্জিন, ব্রেক এবং সাসপেনশন সিস্টেম, সাধারণ মানের হলেও বেশ কার্যকর।
১ - ২ লক্ষ টাকার মধ্যে মোটরবাইক সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা –
BAJAJ PULSAR 150
এটি স্মার্ট লুকিং একটি স্ট্যান্ডার্ড টাইপ বাইক। বাইকটিতে ১৫০ সিসির পাওয়ারফুল ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে। এই ইঞ্জিন এয়ার-কুল্ড, সিঙ্গেল-সিলিন্ডার, ২-ভাল্ভ, এবং ৪-স্ট্রোক ফিচার বিশিষ্ট। বাইকটি থেকে আপনি প্রায় ৪৫ কিমি/লিটার এভারেজ মাইলেজ এবং প্রায় ১২০ কিমি/আওয়ার টপ স্পিড পেতে পারেন। বাইকটির স্পেশাল কিছু ফিচাররের মধ্যে রয়েছে ডিটিএস-আই টুইন স্পার্ক ইগনিশন সিস্টেম সহ একটি চওড়া এক্সজস্ট মাফলার, অটোম্যাটিক হেডলাইট অন (AHO) সিস্টেম, এবং রাতে রাইডিং-এ সাহায্য করার জন্য ব্যাকলাইট সুইচগিয়ার। এটি কিক এবং ইলেকট্রিক দুইভাবেই স্টার্ট করা যায়। বাইকটির বর্তমান অফিশিয়াল দাম – ১৯২,৭৫০/= টাকা。
সুবিধা- টুইন স্পার্ক ডিটিএস-আই (DTS-i) ইগনিশন ইঞ্জিন
- স্মুথ সাসপেনশন সিস্টেম এবং মাইলেজ
- অটোম্যাটিক হেডলাইট অন (AHO)
- ইঞ্জিন কিল সুইচ আছে
- ১৫০ সিসি সেগমেন্টের অন্যান্য বাইকের তুলনায় সরু টায়ার
- এবিএস বা সিবিএস ধরণের স্পেশাল ব্রেকিং সিস্টেম নেই
BAJAJ DISCOVER 150F
বাইকটি পুরো ডিসকভার লাইনআপের মধ্যে সবচেয়ে স্পোর্টি এবং অ্যাগ্রেসিভ লুকিং স্ট্যান্ডার্ড টাইপ বাইক। এটিতে ১৫০ সিসি, ৪-স্ট্রোক, সিঙ্গেল সিলিন্ডার, এয়ার-কুলড, টু-ভালভ ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে। মোটরবাইকটি পাঁচ-স্পিড গিয়ার সম্পন্ন এবং এটিতে ওয়েট মাল্টি প্লেট ক্লাচ ব্যবহার করা হয়েছে যা রাইডকে আরো আরামদায়ক করে এবং গিয়ার শিফটিং সহজ করে। বাইকটি থেকে আপনি প্রায় ৪৫ কিমি/লিটার এভারেজ মাইলেজ এবং প্রায় ১২৫ কিমি/আওয়ার টপ স্পিড পেতে পারেন। বাইকটির বর্তমান অফিশিয়াল দাম - ১৭৭,০০০/= টাকা。
সুবিধা- পাওয়ারফুল ইঞ্জিন
- ব্রেকিং সিস্টেম খুবই স্মুথ
- লং রাইডিং-এ ভালো মাইলেজ পাওয়া যায়
- এবিএস/সিবিএস নেই
- দীর্ঘ রাইডিং-এ ইঞ্জিন ওভারহিট হয়ে যায়
SUZUKI HAYATE EP
১০০ সিসি সেগমেন্টের বাইকগুলোর মধ্যে পারফরম্যান্সের দিক থেকে এটি অন্যতম উল্লেখ্য একটি কমিউটার টাইপ বাইক। এছাড়াও বাইকটি স্মার্ট লুক, দুর্দান্ত মাইলেজ এবং অসাধারণ কন্ট্রোলিং এর জন্য বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এটিতে ১০০ সিসির এয়ার-কুল্ড, ৪ স্ট্রোক, ২ ভাল্ভ, সিঙ্গেল সিলিন্ডার এসওএইচসি ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে। এই বাইকের ইঞ্জিন বেশ রিফাইন্ড এবং থ্রোটল রেস্পন্সও বেশ ভালো। এছাড়াও এটিতে ওয়েট মাল্টি-প্লেট ক্লাচ এবং একটি ৪-স্পিড গিয়ারবক্স সংযুক্ত রয়েছে। বাইকটি থেকে আপনি প্রায় ৫০ কিমি/লিটার এভারেজ মাইলেজ এবং প্রায় ৮০ কিমি/আওয়ার টপ স্পিড পেতে পারেন। বাইকটির বর্তমান অফিশিয়াল দাম - ১১৮,০০০/= টাকা。
সুবিধা- আকর্ষণীয় বডি ডিজাইন
- অসাধারণ মাইলেজ
- হেডলাইট পারফর্ম্যান্স
- টায়ারগুলো চিকন
SUZUKI GS150R
এটি একটি প্রিমিয়াম কোয়ালিটির স্ট্যান্ডার্ড টাইপ মোটরসাইকেল। বাইকটিতে ১৫০ সিসির শক্তিশালী ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে। এই ইঞ্জিন এয়ার-কুল্ড, সিঙ্গেল-সিলিন্ডার, ২-ভাল্ভ, সিঙ্গেল ওভারহেড ক্যাম্সফ্ট (SOHC) ফিচার বিশিষ্ট। এটির ট্রান্সমিশন সিস্টেম ম্যানুয়াল, এখানে ৬ স্পিড গিয়ারবক্স এবং ওয়েট মাল্টিপ্লেট ক্লাচ ব্যবহার করা হয়েছে। এটি আপনি সেলফ এবং কিক দুই ভাবেই স্টার্ট করতে পারবেন। বাইকটি থেকে আপনি প্রায় ৪০ কিমি/লিটার এভারেজ মাইলেজ এবং প্রায় ১২০ কিমি/আওয়ার টপ স্পিড পেতে পারেন। রেগুলার কমিউটিং-এর জন্য সিটি এবং হাইওয়ে উভয় রোডে এটি ব্যবহার করতে পারবেন। বাইকটির বর্তমান অফিশিয়াল দাম – ১৬৫,০০০/= টাকা。
সুবিধা- শক্তিশালী ইঞ্জিন এবং দুর্দান্ত বিল্ড-কোয়ালিটি
- টুবুলার ডাবল ক্র্যাডল টাইপ চেসিস
- ফুয়েল ক্যাপাসিটি
- সিটি-হাইওয়ে উভয় রোডে চলাচলের উপযোগী
- পিছনের ড্রাম ব্রেক
- হ্যালোজেন লাইটিং সেটআপ
SUZUKI SAMURAI 150
এটি একটি স্টাইলিশ কমিউটার বাইক। এটিতে রয়েছে ১৫০ সিসির শক্তিশালী ইঞ্জিন। এই ইঞ্জিন এয়ার-কুল্ড, ৪-স্ট্রোক এবং সিঙ্গেল সিলিন্ডার দ্বারা চালিত। এই বাইকটির পারফরম্যান্স, মাইলেজ, এবং গতি সবই দুর্দান্ত। এর স্টাইলিশ লুকের সাথে গতির সমন্বয় আপনাকে দুর্দান্ত রাইডিং এক্সপেরিয়েন্স দেবে। বাইকটি থেকে আপনি প্রায় ৪৫ কিমি/লিটার এভারেজ মাইলেজ এবং প্রায় ১১০ কিমি/আওয়ার টপ স্পিড পেতে পারেন। এখনকার দিনে রিজনেবল দামে এরকম শক্তিশালী কমিউটার বাইক সাথে দুর্দান্ত মাইলেজ পাওয়া বেশ কঠিন। স্ট্যার্ট করার জন্য এই বাইকে কিক এবং ইলেক্ট্রিক দুই সিস্টেমই রয়েছে। বাইকটির বর্তমান অফিশিয়াল দাম - ১৪৯,৯৫০/= টাকা。
সুবিধা- টেকসই বডি স্ট্রাকচার
- লাগেজ ঝুলানোর জন্য রেক/হাঙ্গার রয়েছে
- কম্ফোর্টেবল সাসপেনশন
- জ্বালানি সাশ্রয়ী
- পেছনের চাকার টায়ারটি পাতলা মনে হয়েছে
- চেইন আরো ভালো হতে পারতো
TVS JIVE 110
এটি একটি ডিসেন্ট ডিজাইনের কমিউটার টাইপ মোটরসাইকেল। বাইকটিতে কোনো ক্লাচ লিভার নেই, এখানে সেমি-অটোম্যাটিক ট্রান্সমিশন সিস্টেম ব্যবহার করা হয়েছে। এই সেমি-অটোম্যাটিক ট্রান্সমিশনের কারণে রাইডারকে ক্লাচ-থ্রটল কো-অর্ডিনেশনে মনোযোগ দেবার প্রয়োজন হয় না। বাইকটিতে ১১০ সিসির শক্তিশালী ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে। এটির স্পেশাল কিছু ফিচারের মধ্যে রয়েছে – এয়ার-কুল্ড ইঞ্জিন, পেপার ফিল্টার, বিল্ট-ইন সোলেনয়েড ভালভ, সেমি-অটোম্যাটিক ট্রান্সমিশন, সিঙ্গেল ক্রেডল টিউবুলার ফ্রেম ইত্যাদি। এটি ইলেকট্রিক এবং কিক দুভাবেই স্টার্ট করা যায়। বাইকটি থেকে আপনি প্রায় ৫৫ কিমি/লিটার এভারেজ মাইলেজ এবং প্রায় ৯০ কিমি/আওয়ার টপ স্পিড পেতে পারেন। বাইকটির বর্তমান অফিশিয়াল দাম - ১৩৪,৫০০/= টাকা。
সুবিধা- ডিসি-ডিজিটাল ইগনিশন সিস্টেম
- সেমি-অটোম্যাটিক ট্রান্সমিশন সিস্টেম
- ভালো মাইলেজ এবং বিল্ড কোয়ালিটি
- ড্রাম টাইপ ব্রেকিং সেটআপ
- টপ স্পিডে এবং দীর্ঘ সময় রাইডিং-এ ইঞ্জিন গরম হয়ে ওঠে
HONDA CB SHINE SP
এটি একটি জনপ্রিয় কমিউটার টাইপ মোটরসাইকেল। ভালো মাইলেজ এবং গতিময় রাইডিং এক্সপেরিয়েন্সের কম্বিনেশন, এই বাইককে অনন্য সাধারণ করে তুলেছে। বাইকটির ইঞ্জিন ডিসপ্লেসমেন্ট ১২৫ সিসি। এই ইঞ্জিন এয়ার কুল্ড, ৪-স্ট্রোক এবং স্পার্ক ইগনিশন। এটির এক্সসিলারেশন এবং ট্রান্সমিশনের সিস্টেম বেশ স্মুথ। বাইকের চাকায় আধুনিক স্প্লিট-স্পোক অ্যালয় হুইল ব্যবহার করা হয়েছে। এই বাইকে ভেসকাস পেপার টাইপ এয়ার ফিল্টার ব্যবহার করা হয়েছে, যা ইঞ্জিনের স্থায়িত্ব বাড়ায়। এটি কিক স্টার্ট/ইলেকট্রিক দুভাবেই চালু করা যায়। বাইকটি থেকে আপনি প্রায় ৬০ কিমি/লিটার এভারেজ মাইলেজ এবং প্রায় ১০০ কিমি/আওয়ার টপ স্পিড পেতে পারেন। বাইকটির বর্তমান অফিশিয়াল দাম - ১৪৬,০০০/= টাকা。
সুবিধা- ভালো মাইলেজ
- ইঞ্জিন পারফরম্যান্স এবং পিকআপ রেস্পন্স ভালো
- বিল্ড কোয়ালিটি খুব ভাল এবং বডি পার্টস লং লাস্টিং সাপোর্ট দিতে পারে
- টায়ার পাতলা, ব্রেক আরো একটু ভালো হতে পারতো
- সর্বোচ্চ গতিতে বাইক ব্যালেন্স করতে সমস্যা হয়
PEGASUS ZEUS 150
বাইকটিতে ১৫০ সিসির ৪-স্ট্রোক, সিঙ্গেল সিলিন্ডার, এয়ার কুলড ইঞ্জিন ব্যবহার করেছে। বাইকটিতে ১৭-লিটার ক্ষমতার একটি ফুয়েল ট্যাঙ্ক লাগানো হয়েছে, এই সুবিধা-টি বাইকারদের অনেক বেশি আকর্ষিত করেছে এই বাইকের প্রতি। এটির ট্রান্সমিশন সিস্টেম ম্যানুয়াল, এখানে ওয়েট ক্লাচ সহ ৫-স্পিড গিয়ার ব্যবহার করা হয়েছে। এটি কিক ও ইলেক্ট্রিক উভয় মেথডে স্টার্ট করা যায়। বাইকটি থেকে আপনি প্রায় ৪০ কিমি/লিটার এভারেজ মাইলেজ এবং প্রায় ১১০ কিমি/আওয়ার টপ স্পিড পেতে পারেন। বাইকটির বর্তমান অফিশিয়াল দাম - ১২০,০০০/= টাকা。
সুবিধা- মাইলেজ খুবই ভালো
- ইজি কন্ট্রোলিং
- ফ্রন্ট ও রিয়ার সাসপেনশন
- ফুয়েল ক্যাপাসিটি
- ড্রাম ব্রেক
- অ্যানালগ ইলেক্ট্রিক ফিচার
বাংলাদেশের রাস্তাঘাটের যানজটের পরিস্থিতি এবং গণপরিবহনের বাজে অবস্থার প্রেক্ষিতে দ্রুত যোগাযোগের জন্য এই ধরণের বাইকগুলো বেশ কার্যকর।

































