বাংলাদেশে কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে নিরাপদে গাড়ি চালানোঃ করণীয় এবং বর্জনীয়

বাংলাদেশে শীতের শুরুতে ভোরবেলার ঘন কুয়াশা খুব সাধারণ ঘটনা। এতে মহাসড়ক, গ্রামীণ সড়ক ও শহরের রাস্তাগুলো ঢেকে যায়, যা চালকদের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি করে। প্রতি বছর ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-চট্টগ্রাম, পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়ক এবং উত্তরাঞ্চলীয় জেলাগুলিতে অনেক দুর্ঘটনা ঘটে, যেখানে সকাল পর্যন্ত কুয়াশা ঘন থাকে। কুয়াশা দূরত্ব পরিমাপ প্রতিক্রিয়া জটিল করে তোলে। রাস্তাগুলো ভেজা থাকায় পিছলে যাওয়া বৃদ্ধি পায় এবং গাড়িচালকরা প্রায়শই বুঝতে পারেন না যে আবহাওয়া কতটা বিপজ্জনক। শীতের সকালে যখন কুয়াশাচ্ছন্ন থাকে, তখন নিরাপদে গাড়ি চালানোর সুবিধার্থে আপনার কী করা উচিত বা কী করা উচিত তা সহ এই সড়ক নিরাপত্তা টিপসগুলো অনুসরণ করা উচিত।
বাংলাদেশে কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে-শীতের সকালে নিরাপদে গাড়ি চালানোর জন্য করণীয়
১. সর্বদা লো-বিম হেডলাইট এর ব্যবহার
কুয়াশাচ্ছন্ন রাস্তায় দৃশ্যমানতা খুব কম হয়ে যায়। লো-বিম হেডলাইটগুলো উচ্চ-বিম হেডলাইটের মতো ঝলমলে আলো তৈরি করে না। এগুলোই আপনার গাড়িকে আগত গাড়ি, মানুষ এবং সাইকেলের কাছে দৃশ্যমান করে তোলে। তাই সবসময় লো-বিম হেডলাইট ব্যবহার করুন।
২. ফগ লাইট এর ব্যবহার
ফগ লাইটগুলোও কম কোণে ঘন কুয়াশা ভেদ করার লক্ষ্যে ডিজাইন করা হয়েছে। বেশিরভাগ যানবাহনে হলুদ বা সাদা ফগ ল্যাম্প থাকে, যা সাধারণ আলোর তুলনায় কুয়াশার স্তর ভেদ করার ক্ষমতা রাখে। এর সাহায্যে, রাস্তার পাশ, লেন এবং সম্ভাব্য বাধাগুলো দেখা অনেক সহজ হয়।
৩. গাড়ির গতি কমিয়ে গাড়ির মধ্যে দূরত্ব বেশি রাখা
বাংলাদেশে, কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের সকালে হাইওয়েতে প্রায়শই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে কারণ দৃশ্যমানতা কম থাকা সত্ত্বেও চালকরা তাদের স্বাভাবিক গতি বজায় রাখেন। বাংলাদেশে নিরাপদে গাড়ি চালানোর জন্য, স্বাভাবিক গতির ৩০%-৪০% গতি কমিয়ে গাড়ি চালালে দুর্ঘটনারোধ করা সম্ভব।
৪. রোড-সাইন ব্যবহার
যদি দৃশ্যমানতা ৫০ মিটারের কম হয়, তাহলে দিক সোজা রাখতে রাস্তার লেনে বা বাম পাশের চিহ্নগুলো ব্যবহার করা উচিত।
৫. ওয়াইপার এবং ডিফগার দিয়ে উইন্ডশিল্ড মুছে নেওয়া
বাতাসে প্রচুর আর্দ্রতার কণা থাকে যা আপনার উইন্ডশিল্ডে আটকে থাকে। তাই কম গতিতে ওয়াইপার এবং সামনের এবং পিছনের ডিফগার ব্যবহার করা উচিত এবং গাড়ির ভিতরে আর্দ্রতা কমাতে কম এসি চালু করা যেতে পারে। বাংলাদেশে নিরাপদে গাড়ি চালানোর জন্য বেশিরভাগ হাইওয়েতে পরিষ্কার উইন্ডশিল্ড প্রয়োজন।
৬. ভালো দৃশ্যমানতার জন্য জানালা সামান্য খোলা রাখুন
জানালা কিছুটা খোলা রাখলে বাতাস চলাচল করতে পারে এবং গাড়ির আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এর ফলে গাড়ির ভেতরের অংশে কুয়াশা দূর হয়। এই কাজটি আশেপাশের শব্দ, আসন্ন যানবাহন, হর্ন বা সাইরেন শুনতেও সাহায্য করে।
৭. অতিরিক্ত সতর্ক থাকা এবং প্রয়োজনমতো হর্ন বাজানো
কখনও কখনও কুয়াশার কারণে শব্দ শোনা যায় না। চৌরাস্তা, বাঁক, সেতু বা ক্রসরোড অতিক্রম করার সময় সর্বদা হালকাভাবে হর্ন বাজানো উচিত। এটি পথচারী, রিকশা এবং মোটরবাইক যারা আপনার আগমন সম্পর্কে অবগত নয়; তাদের সতর্ক করে।
৮. আগে থেকে পরিকল্পনা করা এবং ধীরে গাড়ি চালানো
কুয়াশায় গাড়ি চালানো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। আপনার ভ্রমণ পরিকল্পনা আগে থেকেই করে নিন, বিশেষ করে যখন আপনি গাজীপুর, টাঙ্গাইল, কুমিল্লা, সিলেট, অথবা উত্তরাঞ্চলের এমন কিছু জায়গা দিয়ে যাচ্ছেন যেখানে সাধারণত সকাল পর্যন্ত ঘন কুয়াশা থাকে। ধীরগতিতে এবং ধীরে ধীরে গাড়ি চালানো জীবন বাঁচায়।
কুয়াশায় নিরাপদে গাড়ি চালানোর জন্য বর্জনীয়
১. হাই-বিম লাইট ব্যবহার করা
কুয়াশার কণাগুলো হাই-বিম থেকে লাফিয়ে যায় যার ফলে আপনার গাড়ির সামনে সাদা দেয়াল তৈরি হয়। এটি দৃশ্যমানতা আরও কমিয়ে দেয়। কুয়াশা থাকলে সর্বদা লো-বিম ব্যবহার করা উচিত।
২. কুয়াশা পরিষ্কার হতে দেখা গেলে গতি না বাড়ানো
কখনও কখনও কুয়াশা পরিষ্কার হয় এবং আবার ঘন হয়ে যায়। শীতের সকালে মহাসড়কে দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারণও এটি। তাই সবকিছু পরিষ্কার দেখালেও গাড়ির গতি বেশি বাড়ানো উচিত না।
৩. হঠাৎ ব্রেক না করা
কুয়াশাচ্ছন্ন রাস্তার মাঝখানে গাড়ি থামানো অত্যন্ত বিপজ্জনক কারণ পিছনে আসা যানবাহনগুলো আপনার গাড়ি লক্ষ্য নাও করতে পারে। হ্যাজার্ড লাইট ব্যবহার করুন এবং নিরাপদ স্থানে গাড়ি থামান।
৪. ওভারটেক না করা
একান্ত প্রয়োজন না হলে তাড়াহুড়ো করা উচিত না। কুয়াশাচ্ছন্ন অবস্থায় গাড়ি চালানো ঝুঁকিপূর্ণ কারণ সামনের গাড়ির দূরত্ব এবং গতি নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। স্পষ্ট ভিসিবিলিটি এবং পর্যাপ্ত রাস্তা থাকতে হবে।
৫. চলাচলের সময় হ্যাজার্ড লাইট না জ্বালানো
চলমান অবস্থায় হ্যাজার্ড লাইট বন্ধ রাখুন। গাড়ি চালানোর সময় হ্যাজার্ড লাইট অন্যান্য চালকদের বিভ্রান্ত করে।
শীতের কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে বাংলাদেশের সকল চালকের মধ্যে অনেক সতর্কতা, শৃঙ্খলা এবং দায়িত্বশীলতার প্রয়োজন। করণীয় এবং বর্জনীয় পদক্ষেপের মাধ্যমে, চালকরা নিরাপদে গাড়ি চালাতে, তাদের যাত্রীদের সুরক্ষিত করতে এবং যেকোনো কুয়াশাচ্ছন্ন রাস্তায় সংঘর্ষ এড়াতে পারেন। এই হাইওয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থাগুলো মহাসড়কগুলোকে নিরাপদ করতে, আরও সহজে ভ্রমণ করতে এবং সারা দেশে সড়কে গাড়ি চালানোর সংস্কৃতিকে আরও দায়িত্বশীল করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। বাংলাদেশে নিরাপদ ড্রাইভিং সকল মানুষের জন্য, চালক এবং পথচারী উভয়ের জন্যই ভালো, সেইসাথে সমাজের জন্যও।
সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
১. কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের সকালে গাড়ি চালানো কেন ঝুঁকিপূর্ণ?
ঘন কুয়াশায় দৃশ্যমানতা কমে যায়, রাস্তা পিচ্ছিল হয় এবং দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এজন্য মহাসড়কে দুর্ঘটনা বাড়ে।
২. কুয়াশায় হাই-বিম নাকি লো-বিম লাইট ব্যবহার করতে হবে?
সবসময় লো-বিম হেডলাইট ব্যবহার করতে হবে। হাই-বিম কুয়াশায় প্রতিফলিত হয়ে সামনে সাদা দেয়ালের মতো অন্ধকার তৈরি করে।
৩. ঘন কুয়াশায় নিরাপদ গতিবেগ কত হওয়া উচিত?
স্বাভাবিক গতির ৩০%-৪০% কমাতে হবে এবং সামনে থাকা গাড়ি থেকে ৪-৫ সেকেন্ড দূরত্ব রাখতে হবে।
৪. কুয়াশায় গাড়ি চলন্ত অবস্থায় হ্যাজার্ড লাইট চালানো কি ঠিক?
না। গাড়ি চলমান থাকলে হ্যাজার্ড লাইট জ্বালানো ভুল অভ্যাস। এটি অন্য ড্রাইভারকে বিভ্রান্ত করে। শুধু থেমে গেলে হ্যাজার্ড লাইট ব্যবহার করুন।
৫. কিছুক্ষণের জন্য কুয়াশা কমে গেলে কি গতি বাড়ানো যাবে?
না। কুয়াশা হঠাৎ ঘন হয়ে যেতে পারে। এই কারণে মহাসড়কে বড় দুর্ঘটনা হয়। গতি কম ও নিয়ন্ত্রিত রাখাই নিরাপদ।







































