বজ্রপাতের সময় নিরাপদে বাইক চালানোর পরামর্শ
বজ্রপাতের সময় মোটরসাইকেল চালানো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। মনে করুন আপনি বাইক রাইডিং-এ বের হয়েছেন, হঠাৎ প্রচন্ড বৃষ্টি, সাথে সাথেই আওয়াজ পাচ্ছেন ভারী বজ্রপাতের। খুব টেনশনে পড়ে গেলেন তাই না? আতঙ্ক হওয়া যাবেনা। জেনে নিন বজ্রপাতের সময় নিরাপদে বাইক চালানোর কিছু টিপস-গুলো, এতে আশা করি আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন কোন পদক্ষেপটি আপনার জন্য সঠিক হবে।
ঝড়-বৃষ্টির দিন আসছে। এর সঙ্গে আসছে এক অসীম শক্তির বিভীষিকা- বজ্রপাত। বাংলাদেশে বজ্রপাত ও এর আঘাতে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে চলেছে আশঙ্কাজনক হারে। এক পরিসংখ্যানে বলা হয়, ২০১১ সাল থেকে এ পর্যন্ত মৃত্যু সংখ্যা ১২৬৩ ছাড়িয়েছে।বাংলাদেশ রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের এক জরিপে দেখা যায়, ২০২২ সালের ২৫ এপ্রিল থেকে ৮ মে পর্যন্ত ঈদুল ফিতরের সময় ঈদযাত্রার আগে ও পরে ১৪ দিনে দেশে ২৮৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৭৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে দেড় হাজার। এর মধ্যে ১২৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৫৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। মোট দুর্ঘটনার হিসাবে ৪৫ দশমিক ২২ শতাংশ দুর্ঘটনাই মোটরসাইকেলের। আর মোট মৃত্যুর ৪১ দশমিক ৪৮ শতাংশ ঘটেছে এই দুই চাকার বাহনের দুর্ঘটনায়।বাইকের সেইফটি ও নিশ্চিত করতে বজ্রপাতের সময় মোটরসাইকেল চালানো-র ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। বজ্রপাতের সময় নিরাপদে বাইক চালানোর কিছু টিপস গুলো জেনে নিলে আপনি ক্ষতির হাত থেকে নিজেকে এবং নিজের বাইককে সেইফ রাখতে পারবেন ইনশাআল্লাহ্।
বজ্রপাতের সময় নিরাপদে বাইক চালানোর কিছু টিপস
১। রাইডিং শুরু করার আগে আবহাওয়ার তথ্য জেনে নিন
আমাদের মধ্যে অনেকেই এই ভুলটি করে থাকি যে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় মৌসুমের আপডেট, রাস্তার পরিস্থিতি ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে না জেনেই রাইডিং-এ বের হয়ে যাই। এটি উচিৎ নয়। আবহাওয়ার আপডেট জেনে নিবেন, যাতে আপনার আগাম একটা প্রস্তুতি থাকে এবং প্রয়োজনীয় জিনিস সাথে রাখতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনি মোবাইলে একটি অ্যাপ ডাউনলোড করে রাখতে পারেন এবং যাত্রার মাঝখানে, আপনি আবহাওয়া চেক করতে পারবেন ও ঝড়ের সম্ভাবনা আছে কিনা সে বিষয় সম্পর্কে অবগত থাকতে পারবেন। এতে করে বাইকের সেইফটির পাশাপাশি রাইডারের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে পারবেন। বৃষ্টির কবলে পড়ে গেলে কীভাবে নিজেকে সেইফ করবেন সেজন্য পড়ে নিতে পারেন BikesGuide-এর এই Advice Blog-টি।
২। একটি নিরাপদ পার্কিং স্পট খুঁজুন
বজ্রপাত শুরু হয়ে গেলো, আপনি তখনও হয়তো গন্তব্যস্থলে পৌছাতে পারেন নি। বজ্রপাতের সময় মোটরসাইকেল চালানো ও বৃষ্টিতে মোটরসাইকেল চালানোর নিয়ম-এর ক্ষেত্রে আপনার প্রথম কাজ হবে একটি নিরাপদ জায়গা খুঁজে বের করার চেষ্টা করা যেখানে আপনি আপনার বাইক পার্ক করতে পারবেন। কোনো কোভারড বা ঢাকা জায়গা পেলে খুবই ভালো। এতে আপনি ও আপনার বাইক, ক্ষতির হাত থেকে সাইফ রাখতে পারবেন।
৩। ফাঁকা জায়গায় অবস্থান থেকে বিরত থাকুন
বজ্রপাতের সময় মোটরসাইকেল চালানো-র আরেকটি সতর্কতা হলো ফাঁকা জায়গায় অবস্থান না করা। বজ্রপাতের সময় আপনি যদি শহরের মধ্যে দিয়ে বাইক চালাতে থাকেন, তখন দেখা যায়, স্বাভাবিকভাবেই উঁচু ভবন এবং পয়েন্টগুলি আপনার থেকে বেশি উচ্চতায় থাকে, তবে বজ্রপাত উঁচু ভবনগুলোতে পড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। কিন্তু অন্য দিকে, আপনি যদি পাহাড়ের উপর থাকেন, তখন আপনিই আকাশের সংস্পর্শে, যেখানে আপনি চারপাশের সবচেয়ে লম্বা জিনিস, যে বিষয়টি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এই পরিস্থিতিতে, সবচেয়ে নিরাপদ হবে, বাইক থেকে নেমে সম্ভাব্য নিম্ন এলাকা খুঁজে বের করা এবং সেখানে আশ্রয় নেওয়া।
৪। হ্যাজার্ড লাইট/ইমারজ্যান্সি লাইট জ্বালিয়ে রাখুন
বজ্রপাতের সময় নিরাপদে বাইক চালানোর কিছু টিপস গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো হ্যাজার্ড লাইটের ব্যবহার। বজ্রঝড়ের সময় বাতাসে উচ্চ মাত্রার ধুলো উড়ে যাওয়ার কারণে দৃশ্যমানতা কমে যায়। ভারী বৃষ্টিও আমরা স্পষ্ট দেখতে পাইনা। বৃষ্টিতে মোটরসাইকেল চালানোর নিয়ম অনুযায়ী আপনি যদি আপনার বাইকটি রাস্তার পাশে কোথাও পার্কিং করেন তবে হ্যাজার্ড লাইট জ্বালিয়ে পার্ক করুন। এটি অন্যান্য চালকদের আপনার বাইকের অবস্থান দেখতে এবং দুর্ঘটনা এড়াতে সাহায্য করবে। এছাড়াও সাহায্যের চাওয়ার জন্যও এই লাইট ব্যবহার করতে পারেন।
৫। ইঞ্জিন বন্ধ রাখুন
আপনি জানেন না কতোক্ষণ বজ্রপাত চলতে থাকবে। তাই ইঞ্জিন চালু রেখে জ্বালিয়ে লাভ নেই। বজ্রপাতের সময় মোটরসাইকেল চালানো থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি আপনার বাইক রাস্তার ধারে পার্ক করে ইঞ্জিনটিও বন্ধ রাখুন।
৬। গাছের পাশে পার্কিং এড়িয়ে চলুন
রাইডারের নিরাপত্তা ও বাইকের সেফটি বিবেচনা করলে বজ্রপাতের সময় নিরাপদে বাইক চালানোর কিছু টিপস-এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ টিপসটি হলো, গাছ, ইউটিলিটি টাওয়ার বা ইলেকট্রিক সংযোগ আছে এমন বস্তুর পাশে পার্কিং এড়িয়ে চলুন, কারণ এসব স্থান বজ্রপাতকে আকর্ষণ করে এবং বজ্রপাত আঘাত হানলে বাইকের উপরও পড়তে পারে। প্রবল ঝোড়ো হাওয়ার কারণে বজ্রপাতের সময় অনেক গাছ বা বিদ্যুতের খুঁটি পড়ে যায়। এ ধরনের ঘটনায় প্রায়ই যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে, গাছ বা বিদ্যুতের খুঁটি থেকে দূরে আপনার বাইক পার্ক করার চেষ্টা করুন।
৭। নিচু এলাকা এড়িয়ে চলুন
বজ্রপাতের সময়, ভারী বর্ষণের ক্ষেত্রে, নিচু এলাকা প্লাবিত হতে পারে। বৃষ্টিতে মোটরসাইকেল চালানোর নিয়ম-পড়ে বলা যায়, এই ধরনের প্লাবিত একটি এলাকায় পার্কিং করা থেকে বিরত থাকা উত্তম। সর্বদা বন্যা প্রবণ এই ধরনের নিচু এলাকা এড়াতে চেষ্টা করুন। এছাড়াও, খাড়া ঢালের গোড়ায়ও আপনার বাইক পার্কিং করবেন না।
৮। ব্রেক ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করুন
বজ্রপাতের সময় মোটরসাইকেল চালানো-র ক্ষেত্রে আপনি যথেষ্ট সতর্ক থাকার পরেও মাঝে মাঝে দেখবেন সিস্টেম সঠিকভাবে কাজ করছে না। এছাড়াও রাস্তা যেহেতু পিচ্ছিল হয়ে থাকবে, ব্রেক চাপ দেওয়ার সময় সতর্ক থাকবেন। বৃষ্টিতে মোটরসাইকেল চালানোর নিয়ম-এর মধ্যে একটা হলো এভারেজ ব্রেকিং ব্যবহার করা।
৯। রাস্তায় মনোযোগ দিন
ভারী বৃষ্টি কিংবা বজ্রপাতের সময় রাস্তার দিকে মনোযোগ দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাস্তা পিচ্ছিল হতে পারে, বাতাস সরাসরি আপনার মুখে আসতে পারে এবং আপনি সম্পূর্ণ ভিজে যাবেন, ব্জ্রপাতের আলোর কারণে রাস্তা দেখতে সমস্যা হতে পারে। এক্ষেত্রে আপনার বাইকে ব্রেকগুলি কাজ করছে তা নিশ্চিত করুন এবং রাস্তা ভেজা না থাকলে স্বাভাবিকের তুলনায় একটু আগে ব্রেক করুন। ধীরে ধীরে বাইক চালান এবং আপনার চারপাশের সবকিছু সম্পর্কে সচেতন হন।
১০। পুকুর, নদ-নদী থেকে দূরে থাকুন
বজ্রপাতের সময় পুকুর বা জলাধারের থেকে সবসময় নিরাপদ দুরুত্ব বজাত রাখুন। ধারণা করা হয়, বজ্রপাত খোলা অংশেই বেশি পড়ে, বিশেষত পুকুর, নদ-নদী।
পরিশেষে
আপনি যদি কাউকে সাথে নিয়ে বাইক চালান অথবা গ্রুপ রাইডিং-এ বের হন এবং বজ্রপাতের আশঙ্কা আছে বলে মনে করেন, তবে নিশ্চিত করুন যে আপনি একে অপরের থেকে আলাদা হয়ে বসেছেন বা নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখেছেন। কারণ এক্ষেত্রে বজ্রপাত হলে একজনকে অন্যরা সাহায্য করতে পারবেন।সর্বশেষ, বজ্রপাতের সময় মোটরসাইকেল চালানো-র আগে নিজেকে আপডেট করে রাখার সাথে সাথে নিরাপদে বাইক চালানোর জন্য উপযুক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা গুরুত্বপূর্ণ। রাইডারের নিজের নিরাপত্তা-র পাশাপাশি বাইকের সেইফটি নিশ্চিত করুন, সুন্দর রাইড উপভোগ করুন।



































