ট্রাফিক চিহ্নের ধরন, ট্রাফিক চিহ্নের গুরুত্ব, ট্র্যাফিক লাইটের কাজ।

Humyra Sharmind Alam
time
5 মিনিটে পড়া যাবে

বর্তমানে আমাদের দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় অনেক মানুষের প্রাণ যায়। এসব দূর্ঘটনা বেশিরভাগই ঘটে রাস্তায় গাড়ি চালানোর সময় ট্রাফিক সাইন বা সিগন্যাল সঠিকভাবে না মানার কারণে। অনেকে ট্রাফিক সাইন বুঝে তবুও কোনো পরোয়া না করে গাড়ি চালায়। যার ফলশ্রুতিতে তাদের দূর্ঘটনার শিকার হতে হয়।

এজন্য নিরাপদে রাস্তায় চলাফেরা ও গাড়ি চালানোর জন্য আমাদের অবশ্যই সঠিকভাবে ট্রাফিক সাইন ও সিগনাল সম্পর্কে জানতে হবে।

ট্রাফিক সাইন:

ট্রাফিক সাইন হলো এমন কিছু চিহ্ন বা সংকেত যা গাড়ি চালানোর সময় ও রাস্তা পারাপারের সময় আপনাকে তথ্য সরবরাহ করে ও সম্ভাব্য বিপদ থেকে রক্ষা করে। এটিকে রোড সাইন ও বলা হয়ে থাকে।

রাস্তায় পথচারী ও গাড়িচালকদের নিরাপত্তার জন্য এটি তৈরি করা হয়।

সঠিকভাবে এই ট্রাফিক সাইন মেনে রাস্তায় চলাফেরা করলে দূর্ঘটনার সংখ্যা অনেকাংশে কমে আসবে।

অনেক প্রাচীনকাল থেকেই ট্রাফিক সাইন মানুষ ব্যবহার করে আসছে। প্রাচীন রোমানরা তখন পথচারীদের পথের দিকনির্দেশনা প্রদান করার জন্য পাথরে খোদাই করা ট্রাফিক সাইন ব্যবহার করতো।

পরবর্তীতে সাইকেল আবিষ্কার হওয়ার পর ট্রাফিক সাইন বর্তমান রূপ নেয়া শুরু করে।

যারা সাইকেল চালায় তাদেরকে সামনে থাকা কোনো বিপজ্জনক বস্তু সম্পর্কে বা রাস্তার বাঁক সম্পর্কে জানাতে এই ট্রাফিক সাইন গুলো ব্যবহার করা হতো।

ধীরে ধীরে এটি গাড়িচালকদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হয়। নিরাপদে যেন গাড়ি চালানো যায় সেই উদ্দেশ্যেই এগুলো তৈরি করা হয়।

ট্রাফিক সাইনের প্রকারভেদ:

ট্রাফিক সাইন মূলত দুই ধরনের হয়ে থাকে। একটি হলো দৃশ্যমান সাইন এবং অন্যটি হলো অদৃশ্যমান সাইন।

দৃশ্যমান ট্রাফিক সাইন: যেসব ট্রাফিক সাইন আমরা সরাসরি চোখে দেখি সেটাকেই দৃশ্যমান ট্রাফিক সাইন বলে। যেমন: ট্রাফিক লাইট, ট্রাফিক পুলিশের সংকেত, বিভিন্ন ব্যানারে থাকা সতর্কীকরণ চিহ্ন ইত্যাদি।

অদৃশ্যমান ট্রাফিক সাইন: এ ধরনের ট্রাফিক সাইন দেখা যায় না। শব্দের মাধ্যমে এটিকে প্রকাশ করা হয়। এজন্য এটিকে শব্দ সংকেতও বলা হয়। যেমন: ট্রাফিক পুলিশের বাঁশির সংকেত, মোটরগাড়ির হর্নের শব্দ ইত্যাদি।

দৃশ্যমান ট্রাফিক সাইনের প্রকারভেদ:

বাংলাদেশে পাঁচ ধরনের দৃশ্যমান ট্রাফিক সাইন দেখা যায়। সেগুলো হলো:

  1. বাধ্যতামূলক ইতিবাচক ট্রাফিক সাইন
  2. বাধ্যতামূলক নেতিবাচক ট্রাফিক সাইন
  3. সতর্কতামূলক ট্রাফিক সাইন
  4. তথ্যমূলক ট্রাফিক সাইন
  5. বিশেষ সতর্কীকরণ ট্রাফিক সাইন

১. বাধ্যতামূলক ইতিবাচক ট্রাফিক সাইন:

এ ধরনের ট্রাফিক সাইন সাধারণ পথচারীদের ইতিবাচক নির্দেশনা প্রদান করার জন্য ব্যবহার করা হয়।

যেমন: "সামনের দিকে চলুন", "বাম ঘেঁষে চলুন", "সামনে বামে মোড়", "গোল চত্বর-এখানে ঘুরতে হবে" ইত্যাদি।

এ ধরনের ট্রাফিক সাইন সাধারণত নীল রঙের ও বৃত্তাকার হয়ে থাকে। তবে কখনো কখনো এটি বর্গাকার বা আয়তাকার হয়ে থাকে।

২. বাধ্যতামূলক নেতিবাচক ট্রাফিক সাইন:

যেসব ট্রাফিক সাইন দ্বারা পথচারী বা গাড়ি চালকদের কোনো কিছু করতে বাধা প্রদান করা হয় তাকে বাধ্যতামূলক নেতিবাচক ট্রাফিক সাইন বলে।

যেমন: "পার্কিং নিষেধ", "প্রবেশ নিষেধ", "ডানে মোড় নিষেধ", "বামে মোড় নিষেধ" ইত্যাদি।

এ ধরনের ট্রাফিক সাইন মূলত লাল রঙের ও বৃত্তাকার হয়ে থাকে। অনেক সময় এটি বর্গাকার বা আয়তাকার ও থাকতে পারে।

৩. সতর্কতামূলক ট্রাফিক সাইন:

পথচারী বা গাড়ি চালকদের রাস্তার সামনে থাকা কোনো সমস্যা বা সতর্কতামূলক কথা জানানোর জন্য যে ট্রাফিক সাইন ব্যবহার করা হয় তাকে সতর্কতামূলক ট্রাফিক সাইন বলে।

একে Warning Sign ও বলা হয়।

উদাহরণস্বরূপ: "ডানে বাঁক", "বামে বাঁক", "পথচারী পারাপার" ইত্যাদি।

এসব ট্রাফিক সাইন সাধারণত লাল রঙের ত্রিভুজ আকৃতির হয়ে থাকে।

৪. তথ্যমূলক ট্রাফিক সাইন:

এ ধরনের ট্রাফিক সাইন খুব বেশি জরুরী না হলেও পথচারী ও গাড়িচালকদের কোনো নির্দিষ্ট স্থান সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য দেয়ার জন্য এগুলো ব্যবহার করা হয়।

এধরনের সাইনগুলোতে কোনো স্থানের নাম ও যাওয়ার দিকনির্দেশনা দেয়া থাকে।

আমাদের দেশে তথ্যমূলক ট্রাফিক সাইন সাধারণত নীল অথবা সবুজ রঙের আয়তাকার হয়ে থাকে।

৫. বিশেষ সতর্কীকরণ ট্রাফিক সাইন:

এই ধরনের ট্রাফিক সাইনগুলো সবসময় ও সবজায়গায় ব্যবহার করা হয় না। বিশেষ কিছু জায়গায় ও নির্দিষ্ট সময়ে এধরনের সাইনগুলো ব্যবহার করতে হয়।

উদাহরণ: "আচমকা বামে মোড়", "সাময়িক বিকল্প সড়কের নির্দেশনা", "রাস্তা বন্ধ" ইত্যাদি।

ট্রাফিক লাইট:

দৃশ্যমান ট্রাফিক সাইনগুলোর মধ্যে আমাদের কাছে সবচেয়ে বেশি পরিচিত হলো ট্রাফিক লাইট। ট্রাফিক লাইট দুই ধরনের হয়ে থাকে।

একটি হলো গাড়ি চালকদের জন্য এবং আরেকটি হলো পথচারীদের জন্য।

গাড়ি চালকদের জন্য ট্রাফিক লাইটে তিনটি রঙের বাতি ব্যবহার করা হয়: লাল, সবুজ ও হলুদ।

  • লাল রং: গাড়ি চালানোতে নিষেধাজ্ঞা নির্দেশ করে।
  • সবুজ রং: গাড়ি চালানোর অনুমতি নির্দেশ করে।
  • হলুদ রং: গাড়ি চালানো থামাতে বা শীঘ্রই অনুমতি দেয়ার ইঙ্গিত দেয়।

পথচারীদের ট্রাফিক লাইটে মাত্র দুটি আলোর সংকেত ব্যবহার করা হয়: লাল ও সবুজ।

লাল রঙ মানে থামা, সবুজ রঙ মানে হাঁটা।

অদৃশ্যমান ট্রাফিক সাইন:

অদৃশ্যমান ট্রাফিক সাইন বা শব্দ সংকেত এর মূলত কোনো প্রকারভেদ নেই। শব্দের মাধ্যমে ট্রাফিকের বিভিন্ন নির্দেশনা দেয়া হলেই তাকে অদৃশ্যমান ট্রাফিক সাইন বলা যায়।

যেমন: পথচারী রাস্তায় পার হওয়ার সময় গাড়ির হর্ন বাজানো, ট্রাফিক পুলিশের বাঁশির শব্দ ইত্যাদি।

রাস্তায় নিরাপদে চলাচলে ট্রাফিক সাইন এর গুরুত্ব:

১. সমস্ত ড্রাইভারদের জন্য সামঞ্জস্যপূর্ণ নিয়ম প্রদান করে:

দেশজুড়ে একই ধরনের ট্রাফিক সাইন ব্যবহারের ফলে সবাই সহজে বুঝতে পারে। এজন্য ট্রাফিক সাইনগুলো প্রধানত চিত্রের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়।

২. গাড়িচালক ও পথচারীদের নিরাপদ রাখে:

ট্রাফিক সাইন ছাড়া রাস্তাঘাট খুব বিপজ্জনক হতো। এগুলো দুর্ঘটনা প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

৩. পথচারী ও সাইকেল চালকদের নিরাপত্তা দেয়:

কোন রাস্তা পার হওয়া নিরাপদ, কোথায় থামতে হবে এসব জানার সুযোগ দেয়।

৪. অতিরিক্ত ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করে:

চৌরাস্তা, গোলচত্বর ইত্যাদির নির্দেশনা দিয়ে জ্যাম ও বিশৃঙ্খলা কমায়।

৫. গন্তব্যে পৌঁছাতে সাহায্য করে:

রাস্তার নাম, মোড়, দিকনির্দেশনা দিয়ে যাত্রা সহজ করে।

৬. নতুন গাড়িচালকদের দিকনির্দেশনা দেয়:

ট্রাফিক সাইন নতুন চালকদের জন্য বিশেষভাবে সহায়ক।

৭. সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে সাহায্য করে:

নিয়ম মেনে চললে দুর্ঘটনার হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে।

শেষ কথা:

নিরাপদ সড়কে চলাচল করার জন্য ট্রাফিক সাইন মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই। সেই সাথে ট্রাফিক আইন সম্পর্কেও সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।

Meta Description: ট্র্যাফিক সাইনের আদ্যোপান্ত, ট্র্যাফিক সাইনের প্রকারভেদ, ট্র্যাফিক সাইনের গুরুত্ব, ট্র্যাফিক লাইটের কাজ।

অনুরূপ খবর

  • Maintenance & Care Tips

    টিউবলেস বনাম টিউব টায়ারঃ কোনটি নির্বাচন করবেন এবং কেন?

    time
    4 মিনিটে পড়া যাবে
  • Maintenance & Care Tips

    Common Bike Electrical Problems and How to Fix Them

    time
    4 মিনিটে পড়া যাবে
  • Maintenance & Care Tips

    ব্যয়বহুল আপগ্রেড ছাড়াই কীভাবে গাড়ির ফুয়েল এফিশিয়েন্সি বাড়াবেন

    time
    3 মিনিটে পড়া যাবে
  • Maintenance & Care Tips

    গাড়ির ইন্টেরিয়র ডিটেইলিং টিপসঃ কেবিন রাখুন ফ্রেশ ও স্ক্র্যাচ-ফ্রি

    time
    3 মিনিটে পড়া যাবে
  • Maintenance & Care Tips

    স্পোর্টস মোটরবাইকের জ্বালানি এফিশিয়েন্সি বাড়ানোর উপায়

    time
    3 মিনিটে পড়া যাবে
  • Maintenance & Care Tips

    মোটরসাইকেল চেইনের যত্নঃ ১০টি ক্লিনিং, লুব্রিকেশন এবং অ্যাডজাস্টমেন্ট টিপস

    time
    4 মিনিটে পড়া যাবে
  • Maintenance & Care Tips

    বাইক তেল বেশি খাচ্ছে এটি বাইকার কিভাবে বুঝতে পারবেন?

    time
    3 মিনিটে পড়া যাবে
  • Maintenance & Care Tips

    মোটরবাইকের জন্য ৫ টি সেরা ইঞ্জিন অয়েল ব্র্যান্ড এর সম্পর্কে আলোচনা

    time
    4 মিনিটে পড়া যাবে
  • Maintenance & Care Tips

    ফিল্টার প্রতিস্থাপন ছাড়াই ইঞ্জিন তেল পরিবর্তন করার উপায়

    time
    3 মিনিটে পড়া যাবে
  • Maintenance & Care Tips

    মোটরসাইকেলের শব্দ কমাতে ৫ টি কার্যকরী টিপস

    time
    4 মিনিটে পড়া যাবে

সর্বশেষ গাড়ির রিভিউ

  • Suzuki Alto K10 2015

    Hatchback

    ৳ 800K - 1.2M

  • Toyota Aqua 2014

    Hatchback

    ৳ 1.5M - 1.6M

  • Suzuki Swift 2017

    Hatchback

    ৳ 1.7M - 2.2M

  • Toyota Vitz 2017

    Hatchback

    ৳ 1.8M - 2.3M

  • Nissan Leaf 2014

    Hatchback

    ৳ 4M - 6M

  • Mitsubishi Montero 2015

    SUV & 4X4

    ৳ 6.5M - 8.6M

  • Suzuki Wagon R 2018

    Hatchback

    ৳ 750K - 1.1M

  • Honda Civic 2019

    Saloon & Sedan

    ৳ 3.5M - 4.5M

  • Land Rover Defender 2020

    SUV & 4X4

    ৳ 14M - 18M

  • Mitsubishi Lancer 2017

    Saloon & Sedan

    ৳ 2.5M - 3M

  • Toyota Axio 2016

    Saloon & Sedan

    ৳ 1.8M - 2.4M

  • Toyota Premio G Superior 2018

    Saloon & Sedan

    ৳ 2.3M - 3M

সর্বশেষ বাইকের রিভিউ

  • Hero Ignitor 125 2020 IBS

    ৳ 115.7K - 128.5K

  • Honda X-Blade 160 ABS

    ৳ 194.9K - 216.5K

  • Honda Livo 110 Drum

    ৳ 107.9K - 119.9K

  • Keeway TXM 150

    ৳ 161.1K - 179K

  • Suzuki Gixxer Monotone

    ৳ 182K - 192K

  • Suzuki Gixxer SF Matt Plus

    ৳ 315K - 350K

  • Yamaha R15 S

    ৳ 409.5K - 455K

  • Hero Hunk 150 R Dual Disc ABS

    ৳ 166.1K - 232K

  • TVS Apache RTR 165 RP

    ৳ 297K - 360K

  • Suzuki Intruder FI ABS

    ৳ 247.5K - 320K

  • Suzuki Bandit 150

    ৳ 288K - 320K

  • KTM RC 125

    ৳ 333K - 566K

hero

Bikroy এ মাত্র ২ মিনিটে আপনার গাড়ি বা মোটরবাইকের বিজ্ঞাপন দিন!