রাতে বাইক চালানোর জন্য নিরাপত্তাঃ ভিজিবিলিটি বাড়ানো ও দুর্ঘটনা এড়িয়ে চলার টিপস

রাতের মোটরসাইকেল রাইড বেশ শান্তির বিষয়। রাস্তা ফাঁকা থাকে, ট্রাফিক কম থাকে আবার বাতাসও ঠান্ডা লাগে। কিন্তু এই ভালো মুহুর্ত উপভোগ করার পাশাপাশি নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাটাও গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই বিষয়টাকে খুব একটা গুরুত্ব দেন না। এখান থেকেই ঝামেলা শুরু হয়। আপনি নিশ্চয়ই তাদের মতো হতে চান না, তাই না? দুশ্চিন্তার কিছু নেই। এই লেখাটা লিখছি নিজের দেখা কিছু ঘটনা আর ভুল ধরেই।
কেন রাতের রাইডে বাড়তি সতর্কতা দরকার
রাতে রাইড করার সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো কম ভিজিবিলিটি। রাস্তার গর্ত, ভাঙা অংশ ঠিকভাবে চোখে পড়ে না। একই সঙ্গে কম আলোর কারণে অন্য গাড়ির চালকরাও আপনাকে সহজে দেখতে পান না। আবার অনেক সময় বিপরীত দিক থেকে আসা গাড়ি আপনার চোখকে সাময়িক অন্ধকার করে দেয়। নিজে রাইড করতে গিয়েই এসব ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি চোখে পড়েছে।
নিজেকে যেন দেখা যায়, এটা নিশ্চিত করা দরকার
সবার আগে আপনার বাইকের হেডলাইট ও টেইল লাইট ঠিকভাবে কাজ করছে কি না দেখুন। বাইকের হেডলাইট দুর্বল হলে বা ঠিকভাবে কাজ না করলে সামনে থাকা গর্ত, প্রাণী বা হঠাৎ মোড় ঠিকমতো দেখা যায় না। সত্যি বলতে, এই ভুলটা আমরা প্রায় সবাই কখনো না কখনো করেছি। হেডলাইটে সমস্যা আছে মনে হলে সঙ্গে সঙ্গে লাইট বদলে ফেলুন। টেইল লাইট ও ইন্ডিকেটরও খুব গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো পিছনের গাড়িকে আপনার উপস্থিতি সম্পর্কে জানায় ও টার্ন নেওয়ার ইঙ্গিত দেয়।
আরেক ধাপ এগোতে চাইলে রিফ্লেক্টিভ কাপড় পরতে পারেন বা হেলমেট ও বাইকে রিফ্লেক্টিভ স্টিকার লাগাতে পারেন। শুনতে সাধারণ লাগলেও বাস্তবে এটা বেশ কাজে দেয়। আর রাতে কখনোই কালো বা গাঢ় রঙের জামা বা হেলমেট পরবেন না। দেখতে ভালো লাগলেও এগুলো অন্ধকারে আপনাকে প্রায় অদৃশ্য করে দেয়।
রাতে চালানোর সময় গতি আর স্টাইল একটু বদলান
রাতে গতিবেগ অনেক সময় কম মনে হয়। আসলে এটা চোখের ভুল। কম আলোয় আপনার রিঅ্যাকশন টাইম আগেই কমে যায়। তাই হঠাৎ কিছু সামনে চলে এলে সময়মতো ব্রেক ধরা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। অপরদিকে, একটু আস্তে চালালে পরিস্থিতি বুঝে নেওয়ার জন্য অতিরিক্ত কয়েক সেকেন্ড সময় পাওয়া যায়। আর একটা কথা, হঠাৎ করে লেন বদলানো ঠিক না। নিজের লাইন ধরে চালান এবং অন্য গাড়ির থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখুন। আচমকা মুভমেন্ট অন্য চালকদের বিভ্রান্ত করতে পারে।
রাস্তায় আরও বেশি নজর রাখুন
অনেক সময় আমরা বুঝতেই পারি না সামনে কী আছে। গর্ত, ভাঙা রাস্তা, রাস্তায় পড়ে থাকা তেল - সবই হঠাৎ সামনে চলে আসে। তাই শুধু চাকার সামনে না দেখে একটু আগেই চোখ রাখার অভ্যাস করুন। সামনে কোনো গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলে আগেভাগেই গতি কমান। অনেক রাইডার মনে করেন, রাতের রাস্তায় ভিড় নেই মানেই রাস্তা পুরোপুরি ফাঁকা। কিন্তু বাস্তবে অনেক সময় উল্টো চিত্রটাই দেখা যায়। আর কিছু বুঝে ওঠার আগেই দুর্ঘটনা ঘটে যায়।
চোখের যত্ন নিন এবং মনোযোগ ধরে রাখুন
একটা সহজ নিয়ম বলে দিচ্ছি, শরীর যদি ক্লান্ত থাকে তাহলে রাতে বাইক চালাবেন না। সন্ধ্যার পর ক্লান্তি আমাদের মনোযোগ অনেক বেশি কমিয়ে দেয়।
আর বিপরীত দিক থেকে আসা গাড়ির হাই বিমের দিকে সরাসরি তাকাবেন না। নিজের চোখকে নিরাপদে রাখতে রাস্তার বাম পাশের দিকে একটু তাকিয়ে চালান।
উপসংহার
অনেকে মনে করেন রাতের রাইড মানেই বিপদ, কিন্তু বিষয়টা পুরোপুরি তা না। কিন্তু আমরা নিজেরাই অসতর্ক হলে রাতের রাইডটাই সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়। ভিজিবিলিটি ঠিক থাকলে অনেক ঝামেলা আগেই এড়ানো যায়। গতি নিয়ন্ত্রণে থাকাও জরুরি। আর সবচেয়ে বড় কথা, মনোযোগ হারালে বিপদ বাড়ে। এই ছোট অভ্যাসগুলোই অনেক সময় বড় দুর্ঘটনা এড়াতে সাহায্য করে। এই জন্যই রাতের রাইডে নিজের মনোযোগ ধরে রাখার চেষ্টা করুন, নিজেকে ভিজিবল রাখুন, আর নিরাপদে রাইড করুন।
সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
১. দিনের তুলনায় রাতে বাইক চালানো কি বেশি বিপজ্জনক?
কম ভিজিবিলিটি আর ধীর রিঅ্যাকশন টাইমের কারণে রাতের রাইড একটু ঝুঁকিপূর্ণ হয় - এই ব্যাপারটা মেনে নিতেই হয়।
২. রাতে রাইড করার জন্য কেমন লাইট সবচেয়ে ভালো?
ভালোভাবে সেট করা উজ্জ্বল হেডলাইট রাতের রাইডের জন্য জরুরি। কিন্তু অন্যদের চোখে লাগবে এমন হাই বিম ব্যবহার করা উচিত নয়।
৩. রিফ্লেক্টিভ গিয়ার কি আসলেই কাজে করে?
হ্যাঁ। কম আলোতেও দূর থেকে আপনাকে দেখতে পাওয়া যায়, যা দুর্ঘটনা এড়াতে সাহায্য করে।
৪. রাতে আস্তে বাইক চালানো কেন দরকার?
আস্তে বাইক চালালে হঠাৎ সামনে কিছু এসে পড়লে রিঅ্যাক্ট করার জন্য বেশি সময় পাওয়া যায়। এই কারণেই রাতে আস্তে বাইক চালানো দরকার।
৫. ক্লান্তির কারণে কি রাতের রাইডে দুর্ঘটনা হতে পারে?
অবশ্যই। রাতের রাইডে ক্লান্তি মনোযোগ অনেক কমিয়ে দেয়, তাই বিশ্রাম নিয়ে রাইড করা বেশ জরুরি।







































