বাইক রাইডারদের জন্য চট্টগ্রামে দর্শনীয় ৫ ট্যুরিস্ট স্পট
বাইক রাইডারদের জন্য চট্টগ্রামে দর্শনীয় ৫ ট্যুরিস্ট স্পট
5 মিনিটে পড়া যাবে
5 মিনিটে পড়া যাবে
চলুন জেনে নিই বাইক রাইডারদের জন্য চট্টগ্রামের দর্শনীয় ৫ট্যুরিস্ট স্পট
পাহাড় ও সমুদ্রে ঘেরা চট্টগ্রাম যেন প্রাচ্যের রাণী! প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর চট্টগ্রাম বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। পুরো চট্টগ্রাম বিভাগ জুড়ে তো বটেই চট্টগ্রাম জেলাতেও রয়েছে নানা দর্শনীয় স্থান। বাইকে করেও অনায়াসেই চলে যাওয়া যায় সেসব জায়গায়। জনপ্রিয় স্থানগুলোর মধ্যে আছে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত, ফয়'স লেক, বাটালি হিল, চন্দ্রনাথ পাহাড়, বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত। তাহলে বাইক রাইডারদের জন্য চট্টগ্রাম শহরের এত ৫ টি স্পট সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক:
পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত:
পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত চট্টগ্রাম শহর থেকে ১৪ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত এবং ঢাকা থেকে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের দূরত্ব ২৫৩ কিলোমিটার। বাণিজ্যিকভাবে এই সমুদ্র সৈকতের গুরুত্ব অনেক। ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সমুদ্র সৈকতকে আরও আধুনিক ও বিশ্বমানের গড়ে তুলতে কাজ চলছে। বাইক রাইডাররা ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম -কক্সবাজার মহাসড়ক ধরে সেখানে যেতে পারেন। যাত্রাপথে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। পৌছে যাওয়ার পর বাইক পার্ক করে। সীবিচের সাথে লাগানো হোটেল থেকে খেয়ে নিতে পারেন। অথবা সী বিচের পাশে নানা দোকান থেকে নিজের পছন্দ অনুযায়ী খাবার বেছে নিতে পারেন। গ্রিল করা চিংড়ি থেকে শুরু করে মশলাদার মাছের তরকারি পর্যন্ত যা ইচ্ছা তাই খেতে পারবেন। সমুদ্রের গর্জন আপনার মনে স্থিরতা আনবে। উপভোগ করতে পারবেন সূর্যাস্ত।
ফয়'স লেক:
ফয়'স লেক চট্টগ্রামের একটি জনপ্রিয় বিনোদন স্পট। পাহাড়তলী এলাকায় অবস্থিত। এটি সবুজ পাহাড় দ্বারা বেষ্টিত। সেই সাথে রয়েছে একটি মনোরম হ্রদ। এই হ্রদ বা লেকের নাম ছিল পাহাড়তলী লেক। ইংরেজ রেল প্রকৌশলী ফয়-এর নাম অনুযায়ী এই লেকের নাম হয় ফয়'স লেক। বাইক আরোহীরা শহরের কেন্দ্রস্থল থেকে রাঙ্গামাটি রোড ধরে ফয়'স লেকে পৌঁছাতে পারেন মাত্র ৩০ মিনিটে। ফয়'স লেকে একই সাথে প্রাকৃতিক আর কৃত্রিম পরিবেশের মেলবন্ধন খুঁজে পাবেন। বোট রাইড থেকে শুরু করে নানা রকম রাইড আছে উপভোগের মত। পাশাপাশি নীরব পরিবেশ উপভোগ করারও সুযোগ আছে। দর্শনার্থীদের জন্য হ্রদে নৌকাভ্রমণ, রেস্তোরাঁ, ট্র্যাকিং এবং কনসার্ট এর আয়োজন করার ব্যবস্থা আছে এখানে । বর্তমানে এখানে বিরল প্রজাতির পাখি এবং হরিণ পার্কে হরিণ দেখার ব্যবস্থা আছে। ফয়েজ হ্রদের পাশেই অবস্থিত চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা। এছাড়াও দর্শনার্থীরা কটেজ ভাড়া করে থাকতে পারেন। ফয়েজ হ্রদের আশেপাশের মনোরম পরিবেশ এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আকর্ষণে প্রতি বছর দেশি বিদেশি বহু পর্যটক ছুটে আসেন। ফয়'জ লেকের মধ্যেও খাবারের ব্যবস্থা আছে। আবার যেহেতু এটি শহরের মধ্যে, তাই বের হয়ে শহরের বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট থেকেও খেয়ে নেওয়া যাবে।
বাটালি হিল:
বাটালি হিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের কাছে অবস্থিত। এই পাহাড়টি জিলাপী পাহাড় নামেও পরিচিত। এটি চট্টগ্রাম শহরের সবচেয়ে উঁচু পাহাড়। বাইকারদের জন্য এটি একটি ভাল অভিজ্ঞতা হতে পারে। চট্টগ্রাম শহরের জিরো পয়েন্ট থেকে মাত্র ১ কিলোমিটার দূরত্বে টাইগার পাস এলাকায় বাটালি হিল অবস্থিত।চট্টগ্রাম শহরের লালখান বাজার এলাকার ইস্পাহানী মোড়ের উত্তরে ফাহিম মিউজিকের পাশ ঘেষে উপরে দিকে উঠে গেছে বাটালী হিলের রাস্তা। এ রাস্তা ম্যাজিস্ট্রেট কলোনীর পিছন দিয়ে চলে গেছে। এ পাহাড়ের উচ্চতা ২৮০ ফুট। এর চূড়া থেকে বঙ্গোপসাগর এবং চট্টগ্রাম শহরের বড় অংশ দেখা যায়। পাহাড়ের চুড়াকে বলে শতায়ু অঙ্গন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে বাটালি পাহাড়ের চুড়ায় বিমান বিধ্বংসী কামান স্থাপন করা হয়েছিল। এছাড়া অনেক বছর পূর্বে দূর সমুদ্রে চলাচলকারী জাহাজের দিক নির্দেশনার জন্য বাটালি পাহাড়ের উপর একটি বাতিঘর ছিল বলে জানা যায়। বাটালি হিলে পৌঁছানোর জন্য, রাইডাররা চট্টগ্রাম-কাপ্তাই রোড নিতে পারেন এবং এটি শহরের কেন্দ্র থেকে প্রায় ২০ মিনিটের পথ।
চন্দ্রনাথ পাহাড়:
চন্দ্রনাথ পাহাড় হিন্দুদের জন্য একটি পবিত্র স্থান এবং বাইক রাইডারদের জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থান। এটি চট্টগ্রাম থেকে প্রায় ৩৭ কিলোমিটার দূরে সীতাকুণ্ডে অবস্থিত। রাইডাররা চট্টগ্রাম-সীতাকুণ্ড রোড ধরে পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছানোর রাস্তা অনুসরণ করতে পারে। বাইক দিয়ে চূড়ায় যাওয়া বিপজ্জনক। চট্টগ্রাম এর সীতাকুন্ড বাজার থেকে ৪কি.মি. পূর্বে অবস্থিত একটি পাহাড় দর্শনার্থীদের কাছে ট্রেকিং এর জন্যে অন্যতম জনপ্রিয় একটা রুট। চন্দ্রনাথ পাহাড় এর উচ্চতা আনুমানিক ১০২০ ফুট। চন্দ্রনাথ পাহাড়ে ওঠার জন্যে ২টা রাস্তা আছে। ডানদিকের দিকের রাস্তা প্রায় পুরোটাই সিঁড়ি আর বামদিকের রাস্তাটি পুরোটাই পাহাড়ী পথ, কিছু ভাঙ্গা সিঁড়ি আছে। বাম দিকের পথ দিয়ে উঠা সহজ আর ডানদিকের সিঁড়ির পথ দিয়ে নামা সহজ, তবে আপনি আপনার ইচ্ছা অনুযায়ী পথ ব্যবহার করতে পারবেন।প্রায় ১ ঘণ্টা – ১.৫ ঘণ্টা ট্রেকের পর দেখা মিলবে বিরুপাক্ষ মন্দীরের। প্রতিবছর এই মন্দিরে শিবরাত্রি তথা শিবর্তুদশী তিথিতে বিশেষ পূজা হয়। এই পূজাকে কেন্দ্র করে সীতাকুণ্ডে বিশাল মেলা হয়। এলাকায় বসবাসকারী হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা প্রতি বছর বাংলা ফাল্গুন মাসে বড় ধরনের একটি মেলার আয়োজন করে থাকেন। যেটি শিবর্তুদর্শী মেলা নামে পরিচিত। এই মেলায় বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটান, থাইল্যান্ডসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে অসংখ্য সাধু এবং নারী-পুরুষ যোগদান করেন।বিরূপাক্ষ মন্দির থেকে ১৫০ ফুট দূরেই রয়েছে চন্দ্রনাথ মন্দির যা চন্দ্রনাথ পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত। আগ্রাবাদ সিটিস্কেপ: আগ্রাবাদ হল চট্টগ্রামের বাণিজ্যিক কেন্দ্র, এবং বাইক চালকরা এর ব্যস্ত রাস্তা এবং প্রাণবন্ত বাজার ঘুরে দেখতে পারেন। শহরের রাস্তা দিয়ে শুধু আগ্রাবাদের দিকে নেভিগেট করুন। তাহলেই পৌছে যাবেন আগ্রাবাদ।
বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত :
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক হয়ে চট্টগ্রাম শহর থেকে ২৫ কি.মি উত্তরে বাঁশবাড়িয়া বাজার। এই বাজারের মধ্য দিয়ে সরু পিচ ঢালা পথে মাত্র ১৫ মিনিটে পৌঁছানো যায় বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র উপকুলে। এই সমুদ্র সৈকতের মুল আকর্ষণ হল, প্রায় আধা কিলোমিটারের বেশি আপনি সমুদ্রের ভিতর হেটে যেতে পারবেন। এখানে লোহার ছোট ব্রিজের ব্যবস্থা আছে। বাইক দিয়ে অনায়াসেই বাঁশবাড়িয়াতে যাওয়া যায়। সীতাকুন্ড যাওয়ার রাস্তা দিয়েই যেতে হয় সেখানে। ঢাকা থেকে বাঁশবাড়িয়ার দূরত্ব ২২৫ কিলোমিটার। আর চট্টগ্রাম থেকে ৩৬ কিলোমিটার দূরত্বে বাঁশবাড়িয়া। স্পট না হয় হল! কিন্তু দূরপাল্লার এইসব ভ্রমণে নিতে হয় বিশেষ প্রস্তুতি। করতে হয় পরিকল্পনাও। যাত্রা শুরুর আগে বাইক ভালভাবে চেক করা খুব জরুরি। বাইকের টায়ার, ব্রেক, হেডল্যাম্প, নেভিগেশন, গিয়ার, চেইন, ফুয়েল ইত্যাদি দেখা খুব দরকার। চলার পথে অবশ্যই হেলমেট ব্যবহার করা জরুরী। সেই সাথে যাত্রাপথে ফুয়েল শেষ হলে কোথা থেকে ফুয়েল নেওয়া যাবে এগুলো আগে থেকে জেনে রাখা উচিত। ম্যাপিং এর ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। অযথা ওভারটেকিং করা যাবেনা। রুট সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা থাকতে হবে।